আসলে বলতে চাই, আমি ভুলিনি। হাতের আঁজলায় তিল, কুশ, গঙ্গাজল, মন্ত্র দিয়ে বলতে চাই, এখনও তোমার জন্যে আমার কিছু করার আছে। এখনও। তুমি আগুন পেরিয়ে গেলেও।
এ সবটাই স্পর্ধা। ভীষণ স্পর্ধা। আমি জানি এ অন্ধবিশ্বাস। আমার বলে আঁকড়ে থাকতে চাওয়ার মত অন্ধবিশ্বাস পৃথিবীতে আর কি আছে বলো? যাব বললেই কি যেতে দেওয়া যায়?
তবু চলে গেলে। আমি জেদের সঙ্গে বললাম, কই গেল? সে শুধু আমার ধরা-ছোঁয়া, দেখা-শোনার বাইরে গেল। সে নেই! এতবড় মিথ্যা আমি মানি না! এই তো সে আমার সমস্ত অনুভব জুড়ে। আমার অনুভবকে কি আমি দেখাতে, ছোঁয়াতে পারি? পারি না। সে আমার অদেখা। কিন্তু অধরা হতেই পারে না!
সান্ত্বনা?! সেকি কম বড় কথা! যে মানুষকে একদিন হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানে উদভ্রান্তের মত দেখেছি, তাকেই কয়েক বছর ভোরে গঙ্গার ধারে, বন্ধ চোখ, অনর্গল জলের ধারায় স্নাত হতে দেখেছি। আমি বিশ্বাস করেছি এত আকুল হয়ে কাঁদতে একটা গভীর বিশ্বাস লাগে। শোক মানে বিষাদ নয়। শোক একটা পর্যায়। বিষাদ এক অন্ধকূপ।
সারাটা বছর যা চাপা থাকে। তাকে বাইরে এনে উদযাপন করা লাগে। একদিন বাইরে সবার সামনে দাঁড়িয়ে, সবার সঙ্গে মিলে বলতে হয়, আমিও হারিয়েছি, আমিও কেঁদেছি, আমিও অন্ধকারে রাস্তা হাতড়েছি.... তোমারই মত। আজ আমিও এসেছি। আমার শোকের থেকে তোমার শোক অল্প কিছু নয়। তুমিও আমার পাশে দাঁড়াও। তুমি কাকে হারালে? মা? বাবা? ভাই? বোন? স্ত্রী? স্বামী? সন্তান? বন্ধু?.... থাক উত্তর দিও না। পাশে দাঁড়াও। আমার শোক আজ এই এত এত মানুষের শোকের সঙ্গে মিশে একাকার হল।
একদিন আমিও থাকব না। কিন্তু যতদিন আছি ততদিন যে ক'টা হাতের স্পর্শ পেয়ে ধন্য হয়েছি, সে সব হাতে একটা করে ফুল রেখে যাব, আমার সকৃতজ্ঞ স্মরণের। শিকড়কে যেভাবে স্মরণ করে বৃক্ষের প্রতিটা নতুন সবুজ কিশলয়।