Skip to main content
 
বাবার সারাদিনের জুতো সারানোর কাজ শেষ। রাত আটটা দশ-টশ হবে। প্রচণ্ড শীত। লম্ফটা শীতের বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে, যেন সেও ছুটি চাইছে। বাবা সারাদিনের পয়সাগুলো চটের ভাঁজ থেকে বার করে গুনছে, এগারো-বারো বছরের মেয়েটা, ময়লা ফ্রকের উপর একটা লাল-নীল উলে বোনা বেশ ছোটো হয়ে আসা সোয়েটার পরে ঝুঁকে উপুড় হয়ে প্রায় যেন শুয়ে পড়ে দেখছে। আসলে সেও গুনছে, মনে মনে। বাবার মাঝে মাঝেই ভুল হয় আজকাল। মা বকাবকি করে।
গোনা শেষ হল। মেয়েটা লম্ফটায় জোরে একটা ফুঁ দিল। শিখাটার ছুটি। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল। তবে বেশি নয়, একটু হাঁটলেই রাস্তার মোড়ে হলদে হলদে আলো। রেল কলোনীর ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা। ওগুলো পেরিয়েই তাদের বস্তি। তার বাড়ি।
সব গোটানো হল। মেয়েটা বাবার বাঁহাতটা ধরে লাফাতে লাফাতে হাঁটছে। কি সব বলে যাচ্ছে। রোগা পুরুষমানুষটা চাদরটাকে ভালো করে কাঁধে পেঁচিয়ে, একহাতে জুতো সেলাইয়ের বাক্সটা নিয়ে, মেয়ের দিকে একটু ঝুঁকে মাথা নাড়তে নাড়তে হেঁটে চলেছে।
মেয়েটা কথা বলতে বলতে কয়েকবার পিছনে তাকালো। কাকে যেন খুঁজছে। একটু পরই হাসি ফুটল মুখে। একটা কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে তার বাবার বসার জায়গায় গিয়ে শুলো। তার পিছন পিছন তিনটে বাচ্চা, মায়ের গায়ে ঠেস দিয়ে শুলো।
কুয়াশায় বেশিদূর দেখা যাচ্ছে না। রাস্তার আলোগুলো কুয়াশার উপর যেন তাঁবুর মত কিছু দূর অন্তর অন্তর সেজে আছে। ওরা মিলিয়ে গেল একটা একটা আলোয় মোড়া কুয়াশার তাঁবু পেরিয়ে পেরিয়ে। মেয়েটার গলার আওয়াজ আর শোনা যাচ্ছে না। কুকুরটা তার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে গভীর ঘুমে।
চারদিক শান্ত, নিস্তব্ধ। পাশের শনি মন্দিরে একটা সাদা শাল গায়ে দিয়ে শনিঠাকুর দাঁড়িয়ে - একা। বড্ড একা। গ্রীল ঘেরা তিন দেওয়ালের মধ্যে বসে সকালের অপেক্ষায়, আমাদেরই মত।