রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। একটা বুড়ি, শসা হাতে নিয়ে সেটাই বসে বসে দেখছে। শতছিন্ন শাড়ি। রোগা বুড়ির গড়ন বেশ শক্তপোক্ত। মিস্ত্রীরা যত বলছে, ও ঠাকুমা সরে বোসো, গায়ে নোংরা লাগবে যে! বুড়ি নির্বিকার। নড়েও না, চড়েও না।
খুব মুশকিল দেখে একজন বুড়ো মিস্ত্রী ওর পাশে গিয়ে বসল। বলল, তোমার কি হয়েছে ঠাকুমা? তুমি সরছ না কেন?
বুড়ি বিরক্ত চোখে তাকাল। কেন রে এই শসাটাও তোদের চাই? বলে সে বিরক্তির সাথে অন্যদিকে মুখ ফেরাল।
প্রচণ্ড গরম। তার সাথে যন্ত্রের ঘড়ঘড় আওয়াজ। মিস্ত্রীদের চীৎকার।
আচমকা একটা শোরগোল শুনে সব ছুটে গেল। একজন মিস্ত্রী পা স্লিপ করে নর্দমার মধ্যে পড়ে গেছে। ওকে ধরাধরি করে সব একটা বাড়ির রোয়াকে শোয়ান হল। বাড়ির মালিক জানলা দিয়ে মুখ গলিয়ে, ব্যাপারটা বুঝে বলল, রোয়াকটা নোংরা কোরো না কিন্তু।
একজন কমবয়েসী মিস্ত্রী কাঁচা খিস্তি দিল লোকটাকে । বাড়ির মালিক বাড়ির ভিতর থেকেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিতে, বয়স্ক একজন মিস্ত্রী বাড়ির মালিককে বলল, না না দাদা, আমরা ওকে একটু দাঁড় করিয়েই নিয়ে চলে যাব। তেমন গুরুতর না মনে হচ্ছে।
এমন সময়, "কি হল ওর দেখি?" বলে সেই বুড়ি হাজির। যে পড়ে গিয়েছিল সে মধ্যবয়স্ক হবে। বুড়ি তার নাড়ী টিপে খানিকক্ষণ গম্ভীর মুখে বসে থাকল। তারপর আস্তে আস্তে বলল, যম নেবে না এখনই। সব্বাইরে নেয় না। ওই ভুদু ডাক্তারকে খবর দাও। পাড়ার মোড়ে বসে। আশি টাকা নেয়। আমার ছেলেটার বেলায় নেয়নি। সে আসার আগেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেও এই মিস্ত্রীর কাজই করত।
হঠাৎ আশেপাশে তাকিয়ে সে বলল, আমি যাই। মন্দিরে ভোগের সময় হয়ে গেল। এরপর আর সারাদিন দানাপানি পড়বে না পেটে।
বুড়ি চলে গেল। খানিক বাদে সেই আহত মিস্ত্রী উঠে বসতে গিয়ে, তার গামছার নীচে শক্ত কিছু একটায় হাত ঠেকল। বুড়ির হাতের শসাটা। রাস্তায় তখন হইহই রইরই ব্যস্ততা। আর মেশিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ।