রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অভূতপূর্ব এক বাক্যালাপ শুনলুম। বিশাল বাড়ি, বড় পাঁচিল, সামনে অনেকটা খোলা জায়গা, সেখানেই একপাশে একটা খাটাল। কিছু গরু খাটালে ছাদের নীচে, কিছু গরু বাইরে উঠানেই চরে বেড়াচ্ছে। বিশাল লোহার গেট সামনে।
একজন বেশ বয়স্ক মানুষ সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন। পরনে ধুতি, গায়ে চাদর। মনে হয় কোনো কাজে এসেছিলেন বাড়িতে। তিনি বড় লোহার গেট পেরিয়ে বাইরে রাস্তায় এসে সাইকেলে চড়তে যাবেন এমন সময় হাঁ হাঁ করে এক মহিলা নাইটি পরে বেশ উত্তেজনার সাথে দৌড়ে এলেন। ভদ্রলোক থতমত খেয়ে সাইকেলে ওঠার উদ্যোগ থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমি ভাবলুম কিছু নিয়ে পালাচ্ছিলেন না কিছু ভুলে রেখে এসেছেন? কারণ ভদ্রলোকের সঙ্গে বাড়ির লোকের আর্থিক অবস্থার পার্থক্য যথেষ্টই।
মহিলা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, দাদা এবার থেকে যখন বেরোবেন, বেরিয়েই গেটটা দিয়ে দেবেন... ষাঁড় ঢুকে পড়ে... বুঝতেই পারছেন... বাড়িতে এতগুলো গরু তো.....
ভদ্রলোক "তা তো বটেই,... তা তো বটেই" বলে সাইকেলে উঠে চলে গেলেন। খেয়াল করলুম গেটের কিছুটা দূরেই দুটো ষাঁড় বসে। রোজই দেখি, আজ অনুভব করলাম কিসের প্রত্যাশায়। হায় রে, "খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে" অবধি লেখা হয়েছে, তা বলে কি "সাধের গরু ছিল পাঁচিলের ওপারেতে, পথের ষাঁড় ছিল পথে".... এইভাবে লেখা যায়? জানি না। কিন্তু ষাঁড় বলে কি প্রেম নেই? জানি বিশ্বাস করবেন না, তবু বলি, এখন থেকে আমি ওপথে গেলেই ওই ফটকের দিকে তাকাই, মাইরি বলছি একদিন দেখলুম এক ষাঁড় লোহার গেটের ফাঁক দিয়ে এক গাভীর দিকে তাকিয়ে, সেও গেটের ওপারে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে এলুম। মেয়েদের স্কুলের সামনে যে চোখের চাহনি দেখেছি, এও সেই চোখ। টেস্টোস্টেরনের কোনো ভেদাভেদ নেই রে মন, শুধুই তোর ভেদবুদ্ধি আর আত্মগরিমায় ভোগা....
[ছবিঃ সুমন]