Skip to main content

 

শান্ত থাকার মধ্যে কোনো কাপুরষতা নেই। বরং ক্রমাগত অস্থির হয়ে পড়লে স্নায়ুদৌর্বল্য দেখা দিতে পারে। যদি ইতিহাস পড়ে দেখা যায়, দেখা যাবে এই মাটিতেই অনেক বড় বড় সংস্কারক শান্ত থেকেই অনেক প্রাসঙ্গিক, সঙ্গত, মূল্যবান কাজ করে গেছেন। তাদের অনেকের ছবি অনেকের দেওয়ালে আজও টাঙানো আছে।

নইলে কী হয়, বলতেই থাকলে, বলতেই থাকলে, ক্রমে বলার নেশা চাপতে থাকে। তখন কিছুক্ষণ কিছু না বললেই, না ভাবলেই মনে হয়ে, এই যা, আমি কি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি তবে? হারিয়ে যাচ্ছি?

শান্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। যে যাই বোঝাক, শান্ত থাকার মধ্যে কোনো কাপুরষতা নেই। শান্ত থাকা মানে নিষ্ক্রিয় থাকা না। শান্ত থাকা মানে মাথা ঠাণ্ডা রাখা। কোনোরকম উস্কানি, প্রোভোকেশানে নিজেকে সঙ্গত আর সংযত রাখার মত যোগ্যতা অর্জন করা।

হিংসা আর দ্বেষাত্মক উক্তিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে চারদিক। চারদিকে এ ওর দিকে আঙুল উঁচিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু আদতে এগুলো সবই বিভ্রান্তিকর। সোশ্যালমিডিয়া বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য অগ্রণী ভূমিকায় থাকে। তার দোষ সোশ্যালমিডিয়ার না, সমস্যাটা আমাদের। দেখা যায় নেগেটিভ নিউজ যতটা পপুলারিটি পায় পজিটিভ নিউজ অতটা না। "ফাস্ট অ্যান্ড স্লো থিংকিং" বলে যে বইটা বিশ্বের দরবারে ভীষণ প্রশংসিত সেটা একবার উলটে দেখা যেতে পারে। ডিফল্টে যে চিন্তাটা এলো সেটাই যে খাঁটি চিন্তা না, এটা জানা জরুরি। যে কোনো সময়েই ক্রিটিকাল থিংকিংটা জরুরি। চীৎকার করে গলা ফাটিয়ে, আছাড়িপাছাড়ি খেয়ে যে কাঁদল সে-ই আসল শোকটা পেয়েছে, আর যার চোখে শুধু এক বিন্দু জল এসে আটকে আছে সে শোকই পায়নি, শোকের বাড়িতে এমন হিসাব আমাদের অভ্যাসে স্বাভাবিকভাবেই আসে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই?

শান্ত থাকার মধ্যে, সংযত থাকার মধ্যে কোনো কাপুরুষতা নেই। একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনি, আপনার মেয়ে যদি হত.....

প্রশ্নটা ভীষণ অসঙ্গত। কারণটা একটু ধৈর্য নিয়ে দেখি। জানেন তো অনেক চিকিৎসক নিজের নিকটাত্মীয়ের অপারেশান নিজে করেন না। কেন বলুন তো? কারণ প্রজ্ঞা, ধৈর্য তখন আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাবে বলে। বোমান ইরানি সেই চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে বলছেন না, আজ যদি আমার মেয়ের জন্য আমি অপারেশন করতে ছুরি ধরি তবে আমার হাত কেঁপে যাবে।

এটাই হয়। অর্জুন যখন ওই ভীষণ যুদ্ধে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন, কৃষ্ণের তখন প্রথম সাজেশানই হল মনকে আগে শান্ত করো। নির্ভয়ার মা সেদিন অত্যন্ত সংযত হয়ে লড়ে গিয়েছিলেন বলেই অতদিনের লড়াইটা চালাতে পেরেছিলেন। আবেগ তাড়িত হয়ে সব শক্তি কয়েক মাসে খরচ করে ফেললে অত কঠিন লড়াইটা লড়া যায় না। বাড়িতে কোনো বড় শোক উপস্থিত হলে তাই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরা তাকে ঘিরে থাকে। কারণ শোক আর ক্রোধ মানুষকে পাগল করে দেয়। কথাটা আমার সঙ্গে ঘটেছে, না অন্যের সঙ্গে ঘটেছে অতটা ম্যাটার করে না, যদি আমি সত্যি সত্যিই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই। সেখানে আমার মূল অস্ত্র আবেগ না, আমার মূল অস্ত্র আমার প্রজ্ঞা, আমার ধৈর্য আর সঙ্গত চিন্তা করার অভ্যাস।

শান্ত থাকার মধ্যে, সংযত থাকার মধ্যে কোনো কাপুরুষতা নেই। পরীক্ষা হলে বসে ভীষণ কঠিন প্রশ্নপত্রের সামনে যেমন নিজেকে শান্ত করে নিই আগে, যাতে কোনো জানা প্রশ্ন ভুল না করে আসি, এও তেমন। আসলে আমাদের এই সামাজিক মাধ্যমে কোনটা যে ফ্যাক্ট আর কোনটা ফিকশান বোঝা শক্ত। তেমনই কোনটা অনুভবটা জেনুইন আর কোনটা ফেক, অ্যাজেণ্ডা লুক্কায়িত। কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখলে, নিজের চিন্তার কলটাকে সঙ্গতির অনুপানে পুষ্ট রাখলে হঠাৎ করে কোনো প্রোভোকেশানে পা দেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো হয় তো যায়। এটাই এখন সব চাইতে বেশি দরকার। কাউকে অনুকরণ করার দরকার নেই। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানেই দাঁড়িয়ে নিজের বিবেকবুদ্ধির আলোয় যদি দেখি আমার মত করে হাঁটার রাস্তাটা আমি পেয়েই যাব। এটুকু বিশ্বাস তো নিজের উপর রাখতেই হবে।