মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্ট বলেছেন স্বামী স্ত্রীর অনিচ্ছাতেও যদি পায়ুকাম করে থাকেন, তবে সেটা ধর্ষণ হয় না। স্ত্রীর মতামতের কোনো মূল্য এখানে নেই।
ম্যারিটাল রেপ আমাদের দেশে ধর্ষণ নয়। তার পক্ষে, বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। অনেক যুক্তির মধ্যে একটা যুক্তি হল কোর্টে কী করে প্রমাণ করা যাবে যে ঘটনাটা অমতে ঘটেছে। আরেকটা যুক্তি হল বিবাহের মত 'স্যাক্রেড' বা পবিত্র বা ধর্মীয় সংস্কারবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইনের প্রবেশ কতটা ন্যায্য। আরেকটা যুক্তি হল এতে করে স্বামীদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে। খুব সহজেই এই ধারায় স্বামীদের ফাঁসানো যাবে।
আমি তো আইনজ্ঞ নই। কিন্তু পৃথিবীর এতগুলো দেশে ম্যারিটাল রেপ কী করে আইনের মধ্যে ক্রাইম হয় সেটা জানি না। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিতে এটা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না কী করে একজন মানুষের অমতে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, শুধুমাত্র বিয়ে হয়ে গেছে এবং এক ছাতের তলায় থাকছে এই যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে। একজন মানুষের মর্যাদাবোধ কী এতটাই ঠুনকো যদি সে বিবাহিত হয়, নারী হয় আর স্বামীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকে? উপায় কী?
স্ত্রীকে স্বামীর সঙ্গে কথা বলে একটা সমঝোতায় আসতে হবে? এরকম তো আগেকার দিনের গুরুজনেরা বলতেন, নিজেকে এমনভাবে তৈরি করো যাতে স্বামী বাইরেমুখ না হয়। একজন বিখ্যাত পরিচালক আর আরেকজন অভিনেত্রী মাঝে একটা মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে অনুষ্ঠান করতেন। সেখানে একজন মহিলার স্বামীর এমন স্বভাবের জন্য তাকে সাজেশন দিয়েছিলেন, আপনিও মদ খাওয়া অভ্যাস করে নিন তবে অসুবিধা হবে না। অর্থাৎ যাই হোক না কেন, একে আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ বলা যাবে না।
“থাপ্পড়” বলে সিনেমাটা দেখতে দেখতে আমার এটাই মনে হয়েছিল, এতবড় একটা দিক যে দেশে আইনের চোখে দোষের নয়, তখন একটা থাপ্পড় নিয়ে এত কিছু যেন কিছুটা আমাদের দেশের পক্ষে বেমানান।
বলা যেতে পারে, তিনি ডিভোর্স নিয়ে নেবেন। সেটা তো হয়ই। কিন্তু একটা অন্যায় কে অন্যায় বলা যাবে না? যে দেশে একটা পশুকে অত্যাচার করলেও আইন পাশে দাঁড়ায়, সে দেশে একজন মানুষ বিবাহিত হওয়ার দায়েই সবটা মেনে নেবে? কেন? একটা দেশে অ্যানিমাল ক্রুয়েলটি অ্যাক্ট হতে পারে, আর সেই দেশেই একজন জলজ্যান্ত মানুষের শরীরে যেখানে সেখানে একজন মানুষ তার অমতে অঙ্গ প্রবেশ করিয়ে সুখ পাবে, শুধু তার স্বামী বলে এবং তাকে সেই সুখের “সহধর্মিণী” হতে হবে, কেন?
এ আইন কে বানালো? ব্রিটিশ আমল থেকে এ আইন চলে আসছে। ইউনাইটেড নেশন এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছে, বাড়ি হল মেয়েদের সব চাইতে বিপজ্জনক জায়গা।
কিছু দেশে আজও LGBTQ সংখ্যালঘুরা আইনের চোখে এমনকি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য। আইন মানুষ বানায় মানুষকে মাথায় রেখে। আইন যদি একজন দুর্বল, নির্দোষ, বিপাকে পড়া মানুষের বিপন্ন মর্যাদার পাশে এসে না দাঁড়ায়, তবে কী তা চিন্তার বিষয় নয়?
আমাদের দেশ পর্ণসাইট নিষিদ্ধ হওয়ার আগে আমরা পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে ছিলাম পর্ণসাইট দেখাতে। আজই রাজস্থানের একটা খবরের কাগজে উঠে এসেছে তথ্য যে ভারত থেকে প্রতিমাসে একশো কোটি পর্ণসাইটের সার্চ হয়। যা বিশ্বের ওয়েবসাইট ট্রাফিকিং এর ৬০% এর বেশি। ভারতে নারী নির্যাতনের সংখ্যাটাও মাথায় রাখার মত।
পর্ণসাইট দেখা আর সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তবে একদম সম্পর্কহীন তাও বলা যায় না। একজন মানুষ যখন একজন মানুষের ইচ্ছার মর্যাদা না রেখে তার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারে শুধুমাত্র বৈবাহিক বন্ধনের স্বীকৃতিতে তখন এটা অন্তত স্পষ্ট যে তার নৈতিক দিকটা খুব বলিষ্ঠ কিছু নয়। পর্ণসাইটের অনেক দিক আছে। যার সবটাই যে খুব স্বাস্থ্যকর তা তো নয়। তো মহামান্য আদালত যদি দেখেন যে দেশে যৌন বুভুক্ষা এই স্তরে, সেই দেশে মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে বোধহয় আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার। অবশ্যই এটা পার্লামেন্টে আলোচনারও বিষয়।
অনেকে বলবেন, কত পুরুষ মিথ্যা কেসে ফেঁসে যায় শুধুমাত্র আইনের ফাঁকফোকর থাকায়। আবার একটা কেন?
এ আশঙ্কা অবশ্যই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু ঠিক তেমনই এটাও মেনে নেওয়া যায় না যে দেশের একজন মানুষেরও আত্মমর্যাদাবোধ, ইচ্ছার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হোক।