Skip to main content

"কি শিখবে? অস্ত্রবিদ্যা না সংগীত?",পিতা জিজ্ঞাসা করলেন কুমারকে। তাঁর তখন বিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত, সময় বিশেষ শিক্ষার।
কুমার বললেন,"অস্ত্র।"
পিতা বললেন,"বেশ।"
শুরু হল কুমারের অস্ত্রশিক্ষা।
কিন্তু দিন যত এগোলো, কুমার তত পিছলেন।
খবর গেল পিতার কাছে।
"কি অসুবিধা কুমার?",পিতা শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন।
"আমার ভাল লাগছে না পিতা। অস্ত্রের আওয়াজ, এ ভীষণ কঠিন! আমি শিখব সংগীত - বাঁশি", আনত মুখে উত্তর করলেন কুমার। পিতা হলেন প্রসন্ন।
কুমার গেলেন সংগীতভবন। শুরু হল সংগীত শিক্ষা।
দিন যায়, কুমারের বাঁশিতে সুর আর ধরা দেয় না।
তাঁর প্রেয়সী বলেন,"কুমার এ পথ ছাড়!"
কুমার ওঠেন গর্জে,"মূঢ় মেয়ে, সংগীতের কি বুঝিস তুই!"
প্রেয়সী ভাবেন, হবেও বা। আমি মূর্খ নারী!
কত বসন্ত, শ্রাবণ ঘুরে যায় কুমারের আঙিনায়, সুর থেকে যায় অধরাই। ক্রুদ্ধ কুমার বাঁশি ফেলেন আছড়ে। আবার নতুন বাঁশি আসে। কিন্তু সুর আর আসে না।
একদিন গুরু রাতে শোনেন কিসের কর্কশ আওয়াজ। উঠে দেখেন কুমার বাঁশিটি করছেন সূঁচালো, পাথরে ঘষে ঘষে।
"একি করো কুমার?",বিস্মিত গুরু।
"মারব।"
"কাকে?"
"একে ওকে তাকে-"
ক্রুব্ধ গুরু নিজেকে করলেন সংযত, বললেন,"সংগীত মরার পথ কুমার, মারার না। নিজের অহংকারকে এখনো পারনি মারতে, তাই সুর আজও অধরা তোমার প্রাণে। এ পথ তোমার নয়। তুমি ফিরে যাও।"
ক্ষুব্ধ কুমার ফিরলেন পিতার সাথে। নিলেন স্বেচ্ছা নির্বাসন।
একদিন রাত্রে পুস্পোদ্যানে পিতা ডেকে পাঠালেন কুমারকে।
কুমার আসলেন। পাশে বসলেন। সারা আকাশ তখন তারার আলোয় উৎসবমুখর। বাতাস ফুলের সৌরভে মোদিত করে তুলেছে চারিদিক। নিবিড় প্রশান্তি চারিদিকে। পিতা তাঁর ডান হাত রাখলেন কুমারের কাঁধে, বন্ধুর মত। বললেন,"দেখো কুমার, দুটো কথা মনে রেখো। জীবন মানে পরিবর্তন, আর শিক্ষা মানে রূপান্তর। পরিবর্তিত আর রূপান্তরিত হতে চাওয়ার ইচ্ছাটাই আমাদের চলার গতি। এর একটিকে অস্বীকার করা মানেই নিজের বিনাশকে ডেকে আনা কুমার। বুঝেছ?" সস্নেহে তাকালেন পিতা কুমারের মুখের দিকে।
কুমার বললেন,"না পিতা, আমি মানি না। এ দুর্বলের দর্শন। আমি বুঝি আমার মত, আমার ইচ্ছা- তাতে জগৎকে ঢেলে নেওয়াই জীবন। এই আমার ধর্ম, আমার জীবন।"
পিতা স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলেন কুমারের দিকে। কিছুক্ষণ পর বিস্ময়ের ঘোর কেটে তাঁর দু'চোখ ভরে এল জল, করূণায়।
বললেন,"বেশ।"
সময় গেল। নতুন হল পুরোনো, পুরোনো হল লুপ্ত - কালের স্রোতে। এখন কুমারকে আর পথে-ঘাটে দেখা যায় না। তাঁর নিত্য ঠাঁই শহরের প্রান্তে পানশালায়। সেখানে বাঁশির স্বর আর অস্ত্রের ঝনঝনি কিছুই প্রবেশ করে না। কুমার আপন মনে জড়ানো গলায় বলে চলেন,"আমি অপরিবর্তিত...অরুপান্তরিত...আমি...আমিই সব...শেষ কথা..."