জামাটা দেখেই দাঁড়িয়ে গেল। জামাটা তার। কিন্তু হোটেলের বেঞ্চ মুছছে যে ছেলেটা জামাটা গায়ে, সে তো সে নিজে নয়।
মা পুরোনো জামা দিয়ে দেয়। বাসন কেনে। কখনো এমনিই দিয়ে দেয়। এই জামাটা কিভাবে দিয়েছিল? জানে না। এটা তার প্রিয় জামা। নিজের জিনিস চেনা যায়। এটা একটা ম্যাজিক। স্কুলে দেখেছে। সব পেন্সিলের ভিতর থেকে নিজের পেন্সিলটা আলাদা করে চেনা যায়। এও তেমন করেই চেনা। এটা তার জামা ছিল। পুজোতে কেনা কোনো বছর। পুরোনো হয়েছিল। সে ক্লাস এইটে পড়ে। কিন্তু ও? পড়ে কি আদৌ? স্কুলে যায়?
মনে ভয় জন্মালো। মায়ের হাতটা ছাড়তে ইচ্ছা করছে না। সে যদি ও হত? এখন সে ট্রেন থেকে নামল কলকাতার মিউজিয়াম দেখে। মা ফল কিনছে। তার প্রিয় ফল বেছে বেছে। তাদের দোতলা বাড়ি। এসি আছে। বাবার গাড়ি আছে। স্কুটার আছে। তার রেঞ্জার সাইকেল আছে। গার্লফ্রেন্ড আছে। ওর বাবা দাঁতের ডাক্তার। সে যদি এরকম হত? সে যদি এরকম ফ্যামিলিতে জন্মাত?
ভয় করছে। কি ভীতু সে। কি স্বার্থপর। কি নিষ্ঠুর।
মাকে বলল, চলো, আমার পেটব্যথা করছে।
সেদিন সে কিছুতে মন দিতে পারল না। ক’দিন এমনিই গেল। সে যদি ওরকম হত। তার নিজের জামা গায়ে ও যেন নিজেকে দেখছে রাতদিন। হোটেলের বেঞ্চ মুছছে।
একদিন ভুলে গেল সব। তবু কিছু একটা মনে থেকে গেল। কি মনে থেকে গেল স্পষ্ট তো নয়। তবু মনে থেকে গেল। রাগটা কমল। মনের মত খাবার না হলে, জামাপ্যান্ট জুতো না হলে, আগে যেমন ফস করে মাথা গরম হয়ে যেত এখন হয় না। হঠাৎ করে নিজের জামাটার কথা মনে পড়ে। আর মনে হয় সেই ছেলেটার জায়গায় সেও তো হতে পারত। হতেই পারত।