দেখুন, আমরা আপনাকে প্যানিক করার কারণ দেব। কিন্তু আপনি প্যানিক করতে পারবেন না। আমরা আপনাকে ঘৃণা, রাগ, বিদ্বেষ - এগুলোর খবর জানাব। আপনি স্থিতপ্রজ্ঞের মত থাকবেন। যদি না পারেন, আপনি কি করে কি করে স্থিতপ্রজ্ঞ থাকবেন সেও নানা টিপসের মাধ্যমে জানাব। আপনি শুধু আমাদের কিনুন। আমাদের দেখুন।
আসলে আপনার মধ্যে ঢোকার সহজতম রাস্তা কি বলুন তো? আপনার সেন্টিমেন্ট। তথ্য, সত্য, ন্যায়-অন্যায় - এইসব নিয়ে পাগলে ভাবে। আমরা না। আমরা এসবের উপর এমন আস্তরণ চড়াই যাতে আপনার সেন্টিমেন্টকে হিট করে। আপনার সেন্টিমেন্টই আমাদের টার্গেট। আপনি নন।
মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা রাখুন, আমরা দেখেছি আপনার সেন্টিমেন্টকে জাগিয়ে দিলেই আপনার বিবেচনা শক্তি অফ হয়ে যায়। দেখুন আমরা জানি মানুষ বিবেচক বাধ্য হয়ে হয়। মানুষ বিবেচক হতে ভালোবাসে না। মানুষ মনে মনে ঘৃণা করে বিবেচনার নগ্ন দৃষ্টিকে। নিরপেক্ষ সত্য সুখের নয়। বড় বেশি দাবী তার। তাই আমাদের ধর্ম আমাদের বোঝায় ঈশ্বরের আমার উপরেই একটা স্পেশাল দৃষ্টি আছে, স্পেশাল কেয়ার আছে যদি এই এইগুলো করি। সমদর্শী ঈশ্বরে আমাদের ক্ষোভ। আমি আর ওই পাপী একই হবে তোমার চোখে? কেন তুমি কি পাব্লিক টয়লেট? তুমি কি শপিংমল? তুমি কি খোলা ফুটপাত? সমদৃষ্টি?!! আমি ঘেন্না করি। তুমি আমার সেন্টিমেন্টকে বোঝো। আমিও তোমার সেন্টিমেন্টকে বুঝি। এটা যদি না বোঝো তবে তুমি হয় পাথর, নয় বায়বীয় তত্ত্ব।
তাই বললাম না, মানুষ বিবেচক হয় বাধ্য হয়ে, সেন্টিমেন্টাল হয়ে স্বভাবসুখে। আমি রাতদিন সেন্টিমেন্টাল থাকতে ভালোবাসি। আমার ধর্ম, আমার রাজনীতি, আমার দেশ, আমার পাড়া, আমার অভিনেতা, আমার অভিনেত্রী, আমার ঘুরতে যাওয়ার জায়গা, আমার প্রিয় খাবার, আমার পেস্ট-পোশাক-গাড়ি এ সবের ব্র্যাণ্ড - আমি সব বিষয়ে সেন্টিমেন্টাল। আমি আঘাত পাই। নইলে সুখ পাই। সেন্টিমেন্ট আমায় স্পষ্ট করে দুই দেয়। নয় আঘাত, নয় সুখ। আমি গ্রে জোন বুঝি না। আমি অতশত আনবায়সড ইত্যাদি প্রিটেনশানে যাব কেন? আমি জানি মানুষ সেন্টিমেন্টাল। ব্যস। ওতেই আমার কাজ গুছিয়ে নেওয়া যাবে।
তুমি বলবে যদি সেন্টিমেন্ট না থাকত তবে পৃথিবী নিষ্প্রাণ, বর্ণহীন হত।
তুমি একদম ঠিক বলেছ। সমস্যা তোমার সেন্টিমেন্ট থাকা নিয়ে নয়। সমস্যা তোমার সেন্টিমেন্টের এক্সপ্লয়েটেড হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। এক্সপ্লয়েট করতে চাওয়া আর ছুঁতে চাওয়া কি এক? এক নয়।
এক্সপ্লয়েটেড সেন্টিমেন্টের ভার অনেক। সে যত এক্সপ্লয়েটেড হয় সে তত পাতি বাংলায় ঝাঁঝরা হয়। ঝাঁঝরা হতে হতে সিনিক হয়। সিনিক হতে হতে ভুলে যায় যে সেদিন দরজা খোলা হয়েছিল নির্বিচারে। সেন্টিমেন্ট তখন বিষ। তখন বিষের নেশা। আরো কড়া সেন্টিমেন্টের জিনিস দাও। আরো চড়াও নেশা। আরো আরো কঠিন নেশা চাই।
সেন্টিমেন্টের একটা বড় সমস্যা হল সেন্টিমেন্টের স্মৃতি ভীষণ কাস্টমাইজড হয়। রামকৃষ্ণদেব বলছেন একটা রসগোল্লা, যেই গলা দিয়ে নেমে গেল আর কোনো স্বাদ নেই। কি মারভেলাস এক্সাম্পল। তাই তো! সেন্টিমেন্টের সব কিছুই তো "এখনই"। তাৎক্ষণিক। নগদ সুখ, নগদ দুঃখ। হারাতে আর পেতে কতক্ষণ। এই নিয়ে কি আর শক্ত জীবন ভিত গড়া যায়?
তোমাদের জীবন ভিত নাড়িয়ে উড়িয়ে দেব বলেই আমরা। তোমাদের সেন্টিমেন্টের ঘুড়িতে উড়িয়ে নিজের হাতে লাটাই রাখব বলেই আমরা। আমরা কারা? আমরা সমাজের প্রভাবক। আমরা সকাল থেকে রাত তোমার সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলি। তোমায় দরকার আমরা ঠিক করে দিই। তোমার শত্রু কে, মিত্র কে আমরা ঠিক করে দিই। কখন তুমি কাঁদবে, হাসবে সব আমরা ঠিক করে দিই। তুমি শুধু সেন্টিমেন্ট বাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা তোমায় জাগিয়ে রাখব সেন্টিমেন্টে। শুধু তুমি জেগে যেও না হঠাৎ করে তোমার বিবেচনা শক্তি নিয়ে। তবেই আমাদের ভীষণ বিপদ।