গরু, কুকুর যেমন নিজের গা নিজের জিভ দিয়ে চেটে নিজের শুশ্রূষা করে, মানুষের আবেগেরও তেমন একটা ক্ষমতা আছে। নিজেকে নিজে শুশ্রূষা করার।
গরু, কুকুর ওই জিভ দিয়েই নিজের শাবকের গা চাটে। তার আবেগকে জানায়। আবেগ ছাড়া বন্ধন হয় নাকি? আবেগই তো সেই সুক্ষ্ম তন্তু, যাতে একের সঙ্গে অন্যে বাঁধা আছি। গরু, কুকুর তাই সে জিভ দিয়ে অন্যকে শুশ্রূষা দেয়, সেই একইভাবে জিভ দিয়ে নিজেকেও শুশ্রূষা দেয়। মানুষের আবেগেরও সে ধর্ম আছে।
মানুষের অনেক সময় নিজের কাছে নিজের শুশ্রূষা লাগে। তখন আবেগের মুখ ঘুরে যায় নিজের দিকে। একখণ্ড আবেগ, আরেকখণ্ডের দিকে তাকায় সযত্নে, ভালোবাসায়। নিজেকে নিয়ে নিজের ক্ষোভ রাখতে নেই তাই। আত্ম-ক্ষোভে, আত্ম-ধিক্কারে, আত্ম-ঘৃণায় নিজের আবেগের শুশ্রূষা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে মানুষ। নিজের মধ্যে নিজে কাঙাল, হতশ্রী, রুক্ষ হয়ে পড়ে। ভাবে গোটা জগত বুঝি তাই! কী ভীষণ ভ্রম সেটা, সে বোঝে না।
আবেগ যখন নিজের দিকে ফেরে, ক্ষোভে না, শান্তিতে, তখন বোঝা যায় "রত্নাকর নয় শূন্য রে মন"। এত শান্তি, এত আনন্দ, এত ধৈর্য আমারই মধ্যে মজুত ছিল? অকারণেই? এ প্রেমের উৎস কী তবে?
প্রেম যোগ্যতার বিচার করলে মাটি-পাথরের জগত চলত, মানুষের জগত ধ্বংস হত মুহূর্তেই। প্রেম যোগ্যতার বিচার না করেই দেয়। নিজেকে দেয়। আবেগ যখন নিজের দিকে ফেরে, নিজের ক্ষত-বিক্ষত বাকি অংশকে আদর করে সস্নেহে, ওই পশুর জিহ্বা শুশ্রূষার মত, তখন বোঝা যায় মহাপুরুষেরা কেন বলেছেন মানবিক পরম সত্যের নিবাস অন্তরে। সে পরম সত্য এক, কিন্তু বহুরূপে প্রতিপন্ন। তারই একখণ্ড সত্য আমারও মধ্যে আমার দিকে ফেরা আমিতে।
একি সেল্ফ-পিটি তবে? না। সেল্ফ-পিটিতে প্রশ্রয় আছে, আশ্রয় নেই। সেল্ফ-পিটি শান্তিহীন, জড় করে রাখে। আত্ম- শুশ্রূষা স্নিগ্ধ করে, উজ্জীবিত করে, আবার জীবনের রাস্তায় ফিরে আসার যোগ্য করে তোলে।