এক দেশে একবার সবাই মিলে ঠিক করল, আর রাজা-সম্রাট নয়, একটা নতুন নিয়ম আনা হবে। সেই নিয়ে অনেক শলাপরামর্শ হল। সিদ্ধান্তও হয়ে গেল। কি সিদ্ধান্ত হল?
প্রত্যেকে তার বাড়ি থেকে, নিজের রুচি, পছন্দ, ঐতিহ্য, সংস্কার অনুযায়ী একটা করে লৌহ নির্মিত দণ্ড আনবে। তারপর সেই দিয়ে তৈরি হবে এক বিরাট দেশ। লৌহদণ্ড দিয়ে ঘেরা দেশ।
ধীরে ধীরে দারুণ একটা কারাগারের মত দেশ তৈরি হল। কেউ বলল না অবশ্য এটা কারাগার। কারণ সবারই তো নিজের হাতে করে আনা লোহার দণ্ড আছে, যা দিয়ে বানানো হয়েছে গোটাটা।
এরপর হল কি, এ বলে তোমার লোহার দণ্ড বড্ড কঠিন, আলোবাতাস আসে না। সে বলে, আমার না হে, তোমার লোহার দিকের তাকাও। ব্যস, প্রায়ই এ ওর লোহা উপড়াতে যায়, সে তার দণ্ডের নামে জানায় নালিশ। কিন্তু কেউ নিজের লোহা উপড়াতে যায় না। বলে, আমার লোহা কারাগার গড়েনি, গড়েছে বাঁধন, এতেই আছে বাঁধা ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কার। ওর লোহার দিকে তাকাও, ও বর্বর, স্থূল, ও-ই গড়েছে কারাগার, আটকিয়েছে আলো বাতাস সব।
মাঝে মাঝে হুলুস্থুল বেধে যায়। আবার আলোচনা সভা বসে। লোহার রং বদলের নির্দেশ আসে। নতুন রঙে আবার কারাগারবাসী মজে যায়। গর্বের সঙ্গে বলে, যাদের রঙ বদলের অধিকার আছে তারাই তো আসল স্বাধীন।
লোহার দণ্ড হাসে।
আকাশ, বাতাস সকরুণ চোখে তাকায়।
এর মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য কোনো লোহার দণ্ডই আনেনি। তারা কারাগারের দেশে জায়গাও পায়নি। তারা মাঝে মাঝে কারাগারের বাইরে থেকে বলে, বাইরে এসো, মোহ ভাঙো।
কারাগারবাসীরা ভিতর থেকে ভুরু কুঁচকিয়ে বলে, তোমাদের আমরা বিশ্বাস করি না। তোমরা স্পষ্ট করে বলোনি যে কোথায় তোমাদের দেশ, আজ অবধি তোমরা একটা পাঁচিলও তুলতে পারোনি। এতই দুর্বল তোমরা। তোমাদের কিছুতেই বিশ্বাস নেই।
তারা বলে, ভাই বাইরে এসে দেখো, কথাটা বিশ্বাসের না, কথাটা পাঁচিলের না, কথাটা আলো বাতাসের।
তারা পিছন ফিরে বলে, সে আমাদের অনেক আছে। তোমরা যাও।
তারপর তারা আবার শলাপরামর্শ করে, কি করে ওদের জন্য আরেকটা কারাগার বানানো যায়, যাতে ওরা নষ্ট না করে পরবর্তী প্রজন্মকে, ওদের ওইসব আলোবাতাসের কথায়।
পেয়াদা পাঠায়। তারপর নিশ্চিন্ত হয়।