Skip to main content

স্যুটকেশ গোছানো বাকি
সব কিছু খাটের উপর বার করে রাখা
     তবু গোছানো হয়নি।

স্নান করতে ঢুকল। জলটা তেমন ঠাণ্ডা নয় যেন আজ।
চশমা চোখে নেই, তবু বুঝতে পারছে বাথরুমের ছাদের দেওয়ালের কোনে একটা বড় মাকড়সা।
   ঝড় হয়েছে কাল সন্ধ্যেতে, ঢুকে পড়েছে।

সেরকম ভয় করল না। একবার ভাবল ডাকে, তারপর ভাবল, থাক ঘুমাক। ট্রেনে তো ঘুম হয় না।

স্নান সেরে আয়নার সামনে দাঁড়াল।
    সিঁদুরটা টানতে বুকের কাছে একটা ব্যথা জাগল,
   যেন বুকের মাংসে কেউ আঁচড় টানল।

আয়নায় দেখল, ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। রাতে তো ঘুমাবে না।

  সারাদিন রান্না করল। অনেক কিছু। পোস্তর বড়া, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, সাগুর পাঁপড় - কি এমন আহামরি ভালোবাসে মানুষটা? হোটেলের খাবারও তো খেতে পারে না।

কান্না পেল। চোখ থেকে সত্যিই দু ফোঁটা জল বেরোলো, রান্নাঘরের উনুনের তাপ, কড়াইয়ের তেলের ঝাঁঝের মধ্যেই। আঁচলে মুছল। রেডিও অন করল। এ সময় অনুরোধের আসর। রবীন্দ্রসংগীতের দিন আজ। মঙ্গলবার। কলকাতা 'ক' তে।

"আজকের প্রথম গানটার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, খড়দা থেকে মল্লিকা, সুদেষ্ণা..বর্ধমান থেকে দেবেন, সুরেন..শিল্পী পূর্বা দাম..'না বুঝে কারে তুমি ভাসালে আঁখিজলে'.শিল্পী পূর্বাদাম।

পৌনে দুটো। রান্না শেষ হল। আবার স্নানে গেল। আগুনের তাপ জুড়ালো। বুকের ভিতরটায় জল পৌঁছালো না। যেন সারা বুক তেল মাখা আজ। জল ছোঁয় না, শীতলতা ছোঁয় কই?

দুপুরে শাশুড়ির ঘরে গেল। ইচ্ছা করেই। দুপুরটা ঘুমাক। ট্রেনে তো ঘুম হবে না। আর কাছে মুখটা আনলেই সিগারেটের গন্ধ। কান্না পাবে। সে নাকি ছিঁচকাঁদুনে।

বিকালে ছাদে এলো। গাছগুলোতে জল দেওয়া হয়নি। ছাদে আসার আগে দেখে এসেছে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। পাঁচটায় চা করে ডাকবে। ছটায় বেরোবে তো। আটটায় ট্রেন। বম্বে মেল। রাস্তায় যা জ্যাম!

  ছাদে পাশের বাড়ির অলোকাবৌদি এটাওটা কত কি বলল। আজ কথাগুলো যেন ভাজা সুজির মত। ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। জমল না। কথাগুলো কাককে খাইয়ে নীচে নামল।
সূর্যটা অস্ত যাচ্ছে বাড়িগুলোর পিছনে। শীত আসছে।

কয়েকটা দরকারি কথা গলা থেকে কান্না মুছে শুকনো করে বার করে দিল। উত্তর এলো। বাংলা কথা, তবু যেন বুঝল না। সিঁদুরটা চুলকাচ্ছে, নকল কোম্পানি কি?

   "দাদাবাবু ট্যাস্কি এয়েচে" হরেনদা ডাকল।

ট্যাক্সিটা বুকের এমাথা ওমাথা ফুঁড়ে বারেন্দ্রগলির মোড়ে দাঁড়িয়ে। ভিতর অবধি আসে না। শাঁখের আওয়াজ, কলকাতা দূরদর্শনের খবরের আওয়াজ। ও নামছে। ভি আই পি টা বিয়েতে পাওয়া। পি এস স্টিকার মারা সামনে - পরিতোষ সাহা। মুখে না, মনে মনে বলল। মনে বলতে দোষ নেই।

  নামল না। ঝুল বারান্দায় দাঁড়াল। পনেরো দিনেরই তো ট্যুর মাত্র। তবু এত কেন? এই তো আজ থেকেই তো পনেরো দিন শুরু। মালতী দশদিনের জন্য বাইরে। ঘরের এত কাজ কে করবে? তাতেই তো দশদিন কেটে যাবে, বাকি পাঁচ দিন ও কাটিয়েই নেবে।

  মনের সাথে কথা বলছে। চোখে জল গাল গড়াচ্ছে। মানুষটাকে তো এই সাড়ে সাতমাস চিনল। তাতেই! তার আগে তো জানতই না...বারেন্দ্রগলি..সিগারেটের গন্ধ....

  বিছানায় এসে বসল। তোষক ওল্টালো। তোষকের তলায় একটা সিগারেটের প্যাকেট। লুকিয়ে রেখেছিল। না হলে রাতে ঘুম হবে কি করে? আজ রাতে তো ঘুমাবেই না। তার আশেপাশে ট্রেনের আওয়াজ। সে জেগে থাকবে। তার সিটের নীচে থাকবে ওর ভি আই পি। তাতে ওর গায়ে দেওয়ার চাদরের নীচে রাখা নিজের ব্যবহার করা রুমাল। সেণ্টের গন্ধ লাগানো। খুঁজে পাবে? পাবে না তো কি? সারারাত তো জাগতে হবে? সে না থাক, তার গন্ধ মাখা রুমাল তো যাক...ওর সাথে...

 

Category