সমস্যা.....
বুঝলে
খেজুরের
রসে শেষ চুমুকটা দিয়ে রাধামাধব বলল, আবার বাড়সে....করোনা।
রতিকান্ত
খেজুরগাছটার দিকে তাকিয়ে বলল, বয়স কত হল?
রাধামাধব
বলল, তেষট্টি...
আরে
ধুর... তোমার না, গাছটার...
রাধামাধব
বলল, কে জানে....
রতিকান্ত
বলল, জ্যোতির বউটাকে এখানেই সাপে কামড়েছিল না?
রাধামাধব বিরক্তির
সঙ্গে বলল, ও নষ্ট মেয়েছেলেকে নিয়ে আবার সাতসকালে আলোচনা কেন...
কেন
তোমার ছেলের সঙ্গেই তো ফষ্টিনষ্টি করতে অত রাতে এখানে এসেছিল... গোটা গাঁ জানে..
রাধামাধব
ভেংচে বলল, গোটা গাঁ জানে... জানুক.... এই রাধামাধব ওতে পরোয়া করে না....
রতিকান্ত
বলল, মেয়েটা আসলে খুব বিরক্ত করছে বুঝলে.... আমি সাধনায় বসলেই চলে আসছে....
রাধামাধবের
মুখটা শুকিয়ে গেল... বলল, কি... কি চায় সে?
রতিকান্ত
বলল, তোমাকে হে.... সেদিন রাতে তোমার ছেলে এসেছিল... এ কথা তো তুমি রটিয়েছিলে... ছেলেটা
ভালো বলে মেনে নিল... বাপের কুকীর্তি ঢাকতে... এসেছিলে তো তুমি...
রাধামাধব
অস্থির হয়ে বলল, আরে ওসব ছাড়ো... আমায় চায় মানে কি?
রতিকান্ত
বলল, তুমি টুক করে অপঘাতে কেটে পড়ো... এই আর কি.... আর কি চাইবে.....
রাধামাধব
বলল, যত্তসব... ওই নষ্ট মেয়েছেলের জন্য নাকি আমি প্রাণ দেব....
রতিকান্ত
বলল, তাকে এ রাস্তায় নামিয়ে এনেছিল কে রাধামাধব?
রাধামাধবের
মুখটা লাল হয়ে গেলো। সকালের সূর্যের আলোয় পাকা পেয়ারার মত গালদুটো ফুলিয়ে রাধামাধব
বলল, বেশ করেছি.....
রতিকান্ত
বলল, সে না হয় করেছ.... কিন্তু যা হওয়ার তো হয়েই গেল...
রাধামাধব
ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, কি?
রতিকান্ত
বলল, তোমার বাঁ পায়ের গোড়ালির উপরে দুটো রক্তের বিন্দু জমে কেন? কেটে গেল.... বুঝলে
না.... সবই নিয়তি রাধামাধব... ওই দেখো.... শুয়ে আছেন তিনি....
কালো
সাপ একটা কিছুটা দূরে পুকুর ঘেঁষে শুয়ে।
রাধামাধব
কুলকুল করে ঘামছে এই শীতেও। আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে রতি.. আমার বুকে অসহ্য
যন্ত্রণা..... আমি... আমি..... রাধামাধব খেজুর গাছটার তলায় পড়ে গেল।
রাধামাধব
শেষ। রতিকান্ত নাড়ি দেখল। নেই। পুকুরের পাড়ে পড়ে থাকা রাবারের সাপটা ব্যাগে ভরে
নিল। রাধামাধব খেজুর গাছে ওঠার সময় যে সুক্ষ্ম সূচদুটো দিয়ে রাধামাধবের পায়ে
ফুটিয়েছিল সে দুটো পুকুরে ফেলে দিল। রতির হাতে ম্যাজিক আছে, ডাক্তারবাবু বলতেন,
যখন রতিকান্ত কম্পাউন্ডার ছিল।
রতিকান্ত
ধানক্ষেতের আল দিয়ে ফিরছে। আরো অনেক মানুষকে সরিয়ে দিতে হবে। নিঃশব্দে। নইলে
জীবনটা পানসে হয়ে যাবে।