Skip to main content

শুভ নওয়র্ষ মা!

এই বলে লালটু মা কালীর মন্দিরে উপুড় হয়ে পড়ল। ওকে বলে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম।

পুরোহিত বলল, কী চাই বাওয়া?

লালটু বলল, আই ফোন। বাপটা রাজী করাও। চন্দননগর থেকে মিষ্টি এনে মায়ের পুজো দেব। মাইরি বলছি।

পুরোহিত বলল, মা মিষ্টি খায় না রে…. তুই আমার জন্যে বাড়িতে দুটো বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিবি… ব্যস… আমি আর মা কি আলাদা রে! কদ্দিন এই লাইনে আছি বল….

=========

বাবা…. ও বাবা… শুভ নওয়র্ষ…. এবারে দাও না…. সামনের বার ঠিক কলেজ পাস করে যাব দেখো….

বাবা জনার্দন সামন্ত। এক সময়ে গুণ্ডাগিরি, রাজনীতি করেছেন। এখন সখা-সখী ট্যুর অ্যাণ্ড ট্র‍্যাভেলস চালান।

জনার্দন লাল চোখে তাকালো ছেলের দিকে। চৈত্র সংক্রান্তি নিরামিষ। তাই আঙুরের রস সারারাত বেশি পেটে পড়েছে। এখন মাথায় এক্কাদোক্কা খেলছে। লালটুর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করলেন একে কোথায় দেখেছি। খানিকবাদে মনে হল পাড়ার ছেলে হবে। ছেলেটা কী যেন চাইছে।

কী চাই তোমার?

বাবা আইফোন। ফিফটিন। দু লাখে হয়ে যাবে।

দু লাখ!

জনাদর্নের হিসি পেল। হাই উঠল। রান্নাঘর থেকে কে যেন বলল, দাও না, অ্যাদ্দিন ধরে ছেলেটা চাইছে….

এ গলাটাও চেনা চেনা….. কিন্তু কার?

ছেলেটা বাবার পাশে বসে। জনার্দনের হাতটা টিপে দিচ্ছে। সুপ্রিয়া এসে ছেলেকে কফি আর অমলেট দিয়ে গেল। জনার্দনের দুজনকেই চেনা লাগল। কিন্তু এরা এ বাড়িতে কী করছে?

জনার্দন বলল, আই ফোন…. দু লাখ? আচ্ছা যাও নিয়ে নাও…..

কিন্তু টাকা? ছেলে বলল।

ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল জনার্দন, তুমি কিনবে আমি কেন টাকা দেব? আমি কে তোমার?

ছেলে বলল, মানে তুমি আমার বাপ, তুমি টাকা দেবে না! তো কে দেবে!

জনার্দনের বাপ কথাটায় ধাক্কা লাগল বুকে। হঠাৎ করে নিজের বিয়ে থেকে সব মনে পড়ে যেতে লাগল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল জনার্দন। তাই তো! সে তো বিবাহিত! কিন্তু তাই বলে মালতী?

মালতী ট্যুরের সঙ্গে যায়। রান্না করে। মালতীর অনেক গুণ। জনার্দন জানে। মালতীর জন্য কান্না পেল। আমাকে দু দণ্ড শান্তি দিয়েছিল মালতীর….. মালতীর…. কী যেন? মনে পড়ছে না!

আই ফোন! আই ফোন!

হঠাৎ লুঙ্গির গিঁট খুলতে শুরু করল জনার্দন।

লালটু তাড়াতাড়ি উঠে বাড়ির বাইরে গিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল…. যাওয়ার আগে হাঁক দিয়ে গেল…. মা… বাবা…. আবার…..

সুপ্রিয়া বসার ঘরে এসে তাড়াতাড়ি পর্দা টেনে দিল। আবার রান্নাঘরে গেল। যেতে যেতে দেখল জনার্দন দিগম্বর হয়ে নাচছে আর গাইছে…. মম চিত্তে ওরা নাচে তা তা থৈ থৈ… দে দে মাল কৈ… দে দে মাল কৈ…..

======

বিকেল হয়েছে। লালটু পুরোহিতকে বলল, তোমার আর বিরিয়ানি হল না…. ভেবেছিলাম মটন বিরিয়ানি খাওয়াব…..

পুরোহিত বলল, মা আমাকে বলেছেন, তোর সময় হয়নি রে এখনও…. আমারও হয়নি….. তুই মন খারাপ করিস না…. আজ রাতে আয়…. ভাই এসেছে…. বিদেশী মাল এনেছে…. গলায় দিবি অমৃত……

হবে না গো। আজ পাড়ায় কুইজ করাতে হবে। তারপর জানুর বাড়ি যাব। ওর ঠাকুমা আর ও আছে। ওর বাবা মা তারাপীঠ গেছে। আমার একটা কর্তব্য আছে না?

পুরোহিত জিভ কেটে বলল, ছি ছি… মায়ের সামনে…..

লালটু বলল, সেকি! মাকেই তো সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি আমরা…. এই এখানেই…..

পুরোহিত চোখ কপালে তুলে বলল, কবে?

আরে সেই আমি আর ও এলাম না… বললাম ওর পরীক্ষা আছে… তুমি আমাকে ওকে ফুল দিলে…. ওতেই কাজ সেরে নিলাম…..

অ্যাঁ!!! ওই জন্যে… ওই জন্যে মা তোতে বিমুখ… তাই আইফোন তোতে বিমুখ….

পুরোহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল, এদের পরিবারের ঠকানোটা রক্তে আছে।

আসলে পুরোহিত, মানে জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যর বাবা ঠাকুর্দার জমিও ঠকিয়ে কিনেছে ওই জনার্দন….. শালা….

লালটু বলল, তবে?

জ্যোতির্ময় দেখল এই সুযোগ। বলল, তবে আর কী, আজই মা বাবাকে সবটা বলে নিজেকে পাপ মুক্ত করো। যাও আজই…. আজই… আমি এই পুজোয় বসলাম…. দেখি মা কীভাবে না শোনে…..

======

রাত হয়েছে। জনার্দন এসেছে মন্দিরে। মায়ের পায়ে কেঁদে বলল, মা! শেষে চুষীর মেয়ে আমার বাড়ির বউ হবে! হায় হায়! একি! অনেক পাপ করেছি… তাই বলে ওই ছেনালী মাগীটার….. আর এও তো জানি না মা…. ওরা দুজন ভাইবোন কিনা….. আমার নিজের উপর কোনদিন আর নিয়ন্ত্রণ ছিল মা!

জনার্দন কাঁদতে কাঁদতেই শুনল পাশের দরজাটা খুলল। আর হঠাৎ পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো জ্যোতির্ময়! এসেই হেসে বলল, আরে জেঠু…. এত রাতে? মানত ছিল বুঝি?

জনার্দনের মুখ শুকিয়ে সাদা। বলল, তুই এত রাতে?

পুরোহিত বলল, আজ্ঞে জেঠু মাকে শয়ন দেব না?

জনার্দনের কপালে কুলকুল ঘাম। বলল, কী চাস? মুখ বন্ধ রাখতে?

জ্যোতির্ময় হাত কচলে বলল, তোমার ছেলেটাকে একটা আইফোন কিনে দিলেই হবে।

জনার্দন ভুরু কুঁচকে বলল, মানে?

জনার্দনকে প্রণাম করে পুরোহিত বলল, শুভ নওয়র্ষ জেঠু।

জনার্দন চলে গেল। জ্যোতির্ময় লালটুকে ফোন করে বলল, ভাই, মা শুনেছেন।

লালটু বলল, বাবা বিয়েতে রাজী অতটা না… মায়ের আপত্তি নেই….

জ্যোতির্ময় বলল, বাবা ফোনেও রাজী, মেয়েতেও রাজী… তুমি কাল সকালে দেখা কোরো। কথা আছে। আর বাবাকে বোলো জ্যোতির্ময়দা প্রণাম জানিয়েছে। শুভ নওয়র্ষ।

এরপরের গল্পটা সোজা। লালটু পড়াশোনার পাট চুকালো বিয়ের পর। শাশুড়ির সঙ্গে দুটো মাসাজ পার্লার খুলল। বাবাও ব্যবসা গুটিয়ে এদিকেই থাকে। ওদিকে জ্যোতির্ময় রাতারাতি পুরোহিত থেকে জ্যোতিষী হয়ে উঠল। বাড়ি গাড়ি হল। হাড়ে মাংস গজালো। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলে, আমরা সবই মায়ের বলি ভাই…. খাইয়েদাইয়ে বড় করছেন… কখন কোপ মারেন তিনিই জানেন…. সবই মায়ের ইচ্ছা……