Skip to main content
tiger

পকাদা ঘুমের মধ্যেই নাকে একটা বোঁটকা গন্ধ পেল। লঞ্চটা অল্প অল্প দুলছে, ঘুমটা দারুণ হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ গন্ধ কোত্থেকে এলো? পকাদার চোখ খুলে মনে হল সামনের বেডে কেউ একটা শুয়ে। চশমাটা চোখে দিয়েই আঁতকে উঠল পকাদা, একটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। পকাদা'র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, গুড মর্নিং।


পকাদা কি ঘটছে বুঝতে না পেরে বলল, গুড মর্নিং।

বাঘটা বলল, ঘুম কেমন হল?

পকাদা বলল, ভালো।

- সুন্দরবন এই প্রথম?

- হ্যাঁ

- হিসি-হাগু কিছু করার আছে?

- কেন?

- না, তাহলে আমি খাব।

- কি?

- কি না, কাকে? আপনাকে?

- মানে?

- হুম্... এটাই তো চুক্তি হয়েছে।

- কার সঙ্গে?

- বনদপ্তরের সঙ্গে।

- কি চুক্তি?

- মাসে দশটা করে টুরিস্ট আমাদের প্রাপ্য। তবে তার বদলে আমরা আপনাদের এন্টারটেন করব।

- কিভাবে?

- আপনারা যখন লঞ্চের জানলা দিয়ে উঁকি দেবেন আমরা সপরিবারে পাড়ে এসে দাঁড়াব। বাচ্চারা ডিগবাজি খাবে। আমার বউ সামনের দুটো পা তুলে আমার গালে একটা চুমু খাবে।

- এতে কি হবে?

- আরো বেশি টুরিস্ট আসবে। বনদপ্তরের লাভ হবে।

- বেশ। কিন্তু আমাদের প্যাকেজে তো এটা ছিল না! মানে আমায় লঞ্চের মধ্যেই বাঘে খাবে।

- ছিল না? ভালো করে পড়েননি।

- মানে?

- নীচে ছোট্টো করে 'শর্তাবলী প্রযোজ্য' লেখা ছিল।

- কি লেখা ছিল?

- একজন কাউকে বাঘ পছন্দ করে নেবে। কাকে পছন্দ করবে সেটা বাঘের উপর নির্ভর করবে।

- আপনি আমাকেই বাছলেন?

- বাছলাম।

- বেশ। তা লঞ্চের বাকিরা কোথায়?

- আমার পরিবারের সঙ্গে জঙ্গলে বেড়াচ্ছে।

- মানে? কেউ যদি খেয়ে নেয়?

- কেউ খাবে না। আমরা চুক্তি ভঙ্গ করি না।

- বেশ। আপনি কি এখনই খাবেন? না আমার হাতে কিছুটা সময় আছে।

- সময় নিতে পারেন। আমাদের হাতে দেড় ঘন্টা আছে। ছাদে যাবেন?

- ছাদে কেন?

- এই শীতের আমেজে বেশ রোদে বসে আপনাকে টুকটুক করে খাব। মজা লাগবে।

- মজা লাগবে? এত নিষ্ঠুর আপনি?

- পাঁঠা, মুরগীগুলোও একই কথা বলে।

- বুঝেছি।

- পায়খানা করবেন?

- না।

- তবে ছাদে চলুন।

- চলুন।

- আমি ঘাড় ধরে নিয়ে যাব?

- কেন?

- না, তবে বেশ একটা শিকার ধরে নিয়ে যাচ্ছি ফিলিংস আসবে।

- আমার ভয় লাগছে।

- কিচ্ছু ভয় নেই। এমন ধারালো দাঁত আমার, তাছাড়া মানুষের মাংস ছাড়ানো আমাদের কাছে একটা শিল্প।

- মানে?

- মানে আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনাকে কখন খেয়ে ফেললাম। আমার ঢেকুর শুনে বুঝবেন।

- মানে! আমি তো তখন মরেই যাব।

- সে তো শরীরটা। গীতাটা পড়িসনি রে পাগলা? ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।

- বাবা, আবার গীতাও জানেন!

- জানি। কোরাণ, বাইবেল, জেন্দাবেস্তা সব জানি। মায় দাস ক্যাপিটালও জানি।

- দাস ক্যাপিটাল?

- আর বলবেন না.. একবার এক কমরেডকে খেতে যাব, আমার প্রথা অনুযায়ী জিজ্ঞাসা করেছি শেষ ইচ্ছা কি? বলে দাস ক্যাপিটাল শুনব। আমি তো ওসব জানি না। শেষে আমার শালা এসে আমার মুখরক্ষা করল। অনেকদিন চীনে ছিল তো ওর ওসব একেবারে মুখস্থ। তো সেই কমরেডের কি কান্না শুনতে শুনতে! 'হরে লেনিন, হরে মার্ক্স' বলতে বলতে নিজেই মাথাটা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিল।

- কি কাণ্ড!

- সে ওদের নাকি অভ্যাস, আমার শালা বলল। ভীষণ ডিসিপ্লিন্ড হয় ওরা।

- আচ্ছা।

- তবে ঘেঁটিটা ধরি?

- ধরুন।

বাঘটা এগিয়ে আসছে। পকাদার সিটটা ভিজে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে। কিন্তু থামাবে কে?

হঠাৎ বাঘের মুখটা রমিলার মত হয়ে যাচ্ছে। গলার আওয়াজটাও।


"এই শোনো, তুমি তাড়াতাড়ি উঠে টয়লেটে যাও... আবার বিছানায়... একে নিয়ে আমি যে কি করি…."


[ছবি Suman]