Skip to main content
 
 
       গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির শেষ ধাপটা না দেখতে পেয়ে উঠে যাচ্ছিল লোকটা। একজন বলল, জোয়ারের পর দেখা যাবে, ভাটায়। লোকটা বলল, বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করার কিছু নেই সে জানে। সে এও জানে, যে বলল সে কোনোদিন ভাটায় নদীর পাড় দেখেনি। বিশ্বাস করে শুধু।
       রাতে ভাটার সময় নদীর পাড়ে এলো। তখন অনেক রাত। আধখানা চাঁদ আধকাটা তরমুজের মত আকাশের একদিকে হেলায় পড়ে। তারাগুলো আজ যেন বড় অবিন্যস্ত। লোকটা দেখল, জল নেমে কদ্দূর চলে গেছে। নদীর পাড়ের মাটিটা চাঁদের আলোয় ঝিকমিক করছে। ওই তো সিঁড়ির শেষ ধাপটা। এক পা, এক পা করে নামল। শেষ ধাপটায় দাঁড়াল। দূরে কি ওটা নৌকা?
 
       নৌকাটা পাড়ে এসে ভিড়ল। একজন কেউ নৌকা থেকে বলল, তুমি এসে গেছ? লোকটা বলল, হ্যাঁ, এই তো। 
       সে বলল, তুমি হেঁটে আসবে, না আমি জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করব?
 
       লোকটা কি ভাবল। তারপর ভেবে বলল, না না, আমিই আসছি।
       নৌকা থেকে গলা ভেসে এল, বলল, দেখো, পায়ে যেন কাদা না লাগে।
       লোকটা বলল, তবে আমি আসব কি করে?
       নৌকা থেকে কোনো উত্তর এলো না। চাঁদটা তখন মধ্যগগনে। আধখাওয়া তরমুজের মত চাঁদ। লোকটা সিঁড়ির শেষ ধাপে। জোয়ারের অপেক্ষায়। সে চায় না জোয়ার আসুক, সিঁড়িটা ডুবে যাক আর সে ভেজা পায়ে নৌকায় উঠুক। কিন্তু কাদা এড়িয়ে হাঁটবে কি করে? যদিও সে এতদিন ভেবে এসেছে তার সারা জীবন শুকনো পা, কাদা ছাড়া পা।
       সে বলল, তুমি ফিরে যাও। আমি অন্য কোনোদিন যাব, অন্যঘাট থেকে, যেখানে জোয়ার নেই, কাদাও নেই। সে জানে নেই এরকম কোনো ঘাট। তবু বিশ্বাস করল।
 
       লোকটা কোনোদিন আর কোথাও যায়নি।