বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। পুরোহিত সন্ধ্যারতি শেষ করে দরজায় হেলান দিয়ে বসল। কেউ নেই মন্দিরে আজ। এত বৃষ্টি সেই বিকাল থেকে, কে আসবে?
পঞ্চপ্রদীপের মাঝের কর্পূরটা নিভে গেছে। বাদল বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে জ্বলন্ত বাকি চারটে শিখা। পুরোহিত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই দিকে। দেবতাও। যেন এখনি নিভে যাবে।
আজ কেউ আরতির আশিস নিতে এল না। পুরোহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বাইরে বিদ্যুৎ চমকালো খুব জোরে। দরজা দিয়ে সে আলো ছিটকে এসে পড়ল দেবতার মুখে। পুরোহিত বিস্মিত হয়ে তাকালো,কে ইনি, বছরের পর বছর এমন নীরব দাঁড়িয়ে বেদীর উপর? প্রদীপের আরেকটি শিখা নিবে গেল।
তিনটে শিখায় পুরোহিতের ছায়াকে বিশাল করে দেখাচ্ছে নাট মন্দিরের দেওয়ালে। পুরোহিত বলল, এতবড় ছায়া! কে আমি? আরেকটা শিখা গেল নিভে। দুটো শিখা থরথর করে কাঁপছে ঝোড়ো হাওয়ায়।
একটা সাপ ঢুকল মন্দিরের নালা দিয়ে। পুরোহিত দেখল। বিষাক্ত সাপ। দেবতার দিকে এগোচ্ছে। দেবতার শরীরের উপর উঠছে ধীরে ধীরে। আরেকটা শিখা আচমকা গেল নিভে। শেষ শিখাটা ম্লান হয়ে জ্বলছে থিরথির করে।
একটা ব্যাঙ লাফ দিয়ে পুরোহিতের পা ডিঙিয়ে ঢুকল মন্দিরে। পুরোহিত চমকে উঠল। শেষ শিখাটা নেভার আগেই পুরোহিতের পায়ের ধাক্কায় প্রদীপ গেল ছিটকে। অন্ধকারে আওয়াজ হল - ঠং...ঠং...ঠং.....
আওয়াজটা মিলিয়ে গেল। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। একটা বাজ পড়ল জোরে কাছেপিঠে কোথাও।
পুরোহিত মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিলো। সকালের আলো ফুটুক, সে ফিরবে।