সৌরভ ভট্টাচার্য
9 February 2019
সংস্কৃতি আর ধর্মের মধ্যে পার্থক্যটা খুব সুক্ষ্ম। উৎসব আর ধর্মের মধ্যেও। সরকারি স্কুলে সরস্বতীপূজো, সরকারি কারখানায় বিশ্বকর্মাপূজো, থানায় কালীপূজো - এগুলো কি সত্যিই এতটাই নির্দোষ? আমার মনে হয় না। একটা সেক্যুলার দেশ যখন এগুলোতে সম্মতি জানায় তখন কোথাও একটা কপটতাই মনে হয়। সেক্যুলার মানে কিন্তু ধর্মের সাথে সম্পর্কহীনতা, 'সবধর্ম এক' ধুয়ো তোলা না। কারণ শেষ কথাটা বাস্তব জগতে যে কি সাংঘাতিক মিথ্যা কথা তা চোখ কান খোলা রাখলেই টের পাওয়া যায়।
আমার টোলে আমি বহুকাল হল সরস্বতীপূজো করি না। কারণ সব ধর্মের মানুষ আমার ছাত্রছাত্রীরা। যতই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দোহাই দিই না কেন, আমার মনে হয় অমন অসম্ভব কাজে জীবনীশক্তি খরচ না করে সেই শক্তিটা আরো অনেক যুক্তিযুক্ত সৃষ্টিশীল কাজে ব্যয়িত হলে ভালো হয়। যে দেশগুলোতে কোনোদিন সরস্বতীপূজো হয় না, কিন্তু যে দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ করে, আহাউহু করে দিন কাটাতে হয়, সেই দেশের জ্ঞানচর্চার উন্নতির দিকে তাকালেই যুক্তিটা স্পষ্ট হবে। আর কিছু না, বিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের দিকে তাকালেও হবে। অবশ্যি শুধু বিজ্ঞানই বা বলি কি করে!
যেটা দরকার সেটা হল শিক্ষালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কারণগুলোকেই দূরে সরিয়ে মেধাগুলোর সঠিক দিশা নির্বাচন আর তাদের উন্নতি, সফলতা, বাস্তবায়নের দিকে ভাবনা চিন্তা, পরীক্ষানিরীক্ষা আরো বেশি করে হওয়া। যে যেদিকে গেলে বেশি সার্থক হবে তাকে সেদিকে নিয়ে যাওয়াতে আরো বেশি উৎসাহিত করা। হবে কি? হবে না। ওসব নিয়ে ভাববার অবকাশ কই আমাদের? যা কিছু হয় মহাপুরুষ নির্ভর নয় সরকার নির্ভর, আর কপাল সেরকম হলে সাদা চামড়া নির্ভর। আমরা? উঁহু, কৃষ্টি রক্ষা করতে হবে যে!
আর রইল বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে, সে না হয় দোলের দিন রইলই। রঙ থাকুক, রঙীন হওয়ার মনও থাকুক। কিন্তু অন্ধকারে কি আর রঙ চেনা যায়? তাই খাঁটি প্রাকৃতিক, সার্বজনীন, বৈচিত্রময়, মৌলিক জ্ঞানান্বেষণের পথও খুলুক।