'সমাজ' অর্থে দুটো শব্দ হয়। এক, ইংরাজি মতে সোসাইটি শব্দটার উৎপত্তি ‘কম্প্যানিয়ন’ এই অর্থ থেকে; আরেক ভারতীয়, সহগমন অর্থে। কিন্তু উৎপত্তিগত পার্থক্য থাকলেও সমাজের নিজস্ব ভাবধারায় পার্থক্য বিস্তর। ভারতে হিন্দু সমাজ, মুসলিম সমাজ, শিখ সমাজ, অল্পবিস্তর বৌদ্ধ সমাজ, জৈন সমাজ ইত্যাদি নানা সমাজের একটা জটিল বৈচিত্রময় রূপ এই ভারতীয় সমাজ। তার প্রধান অংশ অবশ্যই হিন্দু সমাজ। ভারতের নবজাগরণ বলতে যখন রাজা রামমোহন রায়ের কথা আসে, তখন নিশ্চয় বুঝি যে, যে জাগরণের কথা বলা হচ্ছে তা মূলত হিন্দু সমাজের জাগরণের কথা। প্রাচীন উপনিষদের সূত্রের ভাষ্য যা সে সময়ে নতুন যুগের নতুন ভাবনায় এসেছিল রামমোহনের হাত ধরে। সতীদাহ প্রথার রদও অবশ্যই হিন্দু সমাজের একটা অন্ধকারময়, অমানবিক প্রথার রদের কথাই ছিল। এরপর যারা সেই জাগরণের শিখা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য আমাদের বঙ্গ থেকে বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ।
আমি কি তাদের অবদান নিয়ে স্কুলের রচনা লিখতে বসলাম? অবশ্যই নয়। আমি তাদের কাজ করার একটা সূত্রকে নিয়ে আলোচনা করার জন্য লিখতে বসলাম। কাল যে মহাপুরুষের জন্মদিন, তিনি শেষজীবনে যদিও তাঁর বাংলা তথা সমস্ত তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন – হ্যাঁ, আমি বিদ্যাসাগরের কথাই বলছি।
সমাজকে দু'ভাবে সংস্কার করা যায়। এক, তাকে বুঝে, তার ভিতরে প্রবেশ করে; দুই, তার বাইরে গিয়ে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে – এটা ঠিক নয়, ওটা ঠিক নয় ইত্যাদির মাধ্যমে। আমাদের সৌভাগ্য ছিল যে আমাদের সে সময়ের সংস্কারকেরা কেউ বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে – 'তোমাদের সব ভুল' বলে চীৎকার করে আমাদের শুধরাতে চাননি। যেটা হয়েছিল আফগানিস্থানে, যার খেসারত আজ সারা পৃথিবী দিচ্ছে পরোক্ষভাবে। সেইদিন কম্যুনিস্ট শাসকেরা ভেবেছিলেন আফগানিস্থান থেকে ইসলাম ধর্মকে মুছে ফেলে দিলেই আফগানিস্থান বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক সভ্যতার মত হয়ে উঠবে। মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা, নারী-পুরুষের সমান অধিকার তারা নিয়ে এল। কিন্তু হঠাৎ করে বড় তাড়াতাড়ি নিয়ে আসতে গেল। শুধু তাই নয়, মোল্লাদের উপর শুরু হল অত্যাচার। যে করেই হোক, ধর্মটাকে আফগানিস্থানের মাটি থেকে সরাতেই হবে, এরকম একটা উদ্দেশ্য পাগলের মত পেয়ে বসেছিল সেদিনের কম্যুনিস্ট শাসক দলের মগজে। নিজেদের শক্তি, নিজেদের ভাবনাচিন্তার বিরুদ্ধে যে কিছু থাকতে পারে সে তাদের ভাবনার বিরুদ্ধে ছিল। অবশ্য সে ছবি আজও চীন আর রাশিয়ার দিকে তাকালে বোঝা যায় সেদিনের কম্যুনিস্ট দল কি চেয়েছিল। কিন্তু যে ভুলটা একশো বছর আগে ব্রিটিশরা করেছিল, একজন আফগান রাজাও করেছিল, সেদিনের কম্যুনিস্ট দলও একই ভুল করল – আফগানিস্থানের মাটির ধর্মকে তারা বুঝল না, আফগানিস্থানের জাতীয় চরিত্রকে দুর্বল মনে করল। ফলে শুরু হল – জেহাদ।
বলা হয় আমেরিকা নাকি এই জেহাদিদের তৈরি করেছিল। এ অর্ধসত্য। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় সেকেন্ডারি ইনফেকশান, বা গৌণ সংক্রমণ। বিষটা ঢেলেছিল কম্যুনিস্ট পার্টির ঔদ্ধত্য। হাজার হাজার মানুষ যে কারণে শরণার্থী হল পাকিস্তানে। সেই প্রবল প্রতিবাদ যখন মাথা চাড়া দিল তখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে গিয়েছিল আমেরিকা। অবশ্যই সেই বিদ্বেষের হাত শক্ত করতে তার ভূমিকা ছিল, কিন্তু বিদ্বেষের আগুন জ্বালাতে নয়। যদি আমেরিকা সাহায্য না করত, তবে সব শায়েস্তা হয়ে যেত... এ ধারণা যারা পোষণ করেন হয় তারা আফগানিস্থানের ইতিহাস জানেন না, নয় তো এখনও মোহ ভাঙেনি বলতে হবে। তবে সে লড়াইটা ধীরে ধীরে আমেরিকা বনাম রাশিয়া হয়ে উঠছিল, মধ্যে আফগানিস্থান নিমিত্তমাত্র। কিন্তু তা হল না। ততদিনে আরেক বিধ্বংসী শক্তি জন্ম নিয়ে নিয়েছে, তারা ঘোষণা করছে তাদের না চাই আমেরিকা, না রাশিয়া, তারা আফগানিস্থানে প্রতিষ্ঠা করবে ইসলামিক রাষ্ট্র। তবে এখন যে শুধু আফগানিস্থান নয় সে আর বলাই বাহুল্য। সারা পৃথিবীতে শুরু হল এক তাণ্ডব, সে কবে শেষ হবে আমরা কেউ জানি না, তার সাথে সাথে মাথা চাড়া দিচ্ছে আরেক প্রতিক্রিয়া – মুসলিম বিদ্বেষ। আর আফগানিস্থান একটা আগ্রাসী প্রবল শক্তিকে প্রতিহত করতে গিয়ে আরেকটা প্রবল আগ্রাসী শক্তির হাতে এখন। তবু তাকে সে স্বীকার করে নিয়েছে – ঘরের লোক ভেবে। যদিও সে শক্তিও কালের নিয়মে দুর্বল হবে, যেদিন বন্দুকের শক্তির থেকে স্বাভাবিক নীতির শক্তিতে আস্থা জন্মাতে শুরু করবে, যেটা পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদীদের লোভে ধুলিসাৎ হয়ে পড়েছে। শুধু চোরাপথে আফিম বেচেই বা আর কতদিন একটা দেশের অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে?
সেদিনের ভারতের সংস্কারকগণ ভারতকে আধুনিক করতে কোনো পাশ্চাত্য তত্ত্বের আমদানি করার প্রয়োজনবোধ করলেন না। উদারনীতির সূত্রগুলো প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ মন্থন করেই তারা আনলেন। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার অদ্ভুত মিলন ছিল, কিন্তু কাজের বেলায় কোনো বিদেশী সাহেব অমুক বলেছেন বলে আমাদের তেমন হতে হবে, এ মূর্খামি তারা করেননি। তারা কাজ করেছিলেন। ভারতের মনীষার অতল তলে গিয়ে মণিমুক্তা কুড়িয়ে আনার ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। প্রদীপটা আবার ধুয়েমুছে জ্বালাবার প্রয়াস পেয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশ থেকে ঝাড়লন্ঠন এনে বোঝাতে চাননি যে তোমাদের আসলে এককালে কিছু ছিল, কিন্তু বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে ও সব ফেলে এই পাশ্চাত্যের লণ্ঠন জ্বালো। বলেননি সেই কথা। তাই আমরা বেঁচে গেলাম। তাদের কাজের অনেক খুঁত আজকে বসে বসে বার করা কিছু অসম্ভব নয়, কিন্তু মনে রাখতে হবে তাঁরা কাজ করেছিলেন; শুধু ভাষণ দিয়ে, বা কয়েকটা বিদেশী আন্তর্জাতিক তত্ত্ব আউড়িয়ে ক্ষান্ত দেননি। সব চাইতে কঠিন যে কাজটা তাঁরা করেছিলেন – মানুষ গড়া। দল গড়া নয়। দ্বিতীয় কাজটা সোজা। তার ফল হাতেনাতে পাওয়াও যায়। কিন্তু প্রথম কাজটা ভীষণ পরিশ্রমের। অনেক আত্মত্যাগের। আর তার ফলও হাতেনাতে পাওয়া যায় না। হয় তো নিজের জীবনেও নয়। তারা আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মোহে কাজ করতেন না, ফলে কতজন হল দলে – এই প্রশ্ন অর্থহীন ছিল তাদের কাছে। কাজটা কতটা সত্য হল সেই ছিল তাদের পণ। তাদের বিশ্বাস ছিল কাজটা সত্য হলে তার ফল আজ না হয় কাল ফলবেই – সত্যমেব জয়তে, নানৃতং – সত্যেরই জয় হয়, মিথ্যার নয়; ট্রুথ প্রিভেলস।
সে সংস্কারের মূলে একটা ভাব ছিল – দরদ। কৌশল নয়। দরদী মানুষ দেখে সত্যকে। কৌশলী মানুষ দেখে ফ্যাক্টস, বা তথ্যকে। তাই যুদ্ধে সৈন্যের হিসাব লেখা থাকে, ঘোড়া-অস্ত্রশস্ত্রের হিসাব লেখা থাকে, কিন্তু সেই সৈন্যের অসহায়তা বোধের হিসাব লেখা থাকে না, তার বাড়ির বিধবা মহিলাটার কান্নার হিসাব পাওয়া যায় না, কারণ সে অব্জেক্টিভ সত্য নয়, সে সাব্জেক্টিভ সত্য; তা কৌশলী মানুষের কোনো কাজে আসে না। কিন্তু সমাজ মানে শুধু হিসাব না, হৃদয়ও।
তবে ভারতের সে জাগরণ কি সত্যিই রামমোহনের সময় থেকেই? এ কথা আমার মন মানতে চায় না। জাগরণ কথাটা চিত্তের সাথে সম্পৃক্ত। ভারতের চিত্তকে তুকারাম, কবীর, নানক, মীরা, চৈতন্য প্রমুখ সাধকেরা জাগায়নি? জাগিয়েছিল তো! নইলে “সবার উপরে মানুষ সত্য” এতবড় পদ কিসের জোরে বেরিয়েছিল চণ্ডীদাসের কলম থেকে? ভারতীয় সমাজের আত্মায় সেই জাগরণের বাণী বারবার এসেছে। জাগিয়েছে। তার অনেক দোষত্রুটি আছে, তার সমস্ত সমস্যার সমাধান অবশ্যই হয়ে যায়নি, কিন্তু তার সমাধানের পথ কোনোদিন তাকে তিরস্কার করে বাইরে থেকে বেরোবে না, তাকে গভীরে জেনে বেরোবে।
আজকে আবার এক নতুন সময়ের উন্মেষ দেখছি। কেউ কেউ ভারতকে তার বাণীতে খুঁজছে, আর কিছু মানুষ ভারতকে পাশ্চাত্যের ধর্মের পরাকাষ্ঠা অন্যান্য ধর্মের আদলে বানাতে চাইছে। যেন একটা ভ্যাটিকান সিটি থাকবে, যেন একটা মক্কা থাকবে। কিন্তু হিন্দুধর্মে সেরকম কোনো একদেশি মতবাদ কবে ছিল? এক দেশ, এক নীতি – এই বিরোধ তো আদিকাল থেকেই, তার একটা সংগৃহীত রূপ হয় কুরুক্ষেত্রের আঙিনায়। সেখানে কৃষ্ণ বলছেন, নানা স্বভাব অনুযায়ী, নানা প্রবৃত্তি অনুযায়ী নানা মানুষের বৈচিত্রের কথা। প্রত্যেকে যে যার সীমার মধ্যে থাকবে, অন্যকে নিজের সীমানায় আনার চেষ্টা করবে না। গীতা ধমকানি দিচ্ছেন – কেউ কারোর বুদ্ধিভেদ জন্মাবে না, তুমি বলার কে যে তোমার মতই শ্রেষ্ঠ?
শুধু তাই বলছেন না, বলছেন, তোমার আচরিত ধর্ম যদি অন্যের থেকে নিকৃষ্টও হয়, তবু তুমি অন্যের ধর্মে পারঙ্গম হওয়ার চাইতে নিজের ধর্ম আচরণে মৃত্যুবরণও করো, কারণ অন্যের পথ তোমার চলার পথ করতে গেলে তা হবে তোমার পক্ষে ভয়াবহ।
যে ধর্মকে খানিক আগে বলা হল গীতায় যে তার স্বল্পমাত্র আচরণে মহাভয় থেকে তা ত্রাণ করে থাকে, সেই ধর্ম সম্বন্ধেই আবার সাবধানবাণী উচ্চারিত হল তা যেন তোমার স্বভাব অনুযায়ী হয়, নইলে তা ভয়াবহ।
গীতায় ‘স্বভাব’ শব্দটা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। কিন্তু সেই স্বভাবে কাম-ক্রোধ-লোভকে স্বীকার করা হয়নি। তাকে বলা হয়েছে বিকার, যা অজ্ঞানতাপ্রসূত। কিন্তু স্বভাব অনেক প্রকার তা বলা হয়েছে, এবং সে স্বভাব অনুযায়ী চলাকেই কর্তব্য --- এও স্থির করা হয়েছে। আজকে যাকে আমরা কেরিয়ার কাউন্সেলিং বলছি। রুচি অনুযায়ী কাজের জীবিকা নির্বাচনের কথা বলছি। স্বভাব অনুযায়ী তেমন কথাই বলা হয়েছে। যার কিছুটা মিল প্লেটোর রিপাবলিকেও কাজের বন্টনের সাথে মেলে। একই কথা, অধিকারের সীমা ছাড়িয়ে নিজের অহং-এর বিস্তারে না যাওয়া। নিজের রুচি অন্যের ঘাড়ে চাপানো কোনোদিন ভারতের সামাজিক আদর্শ ব্যবস্থা ছিল না। তা করতে যাওয়া আত্মহত্যারই সামিল।
রামকৃষ্ণদেব সম্বন্ধে নিবেদিতা বলছেন – অতীত ভারত যা ছিল তার মানুষী রূপ। আর বিবেকানন্দ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলছেন, ভবিষ্যৎ ভারত যা হবে তার রূপ। একই কথা প্রকারান্তরে রাধাকৃষ্ণান ও রাজাগোপালাচারীর কথাতেও আছে। সেখানে অবশ্য সারদাদেবীর উল্লেখ আছে। এদের কারোর জীবনেই অন্যের উপর নিজের রুচি চাপিয়ে দেওয়ার কথা নেই। আমার মঙ্গলের পথের সাথে তোমার মঙ্গলের পথ আলাদা হতেই পারে। “যার পেটে যা সয়। মা বাড়িতে মাছ এনেছেন। কাউকে কালিয়া, কাউকে ঝোল, কাউকে ভাজা করে দিলেন তাই”। এ রামকৃষ্ণের কথা। এ সম্পর্কে রামকৃষ্ণের বাণীর উল্লেখ করলে এই লেখার কলেবরই বাড়বে শুধু। বিবেকানন্দ বলেছেন, আমার পক্ষে যা অমৃত, তোমার পক্ষে তা বিষও হতে পারে। আসলে এই হল ভারতের আত্মার বাণী – এক সত্য, তার প্রকাশ নানা। গীতা বলেন, মানুষ নানা মতে, নানা ভাবে এক সত্যেরই অনুসরণ করে থাকে।
ভারতের বাণীকে খুঁজতে গেলে তার আধ্যাত্মিক সত্যকে নানা বৈচিত্রের মধ্যে খুঁজতে হবে। ভারতের আধ্যাত্মিক সত্যকে যদি মঠে-মন্দিরে খুঁজতে হয়, সেও ব্যর্থ হবে। ভারতের আত্মার সত্য তার সামাজিক জীবনে। তার নিত্য জীবনযাত্রাকে খেয়াল করলে পাওয়া যাবে। তার বাউলের গানে, ফকিরের গানে পাওয়া যাবে। গ্রামে গ্রামে ঘুরলে সে সত্যের সহজ প্রকাশ পাওয়া যাবে। যাদের রাম-কৃষ্ণ-শিব ঘরের মানুষ হয়ে গেছে। তাদের আলাদা ঘর হয়, মন্দির না, যাকে বলে 'ঠাকুর ঘর'। তাদের অস্তিত্ব তাদের গানে, যাত্রায়, জন্ম-মৃত্যুর সমস্তটা জুড়ে। তার সমাজকে ভালো করে দেখলে দেখা যাবে কি এক সূত্রে আসমুদ্রহিমাচল বাঁধা। সে সূত্রের মুক্তো একটা নয়, নানা। তাকে একটা মুক্তোতে বেঁধে দিলে সে তার শ্রী হারায়। এ ভুল আশা করি আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝব, আমাদের তত তাড়াতাড়ি মঙ্গল।
কেউ কেউ মনে করেন, বৈচিত্রতায় দেশের মধ্যে দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সব মিলে একটা জায়গায়, একটা নীতিতে বেঁধে দিলে দেশের ঐক্যকে মজবুত করা যায়। কথাটা শুনতে যুক্তিযুক্ত – কিন্তু তা আপাতভাবে। ভারতীয় সমাজে ভাবের একদর করাটা কোনোদিন টেকেনি। ইতিহাস শিক্ষা দেয়। একের ভাবকে বড় করে, অন্যের ভাবকে খাটো করলে ভবিষ্যতের অশান্তির বীজ পোঁতাটাই হয় কেবল। কারণ প্রকৃতিকে ভালো করলে খেয়াল করলে দেখা যায়, সে কোনোদিন একের আধিপত্য বেশিদিন মেনে নেয়নি। বৈচিত্রতায় দেশ দুর্বল হয় না, দেশ দুর্বল হয় সংহতি নষ্ট হলে। একে অন্যের প্রতিস্পর্ধী হলে। প্রতিস্পর্ধা লোভ জন্ম দেয়। আর সে লোভ যদি রাষ্ট্রশক্তির মদতপুষ্ট হয় তবে তা আরো দুর্ভাগ্যের। আমাদের কারোর সাথে কোনো অন্ধ প্রতিযোগিতায় আমাদের নামতে হবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটা ধর্মের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় আর প্রতিটা ধর্মের সাধারণ মৌলিক নীতিমালাগুলোকে যুক্ত করলে ছোটোবেলা থেকেই একটা স্পষ্ট ধারণা জন্মায় ধর্ম ও তার স্থান নিয়ে। ধর্ম একটা শক্তি। সমাজকে যুক্ত রাখার একটা বাঁধন। প্রাচীন ধর্মের জায়গায় নতুন ধর্ম আসবে। কিন্তু ধর্ম প্রকারান্তরে থেকেই যাবে। তাই সে সম্বন্ধে সম্যক ধারণার বিকাশ ঘটানো আশু দরকার। অন্তত ভারতীয় সমাজকে বোঝার জন্য তা অত্যাবশ্যক। ছদ্ম সেক্যুলার খেলাটা বন্ধ না হলেই নয়। সেই ফাঁকে বেনোজল ঢুকছে। সত্যিকারের জ্ঞান-বোধ অপপ্রয়োগের হাত থেকে বাঁচায়। নিজের জায়গার, নিজের স্বভাবে, নিজের সত্যকারের ধর্মে স্থির থাকলেই যা আসুরি শক্তি তার বিরাম হবে। নিজের সুস্থতাকে নিজের স্বাস্থ্যেই রক্ষা করতে হবে, বাইরে থেকে কৃত্রিম অনুপানে নয়। সেইভাবে শরীরকে বাঁচানো যায়, আত্মাকে নয়।