Skip to main content
শঙ্করদা

ফেসবুকে পরিচয় হয় তো কত মানুষের সাথে। 'ভারচুয়াল' শব্দটা এই ফেসবুকের দৌলতেই বুঝতে শিখলাম। তবে কতিপয় মানুষের সাথে আলাপের তাগিদ, বৈদ্যুতিন মাধ্যমের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেখা শোনা ছোঁয়ার জগতে এসে পড়ে। Sankarদা এমনই মানুষের মধ্যে পড়েন।
আজ আমার পরম সৌভাগ্য, অবশ্য শুধু আমার না ‘আমাদের’ বলা চলে, শঙ্করদা আমাদের বাড়িতে পদধূলি দিলেন। শঙ্করদার অভিজ্ঞতার সীমা পরিসীমা পাওয়া ভার। অভিজ্ঞতা তো কত মানুষের হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতাকে উপলব্ধির রঙে রাঙিয়ে নিয়ে যে অমূল্য সম্পদ উনি নিয়ে ফিরছেন, তা সত্যিই বিরল।


কেমন অভিজ্ঞতা? না সব তো বলা সম্ভব না। তবু কিছু বলি। শঙ্করদা কালকূটের ‘কোথায় পাব তারে’ পথের পথিক। ভারতের বহু সাধুসন্ত, তীর্থক্ষেত্র, কুম্ভমেলা ইত্যাদি পরিভ্রমণ করে বেড়িয়ে আসছেন সেই কবে থেকে। তৃষ্ণা পরতে পরতে বেড়ে চলেছে। অমৃত আস্বাদন কি আর নির্বাপিত হওয়ার?
একটা ঘটনা বলি। একবার ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়েছেন। এক দরিদ্র পরিবারের কুটিরে গিয়ে পথের সন্ধান চেয়েছেন। পেয়েছেনও। সাথে সাদর আন্তরিক আমন্ত্রণ, ‘এত দুপুরে কি না খেয়ে যাবেন বাবু? কি জানি আপনার শরীরেই রামজী এসেছেন কিনা?’
এ তো শুধু আমন্ত্রণ না, এ তো সাধনার ডাক, ভক্তির আলিঙ্গন। তাদের পাত থেকেই মিলল রুটি, ডাল। অতি সাধারণ। অমূল্য তবু। এ যে প্রভুর সাচ্চা প্রসাদ। নিরহংকারিত্বের প্রসাদ। কোনো এক গ্রামের কুটিরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন হয় তো, গ্রাম্যবধূটি ঘোমটা টেনে রুটি সেঁকছেন উঠানে বসে। তিনি হঠাৎ দেখলেন এক শিশু একটা পাত্রে দুটো রুটি আর একটু আলুর চোখা নিয়ে এসে বললে, 'মা পাঠালেন।' দু'চোখ ভিজে আসল। পরিচয়ের যে সৌজন্যতাটুকু শহরে না হলেই নয়, এই সহজ সরল জীবনযাত্রায় তা শুধুই বাহুল্যমাত্র।
এমন বহু সাধু সন্ত, সাধারণ মানুষের ভালবাসার স্মৃতিতে ভরপুর শঙ্করদার হৃদিকুম্ভ। সেখানেই চলছে এক মহাকুম্ভ মেলা। সেই কুম্ভে স্নান করে পবিত্র হলাম আমরা পরম সৌভাগ্যবান বন্ধু ক'জন আজ।
‘বাইরে যাওয়ার বহু সুযোগ এসেছে সৌরভ, এই মাটি ছেড়ে কোথায় যাব বলতে পারো?’ এ আবেগের অর্থ হিসাবের বহু উপরে। যেখানে মানুষ সফলতা খোঁজে না, সার্থকতা খোঁজে, সেখানেই দাঁড়িয়ে শঙ্করদা। আমাদেরও দাঁড় করালেন। অনেক অনেক ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানবেন দাদা। আপনার দীর্ঘ সুস্থ জীবনের জন্য সেই আদি পুরুষের পায়ে প্রার্থনা জানাই। আবার সাক্ষাতের আশায় রইলাম সক্কলে।


(ছবিঃ শুভজিৎ, জয়)