Skip to main content

বিয়ে হল। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মনে হতে শুরু করল, না, এ মানুষটা ঠিক আমার মনের মত মানুষ না। মানে আমি যেমন চাইছিলাম ঠিক তেমন না। 

    আবার এমন হতে পারে, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মনে হল, আমরা সংসারটা যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে হচ্ছে না। 


    আমি হঠাৎ এই বিষয় নিয়ে কেন লিখতে শুরু করলাম তার অবশ্যই কিছু কারণ তো থাকবেই। আমি দুটো ঘটনাই খুব কাছ থেকে দেখলাম। এও দেখলাম অনেক সমস্যার সমাধান সময়ের সঙ্গে, সুবিচার বিবেচনার সঙ্গে খুঁজলে পাওয়া যায়। খুব জটিল মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা থাকলে সে আমার বোঝার ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু সমাধান হয় না, এরকম সমস্যা হয় তো সত্যিই কম। 

    প্রথম ঘটনাটায় আসা যাক। দেখাশোনা করে বিয়ে হল। ছেলে ভালো চাকরি করে। মেয়ে এখনই কিছু করে না। আপাতত কিছু করার ভাবনা চিন্তাও নেই। বিয়ের পর পরই মনে হতে শুরু করল সব ঠিক হচ্ছে না। সমস্যাটা যেটা নিয়ে শুরু হল, সেটা হল আগের জীবন বনাম বর্তমানের জীবন। 

    ছেলেটার মনে হতে শুরু করল, সে যেন স্বাধীনতা হারাচ্ছে। তার আগের জীবনের অভ্যাসগুলোর সঙ্গে কোথাও যেন কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। কেন করব? মনের মধ্যে একটা বিরোধ তৈরি হতে শুরু করল। যে কাজগুলো আগে অনায়াসে হত, এখন সেগুলো জেদের সঙ্গে করা শুরু করল। বেশিক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে থাকা। বেশিক্ষণ বইপড়া, কি সিনেমা দেখা, কি খেলা দেখা, কি খেলতে যাওয়া। আসলে কোথাও একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস শুরু হচ্ছিল। মানুষের আইডেন্টিটি মানুষের নানা কাজের সঙ্গে গড়ে ওঠে। যেমন আমি যদি রোজ সকাল আটটায় জিমে যেতে অভ্যস্ত হয়ে থাকি, তবে কোনো একদিন না গেলে আমার অবশ্যই ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। সেটা যদি শরীর খারাপ বা ওয়েদার খারাপ বা জিম বন্ধ কোনো কার‍ণে এসবের জন্য হয় তবে সমস্যাটাকে জাস্টিফাই করতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যদি কারোর জন্য হয়, এবং যেখানে ইতিমধ্যে নিজেকে 'ট্র‍্যাপড' বলে মনে হতে শুরু করেছে, সেখানে আরো বেশি বেশি হয়। আমি স্যাক্রিফাইসটা কেন করব? এই কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরতে শুরু করে। 

    এখানে একটা কথা বলে নেওয়া যাক। আমাদের এই মাথার মধ্যে ঘোরা ব্যাপারটা অনেকটা চোরাবালির মত। যে চিন্তাটা আমার পক্ষে স্বাস্থ্যকর না বলে বুঝতে পারছি, সেই চিন্তাটাকে প্রশ্রয় দেওয়া অনেক সমস্যার মূল। সে কথায় পরে আসছি। ছেলেটার মনে হতে শুরু করল তার জীবনে আরেক মানুষ ইন্ট্রুডার হিসাবে ঢুকেছে। অনধিকার প্রবেশ। 

    শান্ত ছেলেটা ক্রমশ মেজাজ হারাতে শুরু করল। প্রথম প্রথম নিজের ভিতরে ভিতরে, তারপর খুঁটিনাটি অল্প অল্প ব্যাপারে। একটু রুড কথা বলা। একটু উপেক্ষা করে যাওয়া, এবং সেটা বুঝিয়ে দেওয়া। অপমান না করতে চাইলেও করে ফেলা। বাজে ব্যবহারের জন্য নিজের মধ্যেও অনুশোচনা হওয়া। আবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার জন্য নিজের উপর রাগ। নিজে মানিয়ে নিতে না পারার জন্য রাগ --- এগুলো সবই আনুষাঙ্গিকভাবে সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়। জটিলতা বাড়ে। 

    আমার মনে হয় এর কয়েকটা কারণ হয় তো ভাবা যেতে পারে। 

    আমাদের সমাজে মেল ইগো একটা বালাই। বেশ যত্ন করে লালন করে বড় করা হয়। ছোটোবেলা থেকে দেখতে শিখি যে মা আমার জন্য স্যাক্রিফাইস করছেন। বাবার জন্য করছেন। বাড়ির অতিথিদের জন্য করছেন। মা স্যাক্রিফাইস করে। বোন বা দিদি একটু বড় হলে সে স্যাক্রিফাইস করে। খুব সামান্য উদাহরণ, যেমন বাড়িতে লোক এলো, ভাই বোন দু'জনে বসে থাকলে বোনকে গিয়ে জলের গ্লাসটা এনে দিতে হবে। চা-টা করে আনতে হবে। এমনকি আপ্যায়নের অনেকটা দায়িত্ব নিতে হবে, ইচ্ছা না হলেও। এই কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, ইচ্ছা না হলেও। মানে ভাই বা দাদার যদি আঁকার ক্লাস থাকে, কি খেলা থাকে সে অনায়াসে উঠে যেতে পারে, কিন্তু বোন বা দিদি পারে না। 

    সব পরিবারে একই মাত্রায় না হলেও মোটামুটি এটাই আমাদের সামাজিক রীতি। এটা বাস্তব। এর ফলে যে মেল ইগো তৈরি হয়, সে জানে যে অ্যাডজাস্টমেন্টের প্রধান কথা হল মেয়ের। আমি আগেই বলেছি এই লেখাটা আমি এই জন্যে লিখছি যাতে ছোটোখাটো সমস্যাগুলো থেকে একটা রাস্তা পাওয়া যায়। ভীষণ জটিল মনস্তাত্বিক বা পারিবারিক সমস্যার আলোচনায় আমি যাচ্ছি না। 

    যখন ছেলেটার সমস্যার মূল উৎসটা খুঁজতে চাইলাম, আমার মনে হল প্রধান সমস্যাটা হচ্ছে মেল ইগোকে নিয়ে। ভালোবাসা বললেই যেমন জন্মে যায় না, তেমন ভালোবাসা একটা যত্নেরও জিনিস, এমনি এমনিও জন্মে যায় না। ভালোবাসা জন্মানোর জন্য নিজের কিছু ধারণার, অভ্যাসের পরিবর্তন দরকার হয়। 

    প্রথম কথা হল, মেল ইগো সহজে যায় না। তাকে সরাতে চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত। সবার আগে দরকার তাই নিজের ইগোটাকে বোঝা। নিজেকে ভালো করে দেখা যে কোথায় কোথায় আমি আনরিজিনবল ডমিনেট করতে চাইছি। আরো ভালোভাবে বললে, কোথায় কোথায় আমি অসংবেদনশীল হচ্ছি। সে প্রশ্নটা নিজেকে না করলে উত্তর পাওয়া যাবে না। যতক্ষণ না আমি নিজে নিজের সম্মুখীন হচ্ছি ততক্ষণ রাস্তা কিন্তু বেরোবে না। আমি যতই গোলগোল ঘুরি, যতই এড়িয়ে এড়িয়ে যাই, গায়ের জোরে সমাধানের রাস্তা খুঁজি, ততদিন হাল বেরোবে না। প্রথম কথাই নিজেকে বুঝে নিতে হবে কোনখানে আমি আমার ইগোর জন্য সংবেদনশীলতা হারাচ্ছি, আর যার জন্য নিজেকেও খারাপ লাগছে, নিজেকেও ছোটো লাগছে, তাও ছাড়তে পারছি না। 

    এরপর আসে ইগো ছাড়া রুচি আর ভাবনার পার্থক্যের জায়গা। আমরা যদি আমাদের চারদিকে তাকাই, আমাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার পরিজনের দিকে তাকাই, তবে দেখব প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ভাবনা আর রুচির পার্থক্য আছে। কিন্তু তাও আমার সেগুলো নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। কেন হয় না? কারণ দুটো, এক, তাদের নিয়ে আমার কোনো ইগোর সমস্যা নেই; দুই, তারা আমার দায় নয়। প্রথম বিষয়টা নিয়ে কথা তো বললাম, দ্বিতীয় বিষয়টা নিয়ে বলা দরকার। আসলে এই দায় কথাটা চাপানো একটা ধারণা। দায়িত্ব আর দায় --- এদের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম বোধগত পার্থক্য আছে। সব সম্পর্কের মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ, যত্ন নেওয়ার দরকার থাকে। একটা মোবাইলকেও ঠিক মত চার্জে বসানো, ক্যাশে ক্লিয়ার করা, সময়মত আপডেট করা --- ইত্যাদি নানা দায় থেকেই যায়। সেখানে একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠছে যেখানে সেখানে অনেক দায়-দায়িত্ব থাকেই। আমরা যতই রুচির পার্থক্য, ভাবনার পার্থক্য বলি না কেন, সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখেছি এমন কিছু অগম্য নয়, একে অন্যের কাছে আসার বা বোঝার। কারণ, আমরা সাধারণ মানুষেরা এমন কিছু বিশেষ রুচি বা ভাবনার অধিকারী নই যে আমার সঙ্গে অন্য মানুষের যোজন যোজন তফাৎ। বরং ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে যোজন দূরত্বের ভাবনায় দাঁড়ানো ইতিহাসের আইকনতুল্য মানুষেরা বিনা অভিযোগে সে দূরত্ব কাটিয়ে জীবনটা কাটিয়ে গেছেন। এখানেও নিজের ইগোকে বুঝে, তার ছায়া উপচ্ছায়াকে সরিয়ে যদি বিচার বিবেচনা নিয়ে নিজের অবস্থানটাকে দেখা যায়, তবে দেখা যায় এমন কিছু বিশ্বযুদ্ধ জয়ের মত ঘটনা না এটা। 

    আর কিছু অভ্যাসের কথা থাকেই। কিছু অভ্যাস নতুন করে গড়ে নিতেই হয়। তার জন্য কিছুই হারায় না। কিছু পরিবর্তন হয়। যে পরিবর্তনটাও ভালোর জন্যেই হয়। যে সম্পর্কগুলো খাঁটি, যে ইচ্ছাটা আমার গভীর --- সে কারো জন্য ছেড়ে যায় না, কারোর জন্য অপূর্ণও থেকে যায় না। নিজের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ালে সম্পর্কের মধ্যে স্পেস অনেকটা বেড়ে যায়। তখন আর সম্পর্ককে বোঝা না লেগে বুঝতে শুরু করা যায়। 


    এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। যখন মনে হচ্ছে যে আমরা যেমন চেয়েছিলাম ঠিক তেমন হচ্ছে না। 

    এখানে প্রথমে আসি মেয়েটির কথায়। সে ছেলেটিকে রাস্তায়, সিনেমাহলে, হোয়াটসঅ্যাপে দীর্ঘ চ্যাটে, উৎসবে, বিপদে যেভাবে দেখেছে, বিয়ের পর পরিবারের মধ্যে এসে অনেক ক্ষেত্রেই আগের ছবির সঙ্গে মেলে না। একটা দ্বন্দ্ব, অস্বস্তি হতে শুরু করে। তবে কি আমি যতটা উদার, যতটা প্রগ্রেসিভ ভেবেছিলাম ততটা নয়? এ সংকট মনে ক্ষুণ্ণতার সৃষ্টি করে। ছেলেটার অনেক আচরণের সে ব্যাখ্যা পায় না। মেলে না। 

    কিন্তু এটাই বাস্তব। মানুষের আচরণ ভীষণভাবে চারপাশ আর চারপাশের সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতা, রঙ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আমাদের নিজেদের দিকে যখন তাকাই তখন দেখি, এক এক মানুষের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিত্বের এক একদিক প্রকাশিত হয়। নিজেকে এক এক রকম লাগে। যে কথাটা একজনকে কিছুতেই বলা যায় না, সেই কথাটা আরেকজনকে কি অনায়াসে বলে ফেলা যায়। ছেলেটার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সে যে বাড়িতে বড় হল, যাদের সঙ্গে বড় হল, তাদের সঙ্গে তার একটা টিউন ফিক্সড হয়েই আছে। তাকে ধুম করে বদলে ফেলা যায় না। সেটা সম্ভব নয়। 

    তবে উপায় কি? উপায় নিজেই দেখেছি, কি অদ্ভুত প্রচেষ্টায় কয়েকজন করে নিয়েছে। কিছুটা সে নিজেকে বদলেছে, কিছুটা সে সেই পরিবারকে ধীরে ধীরে বদলাতে পেরেছে। অবশ্যই এগুলো খুবই ছোটোখাটো জিনিস নিয়েই হয়। সকালে চায়ের সময় ডিসে চা পড়বে কিনা, বাথরুমে চটি পরে যাওয়া উচিত কিনা, সাবানের ব্র‍্যাণ্ড বদলে নেওয়া, তরকারিতে তেল আর নুনের পরিমাণ ঠিক করে নেওয়া…. এরকম অজস্র উদাহরণ আছে। তবে দেখেছি তারা আগে নিজেকে অল্প অল্প করে বদলে নিয়েছে। আমি এতটুকু বদলাবো না, সমস্ত বদলের দায় শুধু তোমার - এ যে পক্ষই বলবে সেই পক্ষের হারই নির্ধারিত অবশেষে। কারণ বদল জীবনের মূলমন্ত্র। তবে যে বাড়িতে মেয়েটা আসে সে বাড়ির "আমি কিছুতেই বদলাব না" এ জেদ স্বাভাবিকভাবেই থাকে। সেটা উচিৎ কি অনুচিত বলছি না, তবে সেটা থাকে। আর তার সেই জেদের মধ্যেই তার দুর্বলতাটার বীজটাও লুকানো থাকে। মেয়েটা যখন নিজেকে বদলাতে শুরু করল অল্প অল্প তারা টেরও পেল না তাদের জেদের তলার মাটিও খসতে শুরু করেছে। আমি যখন দীর্ঘদিন পরে কোনো পরিবারে গেছি, আমার সে পরিচিত মানুষটাকে জানতে চেয়েছি, কেমন আছিস, সব কি আগের মতই আছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর পেয়েছি, না গো। অনেক বদলে গেছে সব।

    আমি তাকে আর মনে করাই না এ বদলের শুরুটা সে নিজেকে দিয়েই করেছিল। সাধারণত কারোর বেশি সময় লাগে, কারোর কম। আবার কিছু দুর্ভাগার সারাটা জীবনই কিছু হয় না। তবে তাদের সংখ্যা কম বলেই সংসারটা টিকে আছে এখনও। 

    এবারে আসি ছেলেটির কথায়। এখানেও সে অনেক সময় মাঝখানে। সে নিজের পরিবার আর তার স্ত্রী-কে - দু'জনকেই আলাদা করে গভীরে চেনে। সে জানে অনেক ভুল বোঝাবুঝিতেই শুধু দুটো আলাদা স্বভাবের, ভাবনার সংঘর্ষ। কেউ কাউকে আঘাত করার জন্য কোনো বিশেষ আচরণ ইচ্ছাকৃত মতলব এঁটে করছে না। এমনকি সে যে আরেকজনকে আঘাত করেছে সে বোধও থাকে না। এখন ছেলেটি কার পক্ষ নেবে? এখানেও দেখেছি সেই সময়ই প্রধান ভূমিকা নেয়। ছেলেটি দু'পক্ষের কাছেই কখনও অপরাধী হয়। যদি উত্তর না দেয় সেই মঙ্গল। যে ভুল বোঝাবুঝি অভিমানের তাকে ভাঙাতে যাওয়া আরেক অভিমানের জন্ম দেওয়া। সব চাইতে ভালো চুপ করে থাকা। অপেক্ষা করা। মেঘ আপনি কেটে যায়। একজন মানুষের একজন মানুষকে চিনতে সময় লাগে। সেই সময়টা দেওয়া সবার সবাইকে ভীষণ দরকার। সে সব ক্ষেত্রেই। নতুন কাজের জায়গা হোক কি নতুন সংসার। সময়ের থেকে বড় বন্ধু কেউ নেই। সময়কে স্বীকার করে নেওয়া মানেই ধৈর্যতে আস্থা রাখা। 

    আমাদের কারোর জীবনই আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছন্দে হয় না। আমাদের জীবনের চিত্রনাট্যে লেখকের ভূমিকা যতই ছলেবলে আমাদের মন নিতে চাক না কেন, সে চিত্রনাট্যের রচয়িতা, যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করা হয় তবে তিনি, অথবা ভাগ্য। মোট কথা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে। তবে উপায়?

    উপায় অবশ্যই নিজেদের স্বপ্ন, অনুভবকে ছাপিয়ে নিজেদের বোধকে প্রশ্ন করা। আমার কাছে কি সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ, মানুষটার সঙ্গে জীবন কাটানো, না নির্দিষ্টভাবেই মানুষটার সঙ্গে কাটানো।

    যদি সত্যিকারের মানুষটাকে চাই, তবে একজন একজনের সঙ্গ'র চাইতে আর বেশি কি চাইবার আছে? যতক্ষণ সে সঙ্গে আছে ততক্ষণ সব আছে। মান অভিমান, ভাঙাগড়া সব আছে। কারণ দু'জনে দু'জনের সঙ্গে আছে। এর বাইরে সব অতিরিক্ত। বাড়তি। মন খারাপ হওয়া, মন ক্ষুণ্ণ হওয়া, সব আছে। সব বাস্তব। তবে তাদের বেশি প্রশ্রয় দিলে সংসারে আগাছাই বাড়ে। কোনটা আগাছা আর কোনটা সত্যিকারের মূল, সেটা যদি বুঝে নিই, তবে আগাছায় জল না ঢেলে মূলেই জলটা দেওয়া যায়। 

    সম্পর্কে, জীবনে কোনটা মুখ্য আর কোনটা গৌণ এ বোধটা খুব পরিষ্কার হয়ে যাওয়া দরকার। তবে আর আগাছায় সম্পর্ক ঢাকে না। একের অন্যের প্রতি আস্থা, সহযোগিতার বোধটাই বাড়ে। জীবন আর সম্পর্ক বাহুল্যবর্জিত হতে থাকে। চলাটা সহজ হয়ে আসে। ক্রমশ বোঝা যায়, জীবন মানে আর কিছু না - সম্পর্কের জাল। জীবন মানেই সম্পর্ক। সে যত সহজ, সব তত সহজ। প্রথম সম্পর্কটা নিজের কল্পনার 'আমি'র সঙ্গে নিজের বাস্তবের 'আমি'র। তাদের মধ্যে দূরত্ব যত কমে বাকি সম্পর্কের মধ্যেও জটিলতা তত কমে।