দুটো ছবি শ্রদ্ধেয় সমীরণদার তোলা। কদিন আগে আমার একজন খুব ভালো বন্ধু সমীরণদার একটা ছবির তলায় গিয়ে মন্তব্যে আমায় ডেকে বলেছিলেন, আমি যেন কিছু লিখি।
এর একটা ইতিহাস আছে। এক সময় ছিল যখন সমীরণদার ছবি নিয়ে আমি মাঝে মাঝেই লিখেছি। এমনকি ছবির পাশেও লিখেছি নানা কায়দাকানুন করে।
আজ সেটা পারি না। কারণটা আমার কাছে খুব স্পষ্ট। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বোধের ধার বাড়ে। সমীরণদার ছবিগুলোকে নতুনভাবে চিনতে শিখছি, বুঝতে শিখছি। ক্রমশ বুঝতে পারছি মন্দিরে গেলে যেমন জোরে কথা বলতে নেই, তেমন ছবিগুলোর স্নিগ্ধতার সামনে দাঁড়িয়ে ভাষার আগল খুলতে নেই। তখন যে কোনো শব্দই কোলাহল। আমার ভাষার সে ক্ষমতা নেই সে নিস্তব্ধ চেতনাবহ অনুভবকে প্রকাশ করি। এ দীনতা স্বীকার না করে নিলে সত্যভ্রষ্ট হতে হয়। তাই আমার নীরবতাই আমার ভাষা এখন সমীরণদার ছবির জন্য। বিস্ময়কে আর কত ভাষায় প্রকাশ করা যায়! ভাষার অবধি আছে, কিন্তু দাদার বিস্ময় সৃষ্টির অবধি নেই।
ধরুন যে মানুষটা একা হেঁটে যাচ্ছে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে। আমার কি কিছু বলতে ইচ্ছা করছে? না করছে না। চিন্তার অস্তিত্ব ভাষাহীন হয় না। কিন্তু অনুভবের অস্তিত্ব ভাষার অপেক্ষা রাখে না। আমি এ ছবিতে শিশিরপাতের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমি পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি। আমি সমীরণদার তীক্ষ্ম, স্থির, তীব্র পর্যবেক্ষণক্ষম চোখদুটো ক্যামেরার পিছনে দেখতে পাচ্ছি। কারণ কদিন দাদার সঙ্গে কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। দেখেছি একজন মানুষ কিভাবে সমস্ত শরীর-মন-আত্মা দিয়ে একটা যন্ত্রকে জাগ্রত করে তুলতে পারে। কিভাবে এক মুহুর্তকে স্থির করে দিতে পারে। তাই আমার কিচ্ছু বলার ইচ্ছা থাকে না। শুধু মনে হয় আরো গভীরে ছবিটাকে অনুধাবন করার চেষ্টা করি। যা পাই, তাকে ভাষায় নাই বা বাঁধলাম।
পরের ছবিটা সেই মুহূর্ত সিঞ্চনের ক্ষণ। ভাষায় এর দিশা মেলে না। শুধু তাকিয়ে থাকা, মুগ্ধ হওয়া।
তবু সমীরণদাকে লেখা যায়,
আমার ভাষা না
বোধের আত্মমগ্নতাকে
জাগ্রত করে তোমার সৃষ্টি
আমি আমার নিস্তব্ধতাকে বলি,
সৎ হও, স্বচ্ছ হও, মরমী হও
ভাষা নীরব হোক
আমায় ঘিরে থাক
তোমার দেখানো শান্ত ভালোবাসার বৃষ্টি