সৌরভ ভট্টাচার্য
8 February 2020
সক্কালবেলা কলিংবেল বাজল। দরজা খুলেই দেখি একজন মাঝবয়েসী গোলগাল বেঁটেখাটো মানুষ হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। মনে মনে চটে গেলাম, কি আদিখ্যেতা রে বাবা এই মেঘলা শীত শীত সক্কালে।
- হে হে, আমি সেলস ম্যান নই দাদা, আমি অমুক, আর ওই দিদি তমুক
অ এতক্ষণ খেয়াল করিনি পিছনে আরেকজন দাঁড়িয়ে। সালোয়ারকামিজ পরা, বেশ লম্বা মোটাসোটা হেডদিদিমণি গোছের একজন।
- হে হে, চারদিকের যা পরিস্থিতি আপনার কি মনে হয় আমরা কোন দিকে এগোচ্ছি? আমরা সেই নিয়েই একটু আলোচনা করতে এসেছি, আপনি কিভাবে দেখছেন চারপাশটাকে?
মনে মনে ভাবলাম, একি NRC নিয়ে বুঝোতে এসেছে, তাও এই সক্কালে, কিন্তু হাসিটা তো বড্ড নরম, তুলতুলে মতলবী। এতটা নরম তো ও পক্ষের হওয়া সাজে না। তবে? হঠাৎ মনে হল আরে এরা সেই তারা নয় তো? বললুম, আপনারা কি খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করতে এসেছেন?
ওমা কি বলব, হেসে গলে পড়লেন। তারপর টুক করে বললেন, আপনি কি অনন্ত জীবন পেতে চান?
বললুম, বালাই ষাট! কেনে, অনন্ত জীবন দিয়ে কি করব?
সে বলল,
- আপনি বাইবেল পড়েছেন?
- আপনি কোরাণ, গীতা, ধম্মপদ, জপ জী সাহেব পড়েছেন?
- একটু একটু
- আমি সব কটাই পড়েছি
( যদিও অহংকারীর মত শোনালো, তবু এমন সময় সত্যি কথাটা না বললে ওরা পেয়ে বসে)
- আপনার কাছে বাইবেল আছে?
- আছে
- আনবেন প্লিজ
আনলাম। সে ব্যক্তি ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে নিয়ে একদম শেষের দিকে গিয়ে বললেন, এই দ্যাখেন, মৃত্যু বলে কিছু থাকবে না যীশুর পিতা যিহোবা বলে গেছেন।
আমি বললাম, আপনি বিশ্বাস করেন?
সে মাটির সাথে মিশে গিয়ে বলল, হ্যাঁ তো। আমি বললাম, আপনি পাগল না শয়তান?
- অ্যাঁ!!
- অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ, আপনি পাগল না শয়তান?
- কেন আপনি অমরত্ব চান না?
- আমি সাত ঘড়া মোহর, পৃথিবীর অর্ধেক রাজত্ব, বিশ্বের সব সুন্দরী রাজকন্যার হাত চাই....
- আহা সে কথা না, আপনি চান না অমর হতে?
- যীশু চেয়েছিলেন? পোপরা হয়েছেন?
- সে সবের কারণ আছে।
- আছে, তাকেই আমরা বিজ্ঞান বলি, জন্মিলে মরিতে হবে...বলি ইমিটেশন অব ক্রাইস্ট পড়েছেন?
- না
- আমার কাছ থেকে ধার করে পড়ে দেখবেন?
- হে হে, না।
- তবে সক্কাল সক্কাল কি রসিকতা হচ্ছে মশায়? আপনি খানিক আগেই বললেন আপনি সেলসম্যান নন। আপনি তো তার চাইতে অধম মশায়। তার তো ন্যায্য কারণ আছে, আপনার? মানু্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গাঁজাখুরি গপ্পো বেচতে এসেছেন সাত সক্কালে। বলি বাইবেলে তো অনেক ভালো কথাও আছে। সব ছেড়ে শৈলোপদেশটা প্রচার করুন না? বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে নীতিপরায়ণ হতে শিক্ষা দিন। বলুন আপনি ভালো হলে ঈশ্বর আপনাকে শান্তি দেবেন। আর ভালো করে সব কটা ধর্মগ্রন্থ পড়ে দেখুন সব জায়গায় মানুষকে ভালো হতে আর করতেই বলা হয়েছে।
- তার মানে আপনি অমরত্ব চান না?
- না, কোনো বুদ্ধিমান লোকই চাইবেন না, যে কারণে আমরা সারদাতে টাকা না রেখে ব্যাঙ্কে রাখি।
- আপনার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগল।
- চা খাবেন?
- না না। আসি।
চলে গেলেন। আমার কদিন আগের আরেকটা ঘটনা মনে পড়ল। দিন কয়েক আগে, সক্কালবেলা শর্টসার্কিট হয়ে বাড়ির একটা বোর্ডে আগুন লাগল। মিস্ত্রী এলেন। সারাতে সারাতে বললেন, ঘরে এত বই কেন? এতো আগুন লাগলে কেলেঙ্কারি হবে, এ যে জতুগৃহ!
অপরাধীর মত মুখ করে বললুম, তা বটে।
দেখুন দুজনেই আমার মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত। একজনকে বকঝকা করলুম, আরেকজনের বক্তব্যে প্রাণপ্রিয় বইদের বিপক্ষে গিয়ে বললুম, তাই তো। এই হয়, প্রাণের সুর আর মতলবের সুর কি আর এক?