Skip to main content

গভীর রাত। গঙ্গার তীরে একলা সাধু। সংশয়ী দরজায়। সাধু বললেন, কি চাও?
- উত্তর
- সে তো দরজায় মেলে না। মেলে ভিতরে এলে।
- অন্ধকার যে।
- অপেক্ষা করো। বাইরের আলোর ধাঁধা কাটলে ভিতরের আলো দেখা যায়।
- মনে হচ্ছে যেন দেখতে পাচ্ছি আপনাকে। আপনার কি গায়ে গেরুয়া? আপনার কি গাত্রবর্ণ কালো?
- তুমি দেখতে পাচ্ছো, ভিতরে এসো।
সংশয়ী এলো ভিতরে। সাধুর কাছে এসে বসল। প্রণাম করল মাথা ভূমিতে স্পর্শ করে। বলল,
- সংশয় যায় কিসে?
- সংশয়ের যন্ত্রণা যেদিন থেকে হয় শুরু।
- সেতো অসহ্য যন্ত্রণা
- হ্যাঁ, ভাঙার যন্ত্রণা। 
- কিন্তু কি ভাঙছে?
- এতদিন যা গড়েছিলে
- কি গড়েছিলাম? সেতো সচেতনভাবে গড়িনি?
- সচেতন?!!!(সাধু হো হো করে হেসে উঠলেন)
চেতনার সূত্রপাত তো সংশয়ে, আগে যা ছিল তা তো প্রবৃত্তি। 
- সব হারিয়ে যাচ্ছে যে! যা করছি সারাটাদিন, সব অনর্থক লাগছে, মনে হচ্ছে অভিনয় করছি। নিজেকে ঠকাচ্ছি। অথচ সত্যটা যে কি তাও স্পষ্ট ঠাহর করতে পারছি কই?
- শত্রুকে চেনো
- কে শত্রু?
- ভয়। তোমার মধ্যে যে ভয়ের কথা শোনে, সে বিশ্বাসী। আর যে ভয়ের বিরুদ্ধে যেতে চায়, সে সংশয়ী। তাই সংশয় আনল তোমায় আমার দরজায়, ভয় রাখল দরজায় আটকিয়ে।
সংশয়ী চুপ করে রইল। বাইরের গঙ্গার জলের কুলকুল শব্দ। সামনের বনের মর্মরধ্বনি। সংশয়ীর মন শান্ত হচ্ছে। সে বলল,
- আমায় সাধন দাও
- সাধন চাও? পাবে। যাও স্নান করে একতাল গঙ্গামাটি নিয়ে এসো।
সে তাই করল। রাখল মাটির তাল সাধুর সামনে। সাধু বলল, তুমি ক্লান্ত, শুয়ে পড়ো, কাল ভোরে তোমায় দেব দীক্ষা। 
খুব ভোরে সে জাগল। দেখল সাধু ধ্যানমগ্ন গঙ্গার তীরে। সে সামনে এসে দাঁড়াল। সাধু বললে, ওই পাড়ের সিঁড়ির ডানদিকে যাও, যে মাটি কাল রাতে এনেছিলে সে মাটি রেখেছি ওখানে, নিয়ে এসো আবার। 
সে ছুটে নামল সিঁড়ি বেয়ে। কিন্তু এতো মাটির পরে মাটি, তার মাটি আলাদা করবে কিসে? চিনবে কিসে? 
তার চোখের কোণায় দেখা দিল অশ্রুকণা। সাধুর সামনে এল নত মস্তকে। 
সাধু বলল, এই হল সাধন। তোমার 'আমি'কে আলাদা করে চেনা যায় যতদিন, ততদিন তুমি ভয়ের কারাগারে। যেদিন মিলেমিশে সব এক হল, সেদিন পেলে অভয়চরণ। বেড়া ভাঙো, সেই হবে সাধন।