সৌরভ ভট্টাচার্য
2 March 2019
সাবধানী মানুষের করুণা থাকে না। সাবধানী মানুষ সব সময় একা। সবার মধ্যে থেকেও একা। দুর্ভাগ্য, জীবাণু, অপঘাত, বিশ্বাসঘাতকতা, ছল-চাতুরী, বেইমানী, অপমান, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে সে আর সুখে থাকার ফুরসত পায় না। সুখে থাকাকে সে সন্দেহ করে। সুখ আসলে শয়তানের ষড়যন্ত্র। ভালোমানুষি আসলে সুক্ষ্ম ছল। কিছু বোকা, অসাবধানী মানুষ যে আছে সে নিয়ে তার সন্দেহ নেই, কিন্তু বাকি সব ফক্কা। তাই মাটিতে পা দিয়েও ভূমিকম্পের ভয়ে দাঁড়ানোর সুখ নেই। ঘুমের মধ্যেও আয়ু আর ধনের আকস্মিক ঘাটতির ভয়ে সুখ নেই। জেগে উঠে বিছানায় বসে বসে ইষ্টনাম জপ করতে করতেও তার সুখ নেই, ভগবানকে যতটা সাবধানী ভেবেছিল তিনি তো তা নন, বোঝাই যাচ্ছে। নইলে জগত সংসারে এত অঘটন, এত অকালমৃত্যু ঘটে?
তবু মাঝে মাঝে সন্দেহও হয়। নিশ্চয়ই এসব ভগবানের ছলের মুখোশ। এর বাইরেও কোনো একটা লুকোনো রহস্যময় স্ট্র্যাটেজি নিশ্চয়ই কিছু থাকবে, নইলে এত মানুষ বিশ্বাস করে কেন? অতএব সাবধানী মানুষ না হতে পারে পুরো আস্তিক না নাস্তিক। দুইদিকেই দরজা খোলা রাখে। সাবধানে থাকে। এমন ভাবে চলে যাতে ভগবান থাকলেও তাঁর কৃপা পাওয়ার জন্য কিছুটা করা থাকল, আবার না থাকলেও বোকার মত সর্বস্ব ত্যাগ করে কিছুই ভোগ না করার মত মুরগীও হতে হল না।
সাবধানী মানুষ বড় দুঃখী। সে বিশ্বাস করে না অথচ নির্ভর করতে চায়। সে ভালোবাসা চায় অথচ হিসাবে গরমিল বরদাস্ত করে না। সে অপেক্ষা করতে চায় না, ঘড়ির কাঁটাকে শত্তুর বলে মনে করে কিন্তু সব ঋতুর ফল সে খেতে চায়।
এরকম একজন সাবধানী মানুষকে নিয়েই একটা গল্প লিখব ভেবেছিলাম। কিন্তু হল না। সাবধানী মানুষ ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, লেখা পড়ে আমায় যেন কেউ চিনে না ফেলে...
তাই আর লেখা হল না। আমার আবার নিজেকে নিয়ে ভরসা নেই কিনা। কি লিখতে গিয়ে কি লিখে বসি। তার চাইতে এতটাই থাক...
একদেশে এক সাবধানী মানুষ থাকত। থাকত..থাকত...থাকত...
তারপর একদিন মরে গেল। তার জীবনে কি ঘটেছিল? কিচ্ছু ঘটেনি তো! সারাজীবন ভীষণ সাবধানে ছিল তো...