Skip to main content
 
        শবরীমালা মন্দিরে মহিলারা ঢোকার পর মন্দির ধোয়া হল। মন্দির অশুচি হয়েছে। পড়লাম। ক্যালেণ্ডারের দিকে তাকালাম, ২০১৯, জানুয়ারি।
        এ লড়াইটা চলবে। এ লড়াইটা আরো আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল। ভণ্ডামি আমাদের রক্তে। ভণ্ডামি শব্দটায় অসুবিধা হলে বলি দ্বিচারিতা। যে রজস্বলা নারীদের স্পর্শে মন্দির তথা দেবতা অশুচি আজ, সে দেবতা কি জানেন না, যে পুরুষভক্তরা শুধু তার মন্দিরে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, সেবার অধিকার পাচ্ছে, সেই পুরুষেরা আসত কোথা থেকে যদি সেই তথাকথিত অশুচিতাকে বিধাতা সংসারে স্থান না দিতেন? পুরুষকে জন্ম দিত কোন রজ অতীত নারী? শুনেছি তিনি নাকি দুই পুরুষের বীর্যে জন্মেছেন। নারীর প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু সেই পদ্ধতিতে যতক্ষণ না তিনি তার সেবককূলকে জন্ম দিতে পারছেন ততক্ষণ তো মেনে নিতেই হবে না সেই শুদ্ধ-নিষ্পাপ পুরুষজাতের জন্মদাত্রী অশুচি রজস্বলা নারীদের? মূলকে উপেক্ষা করে ফলের গুণগান করাকে আমরা মনুষ্যসমাজেই নিন্দনীয় বলি, আর তিনি তো দেবতা!
        এ গেলো দেবতার কথা। আর আমাদের ধর্মের আখড়ায়? একজন নারী, আসনে বসে তার স্বামীর পূজো নিচ্ছেন। আরেকজন নারী গায়ে আগুন নিচ্ছেন, স্বামীর ঢালা কেরোসিন গায়ে নিয়ে। এ দুই-ই কি অস্বাভাবিক নয়? দেবী বনাম নরকের দ্বার, শক্তি, মুক্তির সহায় ইত্যাদি কত সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত সে বলে শেষ করা যাবে না। অথচ দিনের পর দিন এগুলো আমাদের চোখে, ব্যবহারে এত সহজ হয়ে পড়েছে যে অস্বাভাবিকত্বের আঁচটুকু গায়ে লাগে না। এটাই তো কাম্য, এই তো হওয়া উচিত।
        বৃদ্ধ বাবা, মাকে বাড়িতে একা ফেলে ছেলে, বউ নিয়ে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে বাসা গেড়েছে।, কারণ বাচ্চার কেরিয়ার গড়তে হবে, সেই আবার দীক্ষা নিয়ে মঠে-মিশনে ঘুরে বেড়িয়ে জগজ্জননী, জগৎপিতার জন্মোৎসবে যোগদান করে, বাড়িতে দারুণ ঠাকুরঘর করে কি খেলায় মেতে আছে। এগুলো সব গা সওয়া আমাদের।
 
        ধর্ম অন্ধ হতে শেখায় না, ধর্ম অমানবিকতা, অন্ধত্বকে জাস্টিফাই করে, এ আগেও লিখেছিলাম, এ বড় ভয়ংকর। কিন্তু আমাদের মজা হচ্ছে যতক্ষণ জীবাণু সংক্রামিত না হচ্ছে ততক্ষণ চোখ ফিরিয়ে নিজের স্বার্থ-প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিয়ে মত্ত থাকি। তখন সমাজের ফাঁকি, আপাত মধুর নির্দোষ প্রথা-দর্শনগুলোর দিকে আঙুল তোলা - ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর সামিল। কিন্তু যে ধিকিধিকি আগুনটা জ্বলছে সে-ই যে সারা শহরে ত্রাসের কারণ হয়ে উঠতে পারে, সে বোধ কই? 
 
"ধর্ম নিয়ে লিখবেন? অমুকের ভাবাবেগে লাগবে যে?"
        লাগুক। সেই ভাবাবেগের ঘেরাটোপে কি বিষাক্ত জিনিস সংসারে প্রতিদিন নানা অবতারের শিক্ষায় সংসারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে সেগুলোর দিকে তাকানোর দরকার নেই? ধিক সেই শিক্ষা, সেই মনন, সেই সাহিত্য যা শুধু নির্মল নিকেতনে সুউচ্চ ভাব মন্দিরের বাইরে বেরোবার প্রাণশক্তি পায় না। যা বলার তা প্রতিদিন বলতে হবে, আঙুল তুলতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন না, আগুন লাগলে ঘটি মাটিতে ঠুকলেই ভেবেছিলাম জল উঠবে, জল যখন উঠল না শুধু ধুলোই উড়ল তখন আমাদের বিস্ময়ের সীমাপরিসীমা রইল না।
        আমাদের সত্যিই সেই ঘটি কপালে ঠুকে ঠুকেই দিন যাচ্ছে, সময়ে কূপখননের কথা ভুলে গিয়ে।