Skip to main content

সে অনেক কাল আগের কথা। কোনো এক দেশে এক বিদ্বান রাজা ছিলেন। তার মত বিদ্যা আশেপাশে যোজন যোজন দূর রাজ্যের রাজাদেরও ছিল না। তিনি বিদ্যাকেই ঈশ্বর মানতেন। তাই সে রাজ্যে সব মন্দিরে শুধু বর্ণমালালিপি পূজিত হত। সরস্বতীপুজো ছাড়া অন্য পুজোও ছিল নিষিদ্ধ।

তো হল কি, একবার পাশের রাজ্যের রাজার মেয়ের বিয়ে। ওনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্বর্ণাক্ষরে লিপি লেখা হচ্ছে। অনেক দেশের রাজারা আসবেন। তাই বিরাট পুষ্করিণী খননের কাজ চলছে সে রাজ্যে। রাজ্য জুড়ে শুধু ধুলো আর ধুলো। কেউ হাঁচছে, কেউ কাশছে। সে এক্কেবারে যাকে বলে বিদিকিচ্ছিরি অবস্থা।

তো হল কি, স্বর্ণজলে আমন্ত্রণলিপি লিখবার সময়, শিল্পীর এমন হাঁচি পেল যে সে আমন্ত্রণ লিপিতে আমাদের গল্পের রাজার নামের আগে 'মাননীয়' র জায়গায়, হাঁচির তোড়ে করে বসল, 'মাননীয়া'। এদিকে সে ব্যাটা শিল্পীর হেঁচে এমন চোখ জলে ভরে গেছে যে ভুলটা খেয়ালই করল না। ওই আমন্ত্রণ লিপিই রূপোর জলে কাজ করা হীরে বসানো খামে দিল আমাদের রাজাকে পাঠিয়ে।

দূত এলো আমন্ত্রণ লিপি নিয়ে। ভরা সভা তখন। রাজা মন্ত্রীকে বললেন, পড়ো। মন্ত্রী তো চিঠি খুলেই 'আঁক' করে উঠলেন। রাজা ভুরু কুঁচকে বললেন, "কি হল মন্ত্রী, আমি যতদূর জানি অমুক রাজার মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণ এসেছে। কিন্তু তোমার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি যেন কোনো ভূমিকম্পের আভাস পেয়েছে রাজ জ্যোতিষীর কাছ থেকে!"

মন্ত্রী অস্ফুটে বললেন, সে হলেও ভালো ছিল...কিন্তু...

রাজা উঠে এসে চিঠিটা নিলেন। তার নামের আগে 'মাননীয়া'! হায় হায়, একি!

কিন্তু শব্দের, অক্ষরের মান রক্ষা করা তো তাঁর রাজধর্ম। অগত্যা....

বিয়ের দিন রাজা একটা অতিমূল্যবান বেণারসী পরে, নানা ভূষণে ভূষিত হয়ে এমন সাজ সাজলেন যে কে বলবে উনি পুরুষ। শুধু কি তাই? কোনো জিনিসই আধা-আধি করা ওনার স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। তাই ঘোড়ায় উঠলেন না। পালকি এলো। উনি আরো দুজন সহচরী নিয়ে পালকিতে উঠলেন। তারপর হাত পা নেড়ে কি অসামান্য নারীর চপললীলা অনুকরণে বেহারাদের বললেন, চলো ভাই, রাজার বাড়ি বিয়ে খেতে যাই....তারপর হেসে লুটিয়ে পড়ে সহচরীদের বললেন, দেখিস ভাই, বিয়ে বাড়িতে আমার যেন অপমান না হয়, তোদের উপর আমার মানের বালাই...

সহচরীরা হেসে বলল, তাই..তাই...তাই...

তারপর কি হল? হুলুস্থুল, হুলুস্থুল আর হুলুস্থুল। তো হুলুস্থুল নিয়ে কি গল্প লেখা যায়? তাই...

 

আমার গল্পটি ফুরালো

নটে গাছটি মুড়ালো