Skip to main content


        পায়ের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। জড়িয়ে মুখ থুবড়ে স্টেশানের উপর পড়েই যেত হয়ত লোকটা। সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। একটা বিড়ি বুক পকেট থেকে বার করে ঠোঁটে চেপে ধরে দেশলাইয়ের প্যাকেট লুঙ্গীর কোমরের ভাঁজ থেকে বার করল। কাঠি নেই। ফাঁকা দেশলাই বাক্সটা রেললাইনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঠোঁট থেকে বিড়িটা নিয়ে ডান হাতের মধ্যমা আর বুড়ো আঙুলের মধ্যে রেখে নাড়ালো কিছুক্ষণ। চারদিকে থিকথিক করছে ভিড়। আগের গেদে লোকালটা যায়নি, কল্যাণী গ্যালোপিং এর প্যাসেঞ্জারও সব এসে গেছে। গেদে লোকাল অ্যানাউন্স হয়েছে এই মাত্র। সাপটা দুই পা পেঁচিয়ে পড়ে আছে। বিড়ি ধরালেই চলে যেত। কিন্তু দেশলাই? 
        লোকটা টয়লেটের একটা ধারে বসল। সাপটা কোমর জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে, নীল গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ। সাপটা শোয়ার ঘরে খাটের নীচে থাকে। তার সাথেই বাইরে বেরোয়। ট্রেন ঢুকল। গিজগিজ করে লোকগুলো উঠে গেল। সাপটা ভ্রুক্ষেপ করল না। আজ অন্যরকম আচরণ করছে। এই সময় সে কেউ কাটা পড়ল কিনা দেখে, এক্সট্রা টাকা। 
        এই স্টেশানে কুলি লাগে না। তবু রেলের কুলিই তো সে। কালো কুচকুচে শরীর, পেটটা এত ফোলা তার উঠতে বসতে অসুবিধা হয়। লোকে বলে মদ খেয়ে খেয়ে এই অবস্থা। তার বাবাও রেলের কুলি ছিল। বাবার কাছেই মদ খাওয়া শেখা। জন্ম থেকে মাকে দেখেনি। তাদের আসল বাড়ি ছাপরায়। বয়েস রেলের খাতায় এখন একান্ন, আসলে ষাটের কাছাকাছি। লাল জামা আর লুঙ্গি - এই রোজের পোশাক। বউ আর দুই ছেলে আছে বাড়িতে, টিকটিকি আরশোলার মত। সংসারে সম্পর্ক শুধু মদ আর ভোলাবাবার সাথে। ভোলাবাবার চেলা তাকে ঘিরে থাকে, ওই যে তার কোমর জড়িয়ে শুয়ে, কোনো বিপদে পা দিতে দেবে না। জয় বাবা! 
        আজ ঘাম হচ্ছে খুব সকাল থেকে। বুকের কাছটা চাপ চাপ ব্যথা। না এলেই হত। জ্বর ছিল চারদিন। হুঁশ ছিল না। কিন্তু মদের টাকা? সাপটা জেগে গেল। উপরে উঠছে কেন? পেট জড়িয়ে তার বুকের কাছ অবধি এসে গেল। স্পষ্ট হিসহিস শব্দ শুনতে পাচ্ছে। পা থেকে বুক অবধি হিম ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। লোকে কি সাপটাকে দেখতে পাচ্ছে? এত চীৎকার কেন তার চারদিকে? কে যেন তাকে কি একটা বলতে চাইছে তার মুখের কাছে মুখ এনে। বুকের মধ্যে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। সাপটা গলার উপর এখন। গলা পেঁচিয়ে ধরেছে... বমি পাচ্ছে... দম আটকে আসছে.... সাপটা বিরাট ফণা তুলেছে, সূর্য ঢেকে গেল... অন্ধকার হয়ে আসছে...


        বড় ছেলেটা চাকরির জন্য যাতায়াত শুরু করেছে। কর্মরত অবস্থায় স্টেশানেই মৃত্যু যখন তখন পাবেই, লোকে বলছে। ছোটো ছেলে ভোলাবাবার কাছে মানত করেছে দাদার জন্য, একটা ছোবল খাইয়ে দাও শালাকে, চাকরিটা আমি পাই। সাপটা বাড়ির আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ায় এখন, রুক্মিণী বুঝতে পারে। দুই চোখেই ছানি, কাটানো হয়নি। বড় ছেলের চাকরি হলে তবে কাটাবে। রামভরণকেও দেখছে, খাটের তলায় ঘুমাচ্ছে, কোলে সাপটা। রামভরণের গায়ে সেই লাল জামাটা রেলের। শুধু গলার কাছে নীল বিষ, ভোলাবাবার মত।