Skip to main content
sadi

সাদি মহম্মদ। চলে গেলেন। খবরে পড়লাম আত্মহত্যা করলেন। গত বছর মা মারা গিয়েছিলেন। সেই শোক সহ্য করতে না পেরে চলে গেলেন, এমনই পড়লাম। অত্যন্ত সংবেদনশীল একজন মানুষ সাদি। ভীষণ কঠিন জীবন ছিল। বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। আমি ওঁর একটা সাক্ষাৎকারেই শুনেছিলাম। সে যন্ত্রণা নিয়েই বড় হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গানকে কণ্ঠে নিয়েছিলেন।

অনেক ছোটোবেলায় বাংলাদেশের চ্যানেল আসত টিভিতে। ছোটো অ্যাণ্টেনা। মাঝে মাঝেই ছাদে উঠে অ্যাণ্টেনার মুখ এদিক ওদিক করতে হত। নীচ থেকে মা কি ভাই চীৎকার করে বলত, হ্যাঁ এসেছে, এসেছে, এরকমই রাখ। নেমে আয়।

সেই বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেলে শুনেছিলাম সাদি মহম্মদের গান প্রথম। শান্ত ধীর স্থির একজন মানুষ, অত্যন্ত গভীর কণ্ঠস্বর, আর চোখদুটো কী অদ্ভুত! কী শান্ত! আত্মসমাহিত।

প্রথম গানটা শুনেছিলাম রেজওয়ানা চৌধুরীর সঙ্গে। খুব সম্ভবত, "বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি।"

তারপর অনেক অনেকবার ওঁকে শুনেছি। অবশ্যই টিভিতে। এপার বাংলাতেও শুনেছি। সেও টিভিতে। সাক্ষাৎকারটা খুব সম্ভবত তারা চ্যানেলে হয়েছিল।

পড়লাম উনি চলে যাওয়ার দিন সকালেও রেওয়াজে বসেছিলেন তানপুরা নিয়ে। কেউ লিখলেন যে ঘরে বসে গাইতেন সেই ঘরেই চলে গেলেন। কিন্তু কেন? মায়ের মৃত্যুশোকে?

মায়ের মৃত্যুশোকের সঙ্গে লড়াই করা ভীষণ অসম্ভব একটা ব্যাপার। হঠাৎ করে গোটা সংসারের সঙ্গে সম্পর্কটা শুধুই বাইরের সম্পর্ক হয়ে যায় এক লহমায়। কী একটা অভাব কিছুতেই আর মেটে না। কী একটা সুখ-শান্তি, কিছুতেই আর আসে না। মা নেই না! এই একটা কথা যে কতবড় শূন্যতা সে বলে বোঝানো যায় নাকি?

অথচ আমরা বলি রবীন্দ্রনাথের গান সব পারে। পারে না। এক সময় সুচিত্রা মিত্র তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, এক গভীর শোকের সময়, "এমন কী রবীন্দ্রনাথের গানও আমায় সান্ত্বনা দেয়নি।"

দেয় না। কোনো সান্ত্বনা কোথাতেও নেই। সব গান, সব কবিতা, সব বাণী এক সময়ে বাইরে পড়ে থাকে। এক গভীর শোক, অর্থহীন জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, চলে আয়।

কিন্তু চলে আয় বললেই কি যেতে হয় সাদি? তাও এই রমজানের মাসে, একি যাওয়ার সময়? এইভাবে যায় কেউ?

এর উত্তর জানা যায় না। নিঃসঙ্গ হৃদয় ভাষাকেও বলে দূরে যাও। তুমিও বোঝো না আমায়।

মানুষের ভাষা, অত শক্তিশালী নয় তো, যে, সে এই প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়কে বোঝে।

আজ কলকাতার আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামছে সাদি। আপনার না থাকাটা আপনার গান কিছুটা ভরিয়ে দেবে। আমার শ্রদ্ধা জানাতে মনে মনে আপনার গানের ঘরে এলাম। আপনার তানপুরাটার তারে হাত রাখলাম। যে আজ ভীষণ একা হল। সত্যিই একা হল। কলকাতায় বৃষ্টি নামছে সাদি। কালো মেঘ করে আসছে।