স্ত্রী জানে তার স্বামীর সঙ্গে তার বাড়ির পরিচারিকার প্রণয় আছে। স্ত্রী সারাদিন কড়া নজরে রাখে স্বামীকে, পরিচারিকাকে। একদিন এক ভুল হল। ওই "কি ছিল বিধাতার মনে"।
স্ত্রী স্নানে এসেছে, পাব্লিক স্নানাগারে। সঙ্গে পরিচারিকা। হঠাৎ স্ত্রীয়ের মনে হল, সেরেছে, তোয়ালে তো আনা হল না। তাড়াতাড়ি পরিচারিকাকে হুকুম করল, যাও বাড়ি, তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো আমার তোয়ালে। (গপ্পে যদিও সিলভার ওয়াশবেসিন বলেছে। আমি বলছি তোয়ালে। এটা আমার বুঝতে সুবিধা হয় বলে।)
পরিচারিকা তো এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। সে দিল দৌড়। কি দৌড়, কি দৌড়! আজ তার প্রেমিককে পাবে ঘরে একা!
এদিকে কথাটা বলেই স্ত্রীয়ের মনে হয়েছে, এ আমি কি করলাম! হায় হায়, এতো তুলোকে আগুনের কাছে পাঠালাম! হায় হায়! অগত্যা সেও লাগালো দৌড়।
এ গল্পের প্লট আমার নয়। রুমির। রুমি বলছে দেখো দুজনে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু দুটো দৌড়ের কারণ ভিন্ন। একজন প্রেমের অনলে পুড়তে পুড়তে। আরেকজন ঈর্ষা, ক্রোধ, নিরাপত্তাহীনতায় জ্বলতে জ্বলতে।
গপ্পে আরো অনেক কিছু ছিল। আমি সেসব বাদ দিয়ে আমার মত করে গল্পটা বললাম।
এখন কথা হচ্ছে, নীতিবাগীশ মার্কা আলোচনা না। পরকীয়া ইত্যাদির তত্ত্বকথা নয়। কিন্তু এই যে দৌড়, ঈর্ষায় আর ভালোবাসায়। এ এক অদ্ভুত দৃষ্টিকোণ রুমি আমাদের দেখাচ্ছে না? আমরাও তো দৌড়াচ্ছি। রাতদিন দৌড়াচ্ছি। কতটা ভালোবাসায় আর কতটা ঈর্ষায়, লোভে, ভয়ে?
ভয়! রুমি বলছে তুমি ভয়ে তোমার মুখকে বন্ধ রেখেছ কেন? মুখকে চিরকালের জন্য বন্ধ করার জন্য মৃত্যু তো আছেই।
রুমি ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে কত কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলছে। ভয়, অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা, সমাজের নানা নিয়মকানুন, আইনশৃঙখলা, সব সব সব। সবাই শত্রু রুমির প্রেমের সামনে। কিন্তু একজন ছাড়া। আত্ম-অনুশাসন। রুমি বলছে আত্ম-অনুশাসনহীন মানুষ নিজের ভিতরের আগুনে বাইরে দাবানল লাগিয়ে দেয়। আত্ম-অনুশাসন মানুষকে সে গভীর ভালোবাসায় ডোবার ক্ষমতা দেয়। তাকে আর বাইরের শাসনে পদে পদে ঠেকতে হয় না। তার আর ভয় নেই। আলো আছে। স্বাভাবিক আলো।
গুরু শিষ্য সূর্যোদয়ের বর্ণনা করতে করতে সারাটা রাত কাবার করে দিল। যখন সত্যিই সূর্যোদয়ের সময় এলো, তখন সবাই গভীর ঘুমে।
ভালোবাসা বর্ণনাতীত। ভাষাতীত।
রুমির জন্ম নাকি এই মাসেই। তিরিশ তারিখে। সে তো রুমির ইতিহাসের জন্ম। রুমি কি আদৌ জন্মায় বা মরে? মনে তো হয় না। সব প্রেমেরই শর্ত থাকে। প্রেম শর্ত ছাড়া দাঁড়ায় না। সংসারের বেশিরভাগ প্রেমের এমন সব শর্ত থাকে যা প্রকাশ্যে আনা যায় না। দুপক্ষই জানে। এড়িয়ে চলে।
রুমির প্রেমেরও শর্ত ছিল। সে শর্তও প্রেম। শুধুই প্রেম। সেখানে রুমি বলছে, আমার অস্থি, মজ্জা, রক্তমাংস সবটুকুই তো তোমার। এমনকি তোমার উপর আমার আস্থার প্রশ্নও অবান্তর, কারণ আমার ভিতর একটাই অস্তিত্ব। তোমার অস্তিত্ব। শুধুই তোমার অস্তিত্ব।
হঠাৎ কেন রুমির কথা বললাম? এমনিই। যা কারণ ছাড়াই হয়, সে নেশা। নেশার জন্যেই নেশা। এও তাই। এমনিই।