রঙের বালতিটা উল্টে গেল। গায়ে ছিটে লাগল কয়েক ফোঁটা। রাস্তায় রঙ লাগল। চাকার পর চাকা গড়িয়ে গেল।
এরপর থেকে সে যতবার রাস্তা দিয়ে যায় ততবার রাস্তায় রঙের ছাপটা দেখে। অল্প অল্প করে মিলিয়ে যাচ্ছে। নোংরা হয়ে যাচ্ছে।
একদিন রঙটা পুরো মিলিয়ে গেল।
বর্ষা এলো কয়েক মাস পর। রাস্তা পরিষ্কার। এখানে সেখানে জল জমে। সে রাস্তায় নিজের রঙটা খুঁজতে চায়। পায় না। রেগে যায়।
আরো দিন গেল। রাস্তা তৈরি হচ্ছে নতুন করে। পিচ ঢালা হচ্ছে। সে এসে বলল, এইখান থেকে এই এতটা ছিল আমার রঙ।
একজন শ্রমিক বলল, মাত্র এইটুকু? আমরা তো কালো রঙে ঢালি সেই মুলুক থেকে ওই মুলুক।
সে বলল, কিন্তু আমার চাই এইটুকু। আমি করব রঙ।
শ্রমিক বলল, করতে পারো। কিন্তু রাখতে পারবে না। মুছে দেবে সবাই।
সে বলল, জানি, আগেরবার তাই হয়েছে।
শ্রমিক বলল, তবেই বোঝো… তাও করতে চাও রঙ?
সে বলল, হ্যাঁ।
রঙ করল। লোকে মাড়ালো। চাকা মুছে গেল। সে আবার রাগল। আবার ক্ষুব্ধ হল। আবার বর্ষা এলো। আবার সব আগের মত হল।
এখন সে বৃদ্ধ। কাঁপা হাতে রাস্তার ধারে বসে, সবাইকে বলে, রাস্তায় রঙ করতে চেয়ো না, সব মুছে দেবে, সবাই মুছে দেবে। বরং রাস্তা ধরে হেঁটে যাও খালি। আমার সব রঙ মুছে নিয়েছে ওরা।
শ্রমিকও হয়েছে বৃদ্ধ। কাজে নিয়েছে অবসর। সে একদিন বৃদ্ধকে দেখল রাস্তায়। বলল, আজও রঙ করো?
সে বলল, নাহ্, সবাইকে বারণ করি, কিন্তু কেউ শোনে না। সবাই রাস্তা জুড়ে রঙ চড়িয়ে বলে, এটুকু আমার, ওটুকু তোর। আমিও করেছি। কি বোকা ছিলাম না? আর জেদি?
শ্রমিক বলল, সব মুলুক আমারও গেছে। রাস্তাটাই শুধু রয়ে গেছে। আমাদেরও যাওয়ার সময় এলো। কাউকে কিছু শিখিও না। রাস্তাই শিখিয়ে দেবে সব।
সে হাসল, কিন্তু শিখতে চাইবে কখন? রাস্তা থেকে নামার আগে।