রাবণ রম্ভাকে ধর্ষণ করেছিল। বাল্মিকী সে কথা লিখেছেন রম্ভার প্রতি দরদ নিয়ে। কিন্তু কৃত্তিবাস তা করলেন না। অগস্ত্য মুনি রামকে বলছেন, ওই ধর্ষণে সুখ পেয়েছিল রম্ভা। রাবণকে নিরস্ত করার অনেক চেষ্টা করেও যখন রাবণকে থামানো গেল না, তখন রম্ভা চুপ করে রইলেন।
“রাবণের হস্তে বুঝি পরিত্রাণ নাই।
মৌন হয়ে থাকি তবে যা করে গোঁসাই।।
এত ভাবি মৌনভাবে থাকে রম্ভাবতী।
রাবণ বুঝিল রম্ভার হইল সম্মতি।।”
এ রাবণের কামুক মনের কথা। এরপর কৃত্তিবাস বর্ণনা দিচ্ছেন কিভাবে রাবণ রম্ভার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হল।
“একে দশানন তাহে শৃঙ্গারে প্রবীণ।
একাসনে শৃঙ্গার করয়ে সপ্তদিন।।
রাবণের শৃঙ্গার না সহে কোনো নারী।
সহে মাত্র সবে রম্ভা আর মন্দোদরী।। “
এরপর কৃত্তিবাস নারীর কামবাসনার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অগস্ত্য মুনির ভাষ্যে।
“হাত পা আছড়ে রম্ভা রাবণের কোলে।
রাবণ শৃঙ্গার করে ধরি তার চুলে।।
রহ রহ বলি রম্ভা বলে রাবণেরে।
মুখেতে তর্জন করে হরিষ অন্তরে।।”
এ কথা কিন্তু বাল্মিকী লিখছেন না। তিনি লিখছেন রম্ভাকে লাগছিল যেন নদীতে নেমে পড়া কোনো মত্ত হস্তী। বা যেন ফুলে সুশোভিত কোনো লতা যেন ঝড়ে তছনছ হয়ে পড়েছে।
কৃত্তিবাস এখানেই থামছেন না। নারীর কামচরিতকে আরো গভীরে বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন।
“স্বভাবে পুরুষ হতে কামে মত্তা নারী” …… ”হৃদয়ে আনন্দ মুখে করয়ে তর্জন”.... ”পুরুষ অধিক নারী কামেতে পাগল / তথাচ পুরুষ মন্দ স্বভাবে পাগল”....... ”কেহ না বুঝিতে পারে স্ত্রীলোকের ছল / পুরুষ ভুলাতে নারী ফাঁদে নানা কল”...... ”শৃঙ্গারেতে রমণী বাড়ায় অভিলাষ / জনম অবধি তার নাহি পুরে আশ”।
গীতায় আছে কাম অপূরণীয় আগুনের মত। কৃত্তিবাস তা নারীর স্বভাবে দেগে দিলেন। এরা সব অসতী। তবে সতী কে? কৃত্তিবাস লিখছেন,
“শত সহস্রতে নারী মিলয়ে একটি।
সতী পাওয়া দুর্লভ অসতী কোটি কোটি।।”
অসতীর প্রধান দোষ কি?
“প্রধান এক দোষ তার অধিক ভোজন”.....
”যাহা দেখে তাহা খাইতে হয় সাধ।
রাত্রিদিন খায় তবু করয়ে বিষাদ।।
যত খায় ক্রমে ক্রমে তত বাড়ে আশ।
যার ঘরে হেন নারী তার সর্বনাশ।।”
কৃত্তিবাস নাকি বাঙালির মত করে রামায়ণ লিখেছিলেন। জানি না বাঙালির এ ধরণের নারীচরিতাভিধান ছিল কি না। না, সমাজে এই প্রচলিত বিশ্বাস ছিল। মাঝে মাঝে এ ধরণের যুক্তি আজও যে শোনা যায় না, তাই বা হলফ করে বলি কি করে?
প্রসঙ্গত তুলসী রামায়ণে এ প্রসঙ্গে আসেনি। সেখানে উত্তরকাণ্ড দর্শন ও সাধনার কথা নিয়েই মূলত আলোচনা। এ যা উদ্ধৃতি দিলাম, তা কৃত্তিবাসী রামায়ণের উত্তরকাণ্ড থেকে।