Skip to main content
 
 
 
 
আজ সারাদিন ধরে ঋতুপর্ণ ঘোষের উপর অনেক পোস্ট দেখছি। সত্যি বলতে ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না? কারণ ঋতুপর্ণ ঘোষের দুটো খুব বড় মাপের পরিচয় আছে। এক, তিনি খুব উঁচুদরের পরিচালক। আজ সারাদিন যদিও তার সিনেমা নিয়ে খুব একটা কথা, আলোচনা দেখলাম না। অনেক আবেগঘন পোস্ট দেখলাম যদিও, সেই একই 'পুজো পুজো' টাইপের। যা হোক, এ তো আমাদের প্রথা। অগভীর আদিখ্যেতা। 
 
       ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বিতীয় দিক হল তিনি এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষের হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। না, কোনো আন্দোলন না, বিপ্লব না সে অর্থে স্লোগান দিয়ে। তিনি সেই সব মানুষদের মুখে ভাষা যোগাতে চেয়েছিলেন যারা আমাদের 'খিল্লির' বিষয়। তাদের যৌনতার, ভালোবাসার, যন্ত্রণার, অপমানের, বঞ্চনার, উৎপীড়নের গল্প শোনাতে চেয়েছিলেন। ভুল বললাম, বোঝাতে চেয়েছিলেন তার মত করে, অর্থাৎ শিল্পের মাধ্যমে। 
 
       আমাদের সেই মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মূল পন্থাই হতে পারে সেই শ্রেণীর মানুষদের সমাজে যোগ্য মানটুকু দিয়ে। অমুক লিঙ্গের একজন কলেজের অধ্যক্ষ হল, কি জজ হল, কি পুলিশ হল - এ কি মূঢ়ের মত হেডলাইন? এ যেন একজন ডাইনোসর কলেজের অধ্যক্ষ, কি জজ হয়েছে। অবশ্যই সে খুব বড় কথা। তবে কিরকম জানেন তো, প্রবল ঝড় কাটিয়ে একটা নৌকা যখন তীরে এসে দাঁড়ায় ঠিক সেরকম। তখন যদি সেই উত্তাল সমুদ্র বলে একটা নৌকা আমার উদারতায় তীরে পৌঁছালো, তবে তা ভণ্ডামির চূড়ান্ত হয়। যিনি অধ্যক্ষ হতে পেরেছেন, কি জজ হতে পেরেছেন তিনি এক অদম্য প্রাণশক্তির অধিকারী বলেই পেরেছেন, তাতে আমাদের সমাজের অবদান কতটুকু? বাকি যারা অতি সাধারণ সেই শ্রেণীর মানুষ তাদের সাথে কি ব্যবহার করা হয় সমাজে, আমরা জানি না? সব জানি, তবু এ ভণ্ডামি আমাদের স্বভাবগত। এ লজ্জার। এ আমাদের দীনতার, সংকীর্ণতার পরিচায়ক। 
 
       তাই কথা হল ঋতুপর্ণ ঘোষের যে স্বপ্ন ছিল সেই স্বপ্নটুকু যতটা বাস্তবায়নের দিকে এগোয় ততটাই আমাদের প্রায়শ্চিত্ত হয়। কারণ বহু ঋতুপর্ণকে আমরা প্রতিদিন জীবন্মৃত করে রাখছি, কি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি শুধু আমাদের শীতল, ঘৃণাজড়িত তাচ্ছিল্যে, উদাসীনতায়। 
 
       ঋতুপর্ণ চেয়েছিলেন ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরে, কি সামাজিক ব্যষ্টিজীবনের ক্ষেত্রে সেই মানুষেরা যেন তাদের ভালোবাসা, স্বপ্ন নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। আর বাদবাকি একটা মানুষের জীবনের যা ঝড়ঝাপটা সে সেই আত্মসম্মানের জোরেই লড়ে নেবে। আমাদের বাহবা বা হাততালির দিকে তাকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তারা তার অপেক্ষাতেও থাকে না। আমাদের বিশেষ সকরুণ অভ্যর্থনার। সে এক রকম অপমান করাই।