নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আছি বৃন্দাবনে। খুঁজে বেড়াচ্ছি মহাপ্রভুর হেঁটে যাওয়া পথের ধুলো। রূপ-সনাতন প্রমুখ মহাপ্রভু পথগামীদের, পথ নির্মাতাদের বাসস্থান, সাধনপীঠ, সমাধি। বাঁকে বিহারীর প্রবল ভিড় এড়িয়ে মন মজেছে রাধারমণের মন্দিরে। গানের মাধুর্যে। আবালবৃদ্ধবনিতার "রাধা" নামের আনন্দলহরীতে। গল্প জমেছে অনেক। ঝুলি উপচে পড়ছে শ্রবণ আর দর্শনের মাধুকরীতে। মহাপ্রভু জীবনের উদ্দেশ্য প্রেম বলেছিলেন। শান্তি না। প্রেমে শান্তি আপনিই আসে। বিহ্বলতা নিয়েই আসে। কিন্তু প্রেমহীন শান্তি জড়পদার্থ করে দেয়। মহাপ্রভু তা চাননি। তিনি স্বার্থগত ক্ষোভ-ব্যর্থতার কান্নাকে উত্তরণের রাস্তা দেখিয়েছিলেন কান্না দিয়েই। আজও রাস্তাঘাটে, মন্দিরে দোকানে রাধানামে চোখের কোল চিকচিক করতে দেখছি। বৃদ্ধা, তেমন স্বচ্ছল নয় গোপীকে মদনমোহনের সামনে ঘুরে ঘুরে নাচতে দেখছি। কোনোভাবে চলে যাওয়া চায়ের দোকানি ভোরবেলা চায়ের জল চাপিয়ে দু হাত জোড় করে আশ্চে জন্মে আবার রাধারাণীর বৃন্দাবন ধামেই জন্মানোর আর্জি জানাচ্ছে দেখছি। সবাই অনেক পেয়েছে। সবাই? না। যে বাঙালি বৃদ্ধা হল বৃন্দাবনে ভিক্ষা করে করে, সেকি সব পেয়েছে? না হয় তো। তবু সব ক্ষোভ ভুলতে চাইছে। ঠাট্টা করে বলছে, এখনও যদি বিয়ে দাও এই অনুরাধা দশ-বারোটা মানুষকে রেঁধে খাওয়াতে পারে। কিন্তু খাওয়াবে কাকে? কেউ নেই যে! সে সব ক্ষোভ মিটিয়ে নিতে চাইছে রাধামাধবের আশ্রয়ে এসে। মিটবে কি? জানি না। যমুনা শুধু রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের সাক্ষী নয়। যমুনার তীরে বসলে অনেক চোখের জলের গল্প। মানুষের নির্দয়তার গল্প। কিন্তু আরো নিষ্ঠুর হয়ে কি নিষ্ঠুরতা ঘোচে? ঘোচে না।
যা হোক। এ গল্প বলতে বসলে শেষ হবে না। যদি হয় তবে হয় তো লিখব। আপাতত বলি নতুন বছরের অনেকের শুভেচ্ছার উত্তর জানাতে পারলাম না। ক্ষমা চাইছি তার জন্য। সবাই ভালো থাকুন। আনন্দে থাকুন এই প্রার্থনা। বৃন্দাবন আসার আগে দিল্লিতে রাজঘাটে দাঁড়িয়ে ছিলাম খানিকক্ষণ, শুধু একটাই কথা মাথায় এলো, যা কিছু ভালো, তা যেন মনুষ্যত্ব থেকে হারিয়ে না যায়। ভালো থাকবেন সবাই।
ছবিটা রাধারমণ মন্দিরের। আমারই তোলা। ভালো নয়। তবুও। এইটুকু পাঠাতে ইচ্ছা করল সবার জন্য তাই। বৃন্দাবনের মাটিতে বসে লিখছি, কৃষ্ণদাস কবিরাজের সমাধিতে প্রণাম করে বলে এলাম, বাঙালিকে কি ধন দিয়েছ হে....চৈতন্যচরিতামৃত, ধন্য ধন্য আমরা। আসি তবে। রাধে রাধে।