Skip to main content

পিসি ট্রেনে তুলে দিয়ে বললেন, আজকের দিনটা থেকে গেলেই পারতিস, এত রাতে কেউ যায়?

      কিন্তু আমায় ফিরতেই হবে, কাল ভোরে স্কাউটের একটা জরুরি প্রোগ্রাম আছে। না যেতে পারলে এবারে মধুপুর যাওয়া ক্যান্সেল।

      বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে, উইন্ডচিটারের চেনটা গলা অবধি টেনে একটা সিটে বসলাম৷ পৌঁছাতে আধঘন্টা লাগবে। মোবাইলটা বার করে অরিজিৎ সিং -এর একটা গান চালিয়ে ইয়ারপ্লাগ কানে গুঁজে দিলাম৷ ট্রেনটায় আমি ছাড়া আর দু'একটা লোক। একজন মহিলা শাল জড়িয়ে মাথা ঢেকে ঘুমোচ্ছে, আরেকজন হকার কমলালেবুর ঝুড়ি পাশের সিটে রেখে মাফলারে কান-নাক ঢেকে, মনে হয় ঘুমোচ্ছে।

      মিনিট পাঁচ-সাত হলো কিনা জানিনা, মনে হলো কেউ যেন হাত ধরে ডাকলো। তাকিয়ে দেখি একটা বাচ্চা। আট-নয় বয়েস হবে, আমাকে বললো, আমার মাকে দেখেছো? আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কম্পার্টমেন্ট পুরো ফাঁকা, এমনকি যে দু’জন বসেছিলো তারাও নেই। বাচ্চা মেয়েটা আমার সামনের সিটে বসে পা দোলাচ্ছে আমার দিকে স্থির তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবে? বাচ্চাটা বললো, কল্যাণী৷ আমি বললাম, আমিও তো নামবো। তোমার মা কোথায়? বাচ্চাটা উত্তর করলো না।

      জিজ্ঞাসা করলাম, কোথা থেকে উঠেছো? বাচ্চাটা কাঁচ নামানো জানলার দিকে তাকিয়ে থাকলো, উত্তর করলো না।

      আমার কেমন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো, কেউ কি কিছু খাইয়ে বাচ্চাটাকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করেছে? পেপারে তো প্রায়ই পড়ি এসব।

      কল্যাণী এলো, ট্রেন থেকে নামলাম, বাচ্চাটাও নামলো, একজন ভদ্রমহিলা শাল মুড়ি দিয়ে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাচ্চাটা দৌড়ে গিয়ে ‘মা’ বলে জড়িয়ে ধরলো তাকে। আমি তাড়াতাড়ি ভদ্রমহিলার কাছে গেলাম, বললাম, বাচ্চাটা একা একা কোথায় গিয়েছিল? মহিলা কোনো উত্তর করলেন না। আমি নাকে একটা পচা গন্ধ পেলাম, গা গুলিয়ে আসলো।

      ডানদিক থেকে আপ প্লাটফর্মে একটা মালগাড়ি আসছে ভীষণ স্পিডে। হঠাৎ আমি কিছু বোঝার আগেই মহিলা বাচ্চাটিকে নিয়ে লাইনে ঝাপ দিলেন। চমকে গিয়ে আমার মাথা ঘুরে গেলো। চিৎকার করতে গিয়ে গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না। দৌড়ে লাইনের কাছে দিয়ে দেখি কিচ্ছু নেই, একটা ছেঁড়া বহুদিনের পুরোনো লাল সোয়েটার পড়ে, যে সোয়েটারটা বাচ্চাটার গায়ে দেখেছিলাম।

      আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো, মনে পড়লো গত মাসে কল্যাণী স্টেশনে একজন মহিলা তার বাচ্চা নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দেন ও আত্মহত্যা করেন। আমি ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে, ভীষণ ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে, আমার আবছা মনে হলো ওপাশের প্লাটফর্মে মা ও বাচ্চাটা দাঁড়িয়ে আছে, আমার দিকেই তাকিয়ে....