Skip to main content

 

বাসের হর্ণ। স্বপ্ন না। অনেক অজানা মানুষের চীৎকার, হাসাহাসি, কথা বলা, বলেই চলা। স্বপ্ন না। যে কোনো মুহূর্তে গায়ে ঠেলা দিয়ে কেউ ডাকবে, অ্যাই…. অ্যাই…. ভিতরে ফাঁকা আছে… সিট?

ছেলেটা রোগা। কিন্তু রুগ্ন না। চোখদুটো উজ্জ্বল। ভাষা আছে। শুনবে কে? আর শোনার তোয়াক্কাও যেন সে করে। শুধু ক্লান্তি আসে সাড়ে চোদ্দো বছরের শরীরে। ঘুম পায়। রেস্টুরেন্টের বাইরে পাতা চেয়ারে বসে ঢুলে পড়ে। চমকে তাকায়। মালিক দেখলে খিস্তি করবে। মালিকের ছেলে দেখলে ক্যালাবে। আরো আলতুফালতু লোক আছে, উটকো ঝামেলা করবে। বলবে, যা যা…মায়ের কাছে বসে ভিক্ষা করগে যা…..

======

পুজোর বাজার করছে লোকে। কাতারে কাতারে লোক। কত টাকাপয়সা খরচ করতে পারে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, মায়ের পাশে বসে। মা বসে কালীমন্দিরের বাইরে। আরো অনেকে আছে। সবাই ভিখারি। প্রচণ্ড গরম। ঘাম হচ্ছে খুব। মা আঁচল দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছে। বারবার। মায়ের আঁচলে কী এক গন্ধ। সাবানের না। ধুলোর না। ফুলের না। ধুপের না। মায়ের গন্ধ। মা মিষ্টি দিল। প্রসাদের মিষ্টি। হালকা সিঁদুর লাগা। মা আঁচলে মুছে বলল, হাঁ কর। খেয়ে নে। মা আঁচলে মুখ মুছিয়ে দিল। আজকে দোকান বন্ধ। মালিকের ছেলের জন্মদিন। আজকে ছুটি। আজকে রাতে ওখানে খাওয়া। বিরিয়ানি। রাতদিন বিরিয়ানির গন্ধে গা গুলায়। তবু যাবে মায়ের জন্য। দেবে না মানে? দিতেই হবে? সেকি অন্যের ভাগেরটা চাইছে নাকি? চাইছে তো তার নিজের ভাগের!

=======

মা ঘুমাচ্ছে। ভালো খেয়েছে আজ। মায়ের চোখ দেখলে বোঝে। আজকে মায়ের পেট ভরেছে। পেট ভরলে চোখের মণি অন্যরকম গোল হয়ে যায়। না ভরলে আরেক রকমের গোল। কুকুরগুলোর চোখগুলো আধপেটা গোল। আবার কখনও কখনও পুরোটা গোল। যখন তারা বিয়েবাড়ির সামনে টামনে।

মা ঘুমাচ্ছে। গরম লাগছে। গঙ্গাঘাটে এসে বসল সে। সিগারেট চেয়ে এনেছে দুটো দাদাদের কাছ থেকে। একটা ধরালো। মা বলে মরবি, বাবার মত নেশা করে। বাবা মরেছে। কবে মরল? জন্মাল কবে বাবা? যেন মায়ের পেটেই মরে গেছে। বাবা কি মায়ের পেটে জন্মাতে পারে? পারে। পারে। মা যখন বাবার কথা বলে, মনে হয় যেন মায়ের পেটেই জন্মেছিল বাবা। এমনভাবে বলে।

একা একা বসে মাথায় ভাবনার চরকি ঘোরায়। চরকির রঙ হাজার রঙে। ফুলকি ছিটকে জ্বালা লাগায়। জ্বালা ধরায়। মায়ের মাথায় নেভা চরকি। মা বারবার জ্বালাতে চায়। নিভে যায়। ওই যে নীচের সিঁড়িতে বসে দুটো মেয়ে। ওরা টাকার জন্য অচেনা লোকের সঙ্গে শোয়। সেও একদিন ভাড়া করবে ওদের। আরেকটু বড় হোক। ওদের শরীর দেখতে দেখতে নিজের মধ্যে চরকি বেসামাল হয়। পাগল পাগল লাগে। জামাপ্যান্ট খুলে ওদের সামনে দিয়েই দৌড়ে নেমে গঙ্গায় দেয় ঝাঁপ। এক আকাশ তারা। দূরে ব্রীজ। গাড়ি নেই। হলুদ আলোর সারি। মন খারাপ করে।

=====

ভিজে গায়ে উঠে আসে। সিঁড়িতে কয়েকটা কুকুর শুয়ে। উঠতে উঠতে গঙ্গার জলে সিঁড়ি ভিজল। সিঁড়ি ভেজাতে ভেজাতেই জামাপ্যান্ট পরল। বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

মা বমি করছে। বিরিয়ানি বেরোচ্ছে। বাজে গন্ধ।

মা তার দিকে অপরাধীর মত তাকালো, বলল, হজম হয়নি রে সোনা…..

সে বলল, খুব গরম আজ…. না আনলেই হত….

মায়ের চা ছাড়া কিচ্ছু সহ্য হয় না। এক মাসি বলে তোর মা মরবে তাড়াতাড়ি। মা মরলে কী করবে সে? জানে না। কান্না পাচ্ছে। দূরের কান্না। কিন্তু এখন বুকের মধ্যে বাজছে ঢাকের মত। যেন কোন দূরের গ্রাম থেকে আসা ঢাকি। তাকে চেনে। আসবে একদিন। কিন্তু কান্না চাপতে হবে। আবার ওকে দূরে ঠেলে একা বসতে হবে। রেস্টুরেন্টের সামনে। মাকে একা বসতে হবে। মন্দিরের সামনে। সে অপেক্ষা করবে। মাও অপেক্ষা করবে। গভীর রাতের। মায়ের পাশে শোবে। রাত নামবে। একটা দিন শেষ হবে, রাতের মত হয়ে।