Skip to main content

রাত আটটা হবে। ফিরছি, হঠাৎ দেখি আমাদের এখানের হাইস্কুলের সামনে কয়েকজন মহিলা দাঁড়িয়ে, দেখে মনে হচ্ছে ঠাকুর দেখতে যাবেন। দুটো টোটো দাঁড়িয়ে। মহিলারা যেখানে দাঁড়িয়ে তার সামনে পুকুর, পুকুরের ওপারে হাইস্কুলের বিল্ডিং।
      জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে?
      বেশ উদ্বিগ্ন মুখে বললেন, একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসছে স্কুলের ভিতর থেকে।
      শুনে ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল আমার। সাথে আমার দুই বন্ধু ছিল আরো। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে স্কুলের থেকে কিছুটা দূরে একটা মুদির দোকান আছে, সেখানে গিয়ে ব্যাপারটা বললাম। তিনি বললেন একটা ঘেয়ো কুকুর আছে, ওটা মারা যাবে, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে বাঁচানোর, ওই ঢুকে বসে আছে, ওরই চীৎকার।
      আমি বলতে গেলাম, তবু...
      তার আগেই ওনার হাতের ফোন কোনো একটা নাম্বার ডায়াল করতে শুরু করেছে দেখলাম, উনি বললেন স্কুলের দারোয়ানকে ডাকছি। পুজোর ছুটি শুরু হয়ে গেছে তো।
      ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন এল। একজন বলল, আমি টপকে দেখব?
      তাকে বলা হল, এখন না, দারোয়ান আসছে।
      মিনিট পনেরো পর দারোয়ান এলো। আমরা স্কুলের গেট খুলে ভেতরে গেলাম। আরো কয়েকজন ছেলে এল। স্কুল চত্তর খোঁজা শুরু হল। কেউ ভুতের গল্প বলল, কেউ কুকুরটা থেকে সাবধান হতে বলল।


      কিছুক্ষণ পর বোঝা গেল, ওটা কুকুরের ডাকই ছিল। কেউ নেই স্কুলে।
      যতক্ষণ খুঁজছিলাম, আমার ততক্ষণ কলকাতার একটা স্কুলের ঘটনা ক্রমাগত মনে পড়ে যাচ্ছিল, একইভাবে বাচ্চাটা মারা গিয়েছিল।
      যখন ফিরছি,তখন সবার মুখের নিশ্চিন্ততা, প্রশান্তি দেখে বিশ্বাসটা আবার হল, মানুষ ততটা ফিকে হয়ে যায়নি। ঝুঁকি নিতে, এগিয়ে আসতে, এখনও মানুষ পিছপা হয় না। আর এই বোধের জন্য বিদ্যালয়ের কেতাবি শিক্ষাও লাগে না। কারণ যে মানুষটা স্কুলের পাঁচিল টপকে একাই ওই অন্ধকারে ঝাঁপাতে উদ্যত হয়েছিল, তাকে চলতে ফিরতে চোখেই হয়ত পড়ত না। আজ এই দিনের শেষে রাতে যখন লিখছি তার উদ্বিগ্ন চোখদুটোই বেশি করে মনে পড়ছে, শ্রদ্ধায়। এমনইভাবে মানুষ বাঁচুক মনুষ্যত্বের পাহারায়, এই চোখদুটো হারিয়ে যেন না ফেলি, শিক্ষায় হোক, কি অশিক্ষায়।