টিউশন ব্যাচে যাওয়ার সময়ই প্রচন্ড মেঘ করে এসেছিল। তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা হবে, সেদিন ব্যাচে টেস্ট ছিলো। পরীক্ষা দিতে দিতেই শুনলাম বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটু টেনশান হতে শুরু করলো, আমাদের ওদিকটায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল জমে যায়, আর এ যা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তো নদী হয়ে যাবে। পড়ার ব্যাচ থেকে বেরোলাম নটা চল্লিশ। রেনকোট গায়ে দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছি, মাঝে মাঝেই ভীষণ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। একটু ভয় ভয় লাগলেও ব্যাপারটা বেশ থ্রিলিং লাগছে।
যা ভেবেছিলাম তাই, সাইকেলের অর্ধেক চাকা জলের তলায়৷ রাস্তা প্রায় সুনসান৷ এমনিতেও রবিবার লোকজন এইসময় বাইরে থাকার কথাও নয়৷ হঠাৎ মনে হলো সামনের বন্ধ চায়ের দোকানটার টেবিলটার উপরে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে আর কুঁই কুঁই আওয়াজ করছে। অন্ধকার ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না বেড়াল না কুকুর। এত বৃষ্টি পড়ছে যে মোবাইল বার করে আলো জ্বেলেও দেখতে পারছি না। সাইকেলটা কোনোরকমে টেনেটেনে চায়ের দোকানের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখি, আরে এ কি! একটা রেড পান্ডা। আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না, কল্যাণীর গলিতে রেড পান্ডা কি করে এলো!? কিন্তু সে ভাবার সময় কোথায়। ইতিমধ্যে সে বাবু আমার কাঁধে লাফিয়ে উঠে চুক চুক করে আমার কান চাটতে শুরু করেছে। একবার বা কাঁধে একবার ডান কাঁধে, একবার আমার ব্যাগ ধরে টানাটানি করে, একবার আমার রেনকোটের টুপি ধরে। আমি আশেপাশে কাউকে দেখলাম না। ওকে আমার রেনকোটের চেনটা খুলে বুকের সঙ্গে সাটিয়ে চেনটা যতদুর টানা যায় টেনে দিলাম। রেড পান্ডাটা আমার গলা জড়িয়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে শুলো। আমি সাইকেলে না চেপে হাঁটতে হাঁটতেই বাড়ির দিকে এগোলাম।
পনেরো মিনিট পর বাড়ি পৌঁছালাম, মা দরজা খুলে দিলো , চিন্তিত মুখ, বললাম কি হয়েছে? মা বলল, আর বলিস না একটা চোরা শিকারী রেডপান্ডা নিয়ে শিয়ালদায় ধরা পড়েছিল, কিন্তু রেডপান্ডাটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমার কাকা পুলিশে চাকরি করেন৷ তাঁর কাছ থেকেই জানা গেছে৷ মা খেয়ালই করেনি, যাকে নিয়ে সারা কলকাতা জুড়ে এত কান্ড, ততক্ষণে সে আমার কোল ছাড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে উঠে বসে জুল জুল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।