Skip to main content
 
 
       "সরে বসো..."
       বলতেই বুড়োটা গিরগিটি হয়ে লাফ দিয়ে আমগাছটায় উঠে গেল। কয়েকটা কাঠপিঁপড়েকে জিভ দিয়ে চাটতে চাটতে একবার নীচের দিকে তাকালো। যে ছেলেটা ভ্যান চালাতে চালাতে তাকে কথাগুলো বলেছিল সে তার গিরগিটি হয়ে যাওয়াটা খেয়াল না করেই চলে গেল।
       এখন বুড়োটা, মানে গিরিগিটিটা আমগাছটার একদম মগডালে বসে আছে। আমপাতাগুলোর খসখসে গা তার গায়ের উপর সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ল্যাজটা গাছের ডালে 'ঠপাস ঠপাস' করে মারতে মারতে গিরিগিটিটার ঘুম পেয়ে গেল। মে মাসের দুপুর। এত গরম যে পারা যাচ্ছে না। তবে মানুষের শরীরের মত ঘাম হয় না গিরগিটি হলে। গা চুলকায় মাঝে মাঝে। মাথার উপর সূর্য। গনগনে তপ্ত তাওয়া যেন পুরো পৃথিবীটাকে সেঁকছে। ওই দূরে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার থেকে তেরো কিলোমিটার দূরে তার হাইস্কুল। এখন গরমের ছুটি চলছে। সব ফাঁকা। 
       একটা সাপ উঠে আসছে। তার স্ত্রী। দুপুরে সাপ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের ছেলেমেয়ে নেই। সাপটা এসে তার পাশে গা এলিয়ে শুলো। গিরগিটিটা কিছু বোঝার আগেই টপ্ করে গিলে ফেলল তাকে। গিরগিটিটা সাপের পেটে গিয়ে বুঝল সে তার স্ত্রী ছিল না। তার স্ত্রী'র একটা ডিম্বাশয় কাটা ছিল, ক্যান্সার হয়েছিল। গিরগিটিটা সাপের পেটের জারকে জারিত হতে হতে ভাবল একবার মানুষ হয়ে ফেটে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বেরোল না। ইচ্ছাটাতে জারক পড়ে গেছে। ঠিক সেই সময় একটা বড় গাছের ডাল সাপটার গায়ে এসে পড়ল। সাপটা দু-টুকরো হয়ে ছিঁড়ে গেল। গিরগিটিটাও মাঝখান থেকে ছিঁড়ে অর্ধজারিত হয়ে মাটিতে পড়ল। 
       ভ্যানওয়ালা ফিরছে। সে দেখল আমগাছটার তলায় একটা বড় আমগাছের ডাল পড়ে। তার পাশে মৃত একটা দু-টুকরো সাপ, তার পাশে একটা দু-টুকরো আধগলা গিরগিটি। ভ্যানওয়ালা নেমে দেখতে যাবে এমন সময় একটা তীব্র ব্যথায় চিনচিন করে উঠল তার পাটা। একটা সাপ কামড়ে দিয়ে হিসহিস করতে করতে চলে যাচ্ছে। সেই সাপটা বাঁদিকে একটু বেশি বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে, কারণ ওর বাঁদিকের ডিম্বাশয়টা কাটা। 
       লোকটা বুঝল সে মারা যাচ্ছে। চোখেমুখে অন্ধকার নেমে এল। যখন তার জ্ঞান ফিরল সে অনেক বৃদ্ধ। আমগাছের পাশে শুয়ে আছে। একজন সাইকেল চালক প্রায় তার ঘাড়ের কাছে এসে বলল, "আরে সরে শো..."। সে তাড়াতাড়ি একটা গিরগিটি হয়ে গাছটার ডালে চড়ে বসল।
 
 
       এই সমস্তটা একটা চিল অনেক দূরের আকাশ থেকে দেখছিল। ভগবান তখন মেঘের আড়ালে নিজের বসার জায়গা রঙ করছিলেন নিজে নিজে। আর একটা ভাটিয়ালি গান গাইছিলেন। চিলটা উড়ে রামধনুতে মিশে যেতে যেতে বলল, "সব মিথ্যা, সব মিথ্যা।" ভগবান গান থামিয়ে একটু থমকে গেলেন। তারপর বসার জায়গাটার রঙ পরিবর্তন করে নিলেন, গানটাও বদলে নিলেন, আর আমগাছটার বদলে একটা কৃষ্ণচূড়া লাগিয়ে দিলেন। 
       কৃষ্ণচূড়ার নীচে একটা ছেলে এসে বসল। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এল। তাদের একটা চোখে গিরগিটির মত দৃষ্টি, আরেকটা চোখে সাপের মত। তারা কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে বলল, "আমি তোমায় ভালোবাসি।" তাদের একটা কানে সাপের মত হিসহিস শোনালো, আরেকটা কানে গিরগিটির মত কটকট।
       একটা সাদা চিল আকাশে উড়ে যেতে যেতে বলল, "মর মর মর..."
       ভগবান তখন একটা ডাঁসা পেয়ারা চিবোতে চিবোতে বসার জায়গাটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলেন, রঙটা কড়া হয়েছে, টিকবে। রঙটা অনেকটা কৃষ্ণচূড়ার মত।