Skip to main content

              সব চাইতে বড় বাঁশটার উপরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল পিঁপড়েটা। এত বৃষ্টি হয়েছে চারদিন ধরে যে চারদিকে জল থৈ থৈ। পিঁপড়েটার বাড়ি ছিল এই বাঁশগাছটার নীচ থেকে এগারো পা দূরে ওই হিজল গাছটার গোড়ায়। জল ঢুকেছে গর্তে। পুরো পরিবার ছিটকে এদিক ওদিক হয়ে গেছে। কে কোন ডালে, কোন ঝোপে, কোন বাড়ির কার্ণিশে, দেওয়ালে, জানলায়, ভাঙা সাইকেলের ক্যারিয়ারে, জামাকাপড় শুকাতে দেওয়া বাঁশের মাথায় কেউ বলতে পারে না। এই তল্লাট জুড়ে প্রায়ই এরকম বৃষ্টি হয়, গর্তে জল ঢোকে, তারা পালায় প্রাণ বাঁচাতে। তবু কেউ এ মাটি ছেড়ে যেতে চায় না। কেনই বা যাবে? প্রাণ তো শুধু শরীরের সাথে জড়িয়েই বাঁচে না, প্রাণ বাঁচে মাটির সাথে শরীরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে। তাই ফি বর্ষায় তারা এরকম লড়াই করেই বাঁচে। কতজনের প্রাণও তো যায়।
       তবে এবারের বর্ষাটা যেন অন্যরকম। বৃষ্টির জল যেন শুধু বৃষ্টির জল নয়। জলে কিসব রাসায়ানিক পদার্থ মেশানো। এর ওর গায়ে নানা রঙের দাগ হয়ে যাচ্ছে। সেই দাগগুলো বড্ড অচেনা। কারা যেন বলছে এই দাগগুলো দিয়ে পিঁপড়ে বাছাই হবে। মাটির অধিকার বাছাই হবে। গর্তে ঢোকা জল শুকিয়ে যাবে, কিন্তু গায়ের রঙ নাকি মুছবে না। যে গর্তে এত প্রজন্মের গায়ের গন্ধ মাটির সাথে মিশে, সেই গন্ধ শুঁকেই তো চেনা যায় যে আমার গর্ত, সেই গন্ধও নাকি তাদের বলবে না, বাড়ি এসো। তাদের অনেক কে নাকি চলে যেতে হবে। কোথায় চলে যেতে হবে কেউ বলছে না, শুধু বলছে চলে যেতে হবে।
       এই বৃষ্টির ফোঁটা, এই বর্ষার সজল বাতাস, এই মৌসুমি মেঘের কালো রঙ - বড্ড অচেনা। মেঘের গর্জন তো কত শুনেছে তারা, কিন্তু এমন গর্জন এই প্রথম। তারা কি ভাষায় কথা বলছে কেউ বুঝছে না। তাই প্রত্যেকে প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইছে সে বুঝেছে কিনা। গায়ের রঙ দেখে চিনতে চাইছে এ রঙের মানে কি? সে তবে কোন মাটির?
       পিঁপড়েটা একটা বাঁশপাতার নীচে এসে দাঁড়াল। প্রচণ্ড জোর বৃষ্টি পড়ছে এখন। আচ্ছা এই যে বাঁশগাছটা, একে কে এনেছিল এখানে? মনে নেই, তবে শুনেছে তার ঠাকুরদার কাছে এক নীলরঙের পাখি নাকি তার পরিবার নিয়ে এখানে আসার সময় বাঁশের চারা মুখে করে এনেছিল। এই যে হিজল গাছটা, ওই যে আকাশমণিটা, ওই দোয়েলের পরিবার, ওই যে মুনিয়ারা এরকম কত কেউ এসে এখানে আছে। কেউ কি মাটি নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আসে? তারা আসে প্রাণ নিয়ে, প্রাণ এসে মাটির সাথে শিকড় গড়ে ভালোবাসায়। প্রতিবেশী হয় এর ওর হাত ধরে ধরে আত্মীয়তায়। এইভাবে জীবন ডালপালা তৈরি করে দাঁড়ায়। এই ডালের সাথে সেই ডাল যায় জড়িয়ে, এর শিকড়ের সাথে তার শিকড়ের যায় গিঁট পেকে। এক কে ধরে টানলে আরেকটা উপড়ে আসে। তবে কেন এ রঙ এবারের বর্ষার? এ রঙ কি সূর্যাস্তের না সূর্যোদয়ের?