Skip to main content
 
 
        আমার পরম শ্রদ্ধেয় Samiran দা আমায় সাতদিনে সাতটা বই আর সাতজনকে ট্যাগ করার বললেন। এ এক মজার খেলা। অনেকেই খেলছেন। না পড়া, অজানা বহু বইয়ের সন্ধানও পাচ্ছি। 
        আমি আমার বইয়ের তাক, আলমারি, টেবিল, ড্রয়ার ইত্যাদি সাম্ভাব্য যতগুলো স্থানে-অস্থানে বই রাখি, দাঁড়ালাম, ভাবলাম - কোন বইটা দিই। কোন বইটা দিয়ে শুরু করি? হল না।
        বসে ভাবতে শুরু করলাম। অজস্র বইয়ের কথা ভিড় করে মাথায় আসতে শুরু করল। বহু বইয়ের বহু চরিত্রেরা পুরোনো আত্মীয়ের মত হাসিমুখে সামনে দাঁড়িয়ে বলল - "মনে আছে তোমার আমাকে এখনও?"
        আছে আছে। নানা পত্রিকায় পড়া নানা ছোটোগল্প ভাবিয়েছে, ভালোবাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে - অভিজ্ঞ করেছে। 
        প্রথমে ভাবলাম 'গীতবিতান' দিয়ে শুরু করি। তারপরে ভাবলাম সত্যিই কি তাই? গীতবিতান দিলে কি মিথ্যাচারণ হবে না? তার আগে ঠাকুমা, বাবা, দিদা, মায়ের কিনে দেওয়া নানা গল্প আমায় ছুঁয়ে যায়নি, আমার আপনজন হয়ে ওঠেনি, তা তো নয়! চাঁদমামা, ঠাকুমার মুখে কৃত্তিবাস, কাশীরাম দাস, লক্ষীর পাঁচালি, সেভেন ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্স, আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোরমন - এরা আমার অনভিজ্ঞ, অপরিণত মনটাকে কম নাড়া তো দেয়নি! তাদের মলাট কোথায় পাব? কোথায় পাব সেইসব গল্পগুলোর ছবি, লেখক, এমনকি শিরোনাম? তবু তো তারা আছে। মনের মধ্যে আচমকা তাদের যাতায়াত টের তো পাই। 
        বড় হওয়ার সাথে সাথে দেশ-বিদেশের বহু সাহিত্যধারার তীরে তীরে এতটা রাস্তা হেঁটে এলাম, হেঁটে চলেওছি। আসলে আমি সারা জীবন কাজের কাজ কিচ্ছু করিনি, শুধু পড়েছি। বিস্ময়ে, শোকে, দুঃখে, হতাশায়, আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, গাম্ভীর্যে, যন্ত্রণায় - শুধু পড়েছি। মানুষের বিচিত্র জীবনের, বিচিত্র চিন্তার, বিচিত্র অনুভবের সাক্ষী হয়েছি। 
        আমি অতি সামান্য মানুষ। সাহিত্য সংসারে ভিখারিতুল্য। সারাদিন ভিক্ষাপাত্র হাতে এর দরজায়, তার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ভিক্ষা পাই। তাই নিয়ে দিন কাটাই। সেই আমার মত ভিখারির সাতটা বই খোঁজার স্পর্ধা, সাহস জোগাড় করতেই পারলাম না গো দাদা। কিছু বইয়ের কথা ভালো লাগলে সোচ্চারে তার ঘোষণা করি। নিজের ভালোলাগাটুকু জানাই। সে সদ্য পাঠের আনন্দে, পরিকল্পনামাফিক নয়, কৃতজ্ঞতায়। কিন্তু অতীতের দিকে তাকালে সব মিলে গেছে দেখি একটাই শব্দে - মানুষ। 
        আমি অনেক ভাবলাম দাদা। আমার বোন Riya যেদিন আমায় বলল, সেদিন থেকেই ভাবলাম। পারলাম না। 
        তবে এইটুকুই বলে শেষ করি, সাহিত্যের এই বিপুল সংসারে আমায় ভিখারি হওয়ারও মর্যাদাটুকু যার জন্যে পেলাম, তিনি রবীন্দ্রনাথ। আজ এই মুহূর্তে এই নামটা লিখতেও আমার চোখ ভিজে আসছে। আমায় ভিখারি কেন করলেন? কারণ ওর চাইতে বেশি যোগ্যতা আমার নেই যে! 
        আমার বেঁচে থাকার, লড়াই করার, এমনকি অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর সাথে বোঝাপড়ার একটাই যোগ্যতা আমার, এই ভিখারির সাজ। যে সাজ আমায় তিনি পরিয়েছেন। তাঁর গানে, প্রবন্ধে, কবিতায়। 
        আপনি সেই ছাতিমতলার মানুষ। আপনার মত গুণীর কটাক্ষেই আমি ধন্য। সেইখানে আপনি আমার বাড়ি এসেছেন, আমার সাথে সময় কাটিয়েছেন, অমূল্য স্মৃতির সম্ভার হাতে তুলে দিয়েছেন, সর্বোপরি বেড়াতে গিয়ে আমার গান অবধি শুনেছেন। আজও আপনার স্নেহ বঞ্চিত নই, এই পরম সৌভাগ্য। আপনার আরো প্রশ্রয়, আরো ভালোবাসার কাঙাল রইলাম।
        আমার সাতটা নয় সাত সহস্র জন্মের সাত লক্ষকোটি বইয়ের একত্রিত রূপ - রবীন্দ্রনাথ। আমি ওকেই নমিনেট করলাম। বললাম, তুমি বলো এমন সাতটা বইয়ের নাম, অথবা এমন সাতটা শব্দ যাতে এ উন্মত্ত, অস্থির পৃথিবীতে কিঞ্চিৎ শান্তি নামে। আমি অপেক্ষায় রইলাম।