Skip to main content

সেই কবে থেকে মাইকে মাইকে মেয়েটা দিন-রাত চিল্লিয়েই যাচ্ছে, চিল্লিয়েই যাচ্ছে, "আর কত রাত একা থাকব..."। ভাগ্নীকে নিয়ে ঘুরছি প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে, পুজোর মরশুম, মেয়েটা চিল্লিয়েই যাচ্ছে, "আর কত রাত একা থাকব"...
       মামু বলল, কেন বলছে?
       আমি বললাম, ওর বাড়িতে মেলা ভূতের উপদ্রব তো... তাই।
       সে ভূত কি ভূত তা আর বালিকাকে কি করে বোঝাই। মামুর সন্তানও হয় তো এই মহিলার খেদ শুনে শুনে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ঠাকুর দেখে বেড়াবে, কারণ, মনে হচ্ছে না এই মহিলার কেউ জুটবে বলে, অ্যাদ্দিনেও যখন জোটেনি, তখন সে আশাই বৃথা।
       আগে মনে হত এ গান সমব্যথী বুঝি। এখন আর মনে হয় না, মনে হয় দিই কানের গোড়ায় ঠাঁটিয়ে চড় একটা। বলি হ্যাঁ রে, এদ্দিনেও একা থাকার অভ্যাস হলনি! যদি না হয়ে থাকে তবে এই আধুনিকোত্তর যুগে, অমন গলা খাঁকিয়ে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে না গেয়ে একটা কিছু ব্যবস্থা তো করে নিলেই হয় বাপু। বিয়েই যে করতে হবে এমন কোনো বিধান তো বাপু তোর কোনো সিরিয়ালে দেখায়নি। তো কোন সিরিয়াল অশুদ্ধ হবে তাতে? আর যদি ওসবে রুচি না থাকে তবে মা হাওড়া স্টেশানে গিয়ে একটা সিট দেখে বসে থাক, নইলে একটা বেশ রংবেরঙের প্লাস্টিক বিছিয়ে চিত্তির খেয়ে পড়ে থাক আর দেখ রাত কি করে কাটে স্টেশানে - অপেক্ষায়, উপেক্ষায়।
       তাও যদি না ইচ্ছায় তবে যে কোনো সরকারি হাস্পাতালের বাইরের চত্ত্বরে একটা চরকি দিয়ে আয়, দেখ মানু্ষের রাত কেমন কাটে উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায়। সকালে খাট-মালা জোগাড় করতে যাবে না হরলিক্স-ওষুধ কিনতে যাবে, সে জানে না। একা রাত জাগছে যম আর ঈশ্বরের মাঝে যাঁতাকলে পড়ে। বুদ্ধি বলে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। হৃদয় বলে "যেতে নাহি দিব"... হায় রে "বুদ্ধিহীন মানবহৃদয়"। আর যে বেডে শুয়ে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে, যন্ত্রণা আর স্বস্তির মধ্যে রফা কিছুতেই হচ্ছে না, তার কথা আর কি বলি।
       তস্করকূল অবশ্য এখন শুধু রাতেই জাগে না। দিনমানেও কারোর অর্থভাণ্ডারের ভার লাঘব করার প্রযুক্তি তাদের হাতে, সবাই টেক স্যাভি এখন। কিন্তু তবু সংস্কারি তস্করকূলও কি নেই? আছে। তাদের সাথেও তো বেরোতে পারিস মা আমার, না হয় হাতের কাজ শিখলি।
       নাইটক্লাব ইত্যাদির কথা না হয় বাদ দিলাম, সেই সব বুড়ো মানুষগুলোর কথা ভাব দিকিনি, যারা ছেলেমেয়ের ফোনের আশায় দু'চোখের পাতা এক করতে পারে না। যদি তারা এ দেশেরই অন্যত্র থাকল তো একরকম। কিন্তু যদি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বাসা বেঁধে থাকে তবে তো আরো জ্বালা। এক, অকাজের কথাবলার অর্থমূল্য, দুই, সময়ের বিড়ম্বনা। সে যখন শুতে যায়, এ তখন কাজে বেরোয়, তো মানুষ যায় কোথা! আবার যদি সময়-অর্থের যোগান হল তো মনের দূরত্ব হয় তো কয়েক আলোকবর্ষ। তখন দুই চোখের পাতার মধ্যে এত অভিমান জমে যে ঘুমের সাথে রাতের দেখাই হয় না। তা হ্যাঁ রে, ভেবেছিস তাদের কথা? না কি খালি ওই...
       আগে তো 'নিশাচর' এক অর্থ ছিল। এখন আইটি সেক্টরও আছে। অগো দেশের কাজের ভার আমরা সামাল দিচ্ছি। ওরা ঘুমাতে গেলে আমাদের কাজ নেই। ওরা ছুটিতে গেলে আমাদের হাত-পা মেলে আলিস্যি করার সময়। দেশের মাটিতে বিদেশী সময় --- সেও এক রাত জাগার খেলা হে বাপু। এমন অভ্যাস যে কর্মহীন রাত অকারণেই নিদ্রাহীন। বলি রতি-কফি-বিড়ি-মদেরও তো একটা সীমা আছে। নেই শুধু আমাদের ভাগ্যের কাঁটার দাসত্বের ঊর্দ্ধগমন। শুধু এক পিচাইতে কি আর মুখরক্ষা হয় রে চাঁদ আমার!
       এই যে এত প্যাঁচাল পাড়লাম শুধু তোকে থামাতে রে মা। হয় তুই তোর রাতে একা কি দোকা কি দলেবলে থাকার ব্যবস্থা কর, নয় ঘুমের অ্যালজোলামাস্থ হ, নয় ব্রহ্মচর্চা কর। শুধু প্যাণ্ডেল, পিকনিক, শীতাকালীন উৎসবগুলোকে রেহাই দে। আমারও কানটা জুড়াক।
       তবে কি জানিস, আজকাল রাতে একা না থাকাই ভালো। মেয়ে তো। কিছু পুরুষেরা এক নতুন আবিষ্কারের খেলায় মেতেছে। যোনিতে কি কি ঢোকে লিঙ্গ ছাড়া, সেই সব দেখার। যোনি এখন পরীক্ষাগার। অনেকে আবার পরীক্ষাগার পুড়িয়েও ফেলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। তাই বলি কি, একা থাকিস না। কাউকে জোগাড় কর, আর গানটা থামা।