"প্রভু, আজি তোমার দক্ষিণ হাত রেখো না ঢাকি।
এসেছি তোমারে, হে নাথ, পরাতে রাখী॥
যদি বাঁধি তোমার হাতে পড়ব বাঁধা সবার সাথে,
যেখানে যে আছে কেহই রবে না বাকি॥"
গোঁসাই, এ গান শুনেছ?
শুনেছি।
আমায় বোঝাও….
গোঁসাই হাসল। বলল, এ গান যে বোঝায় সে বাইরে কই? সে তো ভিতরে।
আমার ভিতর যে শূন্য..
সেই শূন্যকে জানে কে?
জানি না
গোঁসাই উঠে গেল গঙ্গার দিকে। বলল, ভাসবে বা ডুববে ঠিক করো..
সকালের হাওয়াটা বেশ ঠাণ্ডা। গতকাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। হেঁটে হেঁটে যখন আসছিলাম তখনই বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছিল।
আশ্রমের মাটি ভিজে। গোঁসাই জলে ডুব দিল।
ডুব দেব না ভাসব? একি প্রশ্ন করো গোঁসাই। ডুব দেব বললেই কি ডুব দেওয়া যায়? বরং ভেসে থাকা সোজা। কিন্তু ভাসব বললেই যে ভাসা যায় না। সাঁতরে এদিক, ওদিক যাওয়ার লোভ। এটা ওটা কুড়িয়ে পাড়ে নিয়ে যাওয়ার লোভ। মন ঝড়ের মত চঞ্চল।
গোঁসাইয়ের স্নান হল। ভিজে ধুতি নিংড়াতে নিংড়াতে বলল, কি কাচো গো, মন? যতই কাচো ততই রঙ?
মনের কি রঙ হয়?
গোঁসাই বলল, হয়। রঙ নিয়েই তো মন। রঙ গেলে মন যায়। ঠাকুর বলত না, যে রঙে ছুপাবে সেই রঙ ধরবে…. যে সঙ্গে মনকে রাখবে সেই রঙ ধরবে... মন ধোপাঘরের কাপড়..
আমার কি রঙ?…
হাজার রঙ….
সে ভালো না মন্দ?
তুমি যেমনভাবে দেখো…. হাজার রঙে যদি তোমার সুখ…. তবে সুখ…. যদি জ্বালা… তবে জ্বালা….
আমার কখনও জ্বালা…. কখনও সুখ…. কখনও বিষাদ…..
এ সবই রঙ…. কাঁচা না পাকা? খোঁজ রাখো….
পাকা গোঁসাই... সব রঙই পাকা…..
গোঁসাই ফুল তুলছে। গান গাইছে। গোঁসাই ডুবব না ভাসব?
গোঁসাই হাসল। যদি টান জন্মায় তবে ডুববে। যদি বেগ জন্মায় তবে ভাসবে।
টান আর বেগের মধ্যে টাল সামলাই কি করে?
গোঁসাই বলল, তাই তো রাখী বাঁধার কথা বলল সে রবি গোঁসাই….
তাতে কি হয়?
যে বাঁধে আর যাকে বাঁধে - কেউ আর একে অন্যকে ভোলে না….. সে বাঁধনে জন্মায় বোধ.... বোধের আনন্দ....
তাই হয়? তোমার হাতে বাঁধি তবে রাখী গোঁসাই?
গোঁসাই বলল, বেঁধেছোই তো…. প্রাণে…. সে বাঁধনকে খোঁজাই তো সাধন গো….