Skip to main content
 
 
      অষ্টমীর দুপুর। পুজোর প্যাণ্ডেল ফাঁকা। চারদিকে মাইকের আওয়াজ। দুর্গা প্রতিমা মালায় মালায় ঢাকা। অবিন্যস্ত ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারদিক। সিঁদুর, আলতা এখানে সেখানে গড়াচ্ছে। নর্দমার উপর প্যাণ্ডেল। রাস্তার এক ধারে। হাওড়ার অনামী গলি একটা।
      বৃদ্ধা লাঠি ভর দিয়ে দিয়ে প্যাণ্ডেলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। পুরু চশমার কাঁচ। মুখ তুলে ভুরু কুঁচকে প্রতিমার দিকে তাকালেন। দুর্গা সোজা সামনে তাকিয়ে। সামনে একটা চারতলা ঘিয়ে রঙের ফ্ল্যাট। বৃদ্ধা লাঠি ঠুকে ঠুকে প্যাণ্ডেলের পাটাতনের আরো কাছে এসে দাঁড়ালেন। কিছু খুঁজছেন। তাকাতে তাকাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট পেলেন - বলরাম সুটস। লাঠিটা দিয়ে মিষ্টির প্যাকেটটা কয়েকবার খুঁচিয়ে টেনে আনলেন। কয়েকটা কালো বড় পিঁপড়ে বেরিয়ে ছড়িয়ে গেল ইতস্তত। প্যাকেটের মধ্যে একটা মিষ্টি - সন্দেশ। বৃদ্ধা মিষ্টিটা হাতে নিয়ে প্যাকেটটা মাথা নীচু করে ড্রেনে ফেলে, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন কেউ আসছে কিনা। চেয়ারে বসলেন। চোখ বন্ধ করে মিষ্টিটা চুষতে চুষতে লাঠিটাকে বাঁ হাতে দোলাতে লাগলেন।
      দুর্গা তাকিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে। যে জানলাটা বন্ধ সেই বাড়ির ভিতরে তখন অষ্টমীর জলসা চলছে। এসির জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পাইপ ফেটে নীচে নামছে। বৃদ্ধার মিষ্টি শেষ হল। লাঠিটা দুটো হাঁটুর মধ্যে আটকে অপেক্ষা করছেন, কেউ এলে গল্প করবেন। পুজোর গল্প। কেউ এলো না অনেকক্ষণ। বৃদ্ধা উঠলেন। পাটাতন থেকে একটা ফুল নিয়ে মাথায় ঠেকালেন। আঁচলে বাঁধলেন। ধীরে ধীরে গলির মধ্যে মিলিয়ে গেলেন।
      পাটাতনে আবার পিঁপড়ের সার, মিষ্টি খুঁজছে। সামনের ফ্ল্যাটের থেকে হুল্লোড়ের আওয়াজ। চতুর্দিক থেকে বাংলা হিন্দি ভোজপুরী উড়িয়া গান ভেসে আসছে। দুর্গা তাকিয়ে। ঘিয়ে রঙের ফ্ল্যাটের দেওয়ালে চোখ আটকে। বিসর্জনের অপেক্ষা?