- আপনার কি করতে সবচেয়ে ভালো লাগে?
- কাজ থেকে ফিরে, কুকুরদের হাতে করে বিস্কুট খাওয়াতে। আপনার?
- আমার সব বাসন মাজা হয়ে গেলে, গঙ্গার ধারে বসে বিড়ি টানতে। আগুনটা জ্বলে ওঠে, আমার বুকটাও।
- কিতকিত খেলবেন?
দু'জন প্রৌঢ় মানুষ। ডানদিকে তারা আর আধখানা চাঁদের আলোয় ভাসা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রেখে ম্যালঘেরা রাস্তাটায় ছক কাটল।
প্রথমে যে কুকুরকে খেতে দেয়, রিকশাটা বারান্দায় রেখে, সে।
- দম আছে আপনার! হোটেলে বাসনমাজা মানুষটা বলল।
এরপর যে হোটেলে বাসন মাজে সে।
- আপনারও দম আছে। আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি। প্রত্যেক বছর পুজোতে আসেন?
- হ্যাঁ… আসি… আপনি?
- আসি…
- কাঞ্চনজঙ্ঘার টানে?
- না না, পুজোর ভিড় ভালো লাগে না।
- আমারও না। সমুদ্রে যান না কেন? পুরী বা দীঘা?
- বড্ড চেনা লোক ওদিকে…. এদিকে কম…
- আমারও তাই…. ভালো লাগে… এই হারানো হারানো খেলতে….
- আমারও….
=======
- দিদি ঘরে আছেন?
- আসুন দিদি।
- বাহ, শাড়িটা তো বেশ। অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন?
- ধুস, কদ্দিন যাই না। আসুন… লুডোটা পাড়ুন… আনুন। চা খাবেন?..........
- আজ ভালো দান পড়ছে দিদি….
- আপনারও তো… চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে… খান….
- দিদি আপনাদের চাঁদা কত নেয়?
- পাঁচশো…
- আমাদেরও….. একটা কথা বলব?
- কি?
- এই দেখেন….
- আরে এ তো মোবাইল…..
- হ্যাঁ, এতে ঠাকুর দেখা যায়…. দেখবেন? নাতি শিখিয়েছে…. তিনশো টাকা নিয়ে আমায় দু'ঘন্টার জন্য দিয়েছে…. ভাবলাম আপনি যদি দেখেন…
- চালান চালান…. দাঁড়ান আরেক কাপ করে চা আনি…..
=======
- এই চলো…
- এটাই শেষ…. দাদা আর চিনি ছাড়া হবে না কিন্তু…. কলকাতায় যাব…. শ্রীভূমি….
- এত রাতে?
- হ্যাঁ… বুড়োবুড়ি মিলে সারারাত দেখব….. চিনি দেওয়া চা হলে হবে… তাও আর চাপাব না….
- চলো…. চলো…. আমি রেডি হচ্ছি তুমি এসো…. আজ ভাতই করলাম…. রুটি ইচ্ছা করছে না…..
রাতের স্টেশান।
- শ্রীভূমি কোনদিকে গো?
- কলকাতায়।
- কিন্তু আমরা তো কলকাতায় যাচ্ছি না।
- না। আমরা যাচ্ছি তো আমাদের চেনা চরে। নৌকা বলা আছে। এসো।
চরের মধ্যে বসে দু'জন। দূরে দুই পাড়ের থেকে আলোর ঝলকানি আসছে। মণ্ডপের আলো।
দু'জন মানুষ চরে বসে। গঙ্গার মাঝে চর। পাশাপাশি বসে দু'জন। নৌকাটা তীরে বাঁধা।
স্বামী বলল, আমাকে চিনতে পারবে পরের জন্মে?
স্ত্রী বলল, পারব। এত হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এ জন্মে যখন চিনলাম, আশ্চে জন্মেও চিনে নেব।
স্বামী বলল, তুমি মা দুর্গার সঙ্গে দেখা হলে কি চাইবে?
স্ত্রী বলল, এই চর, আর তোমাকে। তুমি কি চাইবে?
এই চর, তোমাকে, আর আমাকে। আমি যেন অন্য কেউ হয়ে না যাই।
(ছবি - Debasish Bose)