Skip to main content
 
 
 
দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের পূজারীরা এখন থেকে PPE কিট পরে পূজা নেবেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
       বিখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য (TOI, 26th July, page 4, তে ছাপিয়েছে তাই অনুযায়ী), এ কাজটা আজ যদি রামকৃষ্ণদেব সশরীরে থাকতেন তবে মেনে নিতেন না। অন্যভাবে ভাবতেন। কেন পূজারীরা অত ভয়ে ভয়ে থাকবে? কেন তারা ওরকম অদ্ভুত পোশাকে থাকবে? এতে তো ভক্তরা পূজা দিতে এসে ভয় পেয়ে যাবে। তাদের মনে হবে এরা তো অন্যগ্রহের মানুষ!
       আমি হতবাক হলাম সঞ্জীববাবুর মত একজন বরিষ্ঠ লেখকের কাছ থেকে এই অদ্ভুত বক্তব্য শুনে। মশায়, ভক্তরা পিপিই কিট পরিহিত পুরোহিত দেখলে অন্য গ্রহের মানুষ ভাববে কিনা জানি না, কিন্তু আপনার এ হেন বক্তব্য শুনে আপনাকে অন্য গ্রহের ভাবা বিচিত্র কিছু নয়।
       ধর্ম নিশ্চয় মানুষকে অন্ধ করে যখন সে চারিত্রিক উন্নতির, নৈতিক উন্নতির দিকের সাধনা ছেড়ে দিয়ে বিজ্ঞান, সমাজ ইত্যাদিতে নাক গলাতে যায়। তখনই তা হাস্যকর হয়ে ওঠে। রামকৃষ্ণদেব যখন বলেন, সত্য কথাই কলির তপস্যা, অহংকারে চৈতন্য হয় না, তখন অবশ্যই তার মূল্য আছে নৈতিক জীবনে। সত্যের প্রতি অনুরাগ ওনার জীবনের প্রতিছত্রে, তা শিক্ষণীয়। কিন্তু সেই রামকৃষ্ণদেব যখন কটা চোখ, হাত ভারী, বামুন-কায়েত ইত্যাদি মতে মানুষের শ্রেণী বিন্যাসের কথা বলেন, চারিত্রিক গুণের বিচার করেন, তখন তা কালের নিয়মে সত্যে অপ্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। মানুষের বৈচিত্রের প্রকার ব্লাড গ্রুপ, জেনেটিক্স, পার্সোনালিটির ধারা, ইত্যাদি নানা বৈজ্ঞানিক উপায়ে হতে পারে তা পরীক্ষিত সত্য, কিন্তু ওইসব বললে তা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।
       সঞ্জীববাবু প্রভাবশালী লেখক, রামকৃষ্ণভক্ত মণ্ডলীতেও যথেষ্ট প্রভাব আছে দেখেছি। সে থাকাই স্বাভাবিক, যেহেতু দীর্ঘকাল নানা বই লিখেছেন, ভাষণ দিয়েছেন এই বিষয়ে। তাই একটু খটকাই লাগল। মন্দিরের উপর বজ্রনিবারক লাগাতে দেখেছি বহু জায়গায়, অর্থাৎ দৈবের থেকে বিজ্ঞানের ওপর ভরসা অবশ্যই মানুষের বেশি সে বলা বাহুল্য। দেহ মন্দিরের রক্ষার জন্য এটুকু করতে আপত্তি কি হতে পারে? আবার এও তো আছে, কোনো এক জায়গায় উষ্ণপ্রস্রবণের ব্যাখ্যায় একজন ভক্ত রামকৃষ্ণদেবকে বোঝাচ্ছেন যে মা দূর্গা না সীতাদেবী নাকি ওখানে রেঁধেছিলেন ইত্যাদি। ওনার মনের মত উত্তর হল না, উনি মাষ্টারমশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা কি? মাষ্টার বোঝালেন, তিনি খুশী হলেন। আবার জোয়ারভাটা কেন হয় সে কথাও তো বুঝতে চাইছেন মাষ্টারমশায়ের কাছ থেকে এ কথাও তো আছে। তবে উনি কি সত্যিই আপত্তি করতেন?
       হিউম বলছেন যে, ধর্মীয় উত্তুঙ্গ আবেগ যখন পদে পদে বিস্মিত হতে চাওয়ার তৃষ্ণার সাথে যোগ হয় তখনই সাধারণ বোধবুদ্ধি লোপের আশঙ্কা হয়। জন লক বলছেন, অজ্ঞতার যুক্তি। এই কি সেই উদাহরণ তবে? জানি না। তবে এই যদি এমন শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী মানুষের অন্তিম বয়সের বিচার হয়, তবে তা ভাবার বিষয়।