Skip to main content
 
 
একজন গঞ্জিকা সেবন করেন। আবার গঞ্জিকা সেবনের বিপরীতে কিছু বলা হলে সেই নিয়েই সায় দিয়ে মাথা নাড়েন। তো আমার প্রশ্ন হল, ইনি কি জ্ঞানপাপী না মুক্তমনা?
       এ কথা বলছি কেন? কারণ এই সামাজিক মাধ্যমে এমন সুচতুর কৌশলী মুক্তমনাদের ছড়াছড়ি দেখছি। তাদের কথা হচ্ছে, এ দোষের বটে, আমি এ করেও থাকি, যদিও জানি এ দোষের বটে। তবে এইটুকু তো মানবা যে আমি উদার? আমি সৎ?
       তা মানি বটে। তবে রকমসকম দেখে চক্ষু চড়কগাছ না হয়েও যায় না। এ কিরকম সততা বুঝিও না। একটা গপ্পো শুনতাম, "বাবুর এমন দয়ার শরীর যে মারতি মারতি জুতাখান ছিঁইড়া ফ্যালাইল আমার পিঠে, কিন্তু দামটুক নিল না"।
       এ যে যদি দয়ার উদাহরণ হয় তবে সেও উদারতার উদাহরণ, সততার উদাহরণ বলাই যায়। যা উচিৎ বলে বোধ করি না, সে কাজটা করেও তাকে দোষার কি মানে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তবে ভালোই লাগে দেখে, কারণ এরাই যখন আবার নানা নীতিটিতি নিয়ে কিছু বলে ফেলেন তখন মনে রাখতে হয় এদের সততা ও উদারতা এ হেন প্রবল যে নিজের আলোচ্য নীতির বিপরীত আচরণকেও নানা উদারতা সততার যুক্তিতে সমর্থন করতে এরা পিছপা হবেন না।
       লোভ বড় উপাদেয় জিনিস। অর্থের লোভের চাইতে খ্যাতি ও মানের লোভ আরো প্রবল, এও বড় দারুণ সত্য। তাই লোভকে যদি বাধ্যতা বলে ধরে নিই তবে খুব একটা যুক্তির অবকাশ থাকে না। তখন সোজা কথা, হ্যাঁ আমার লোভ আছে, তবে এও জানি সে লোভ আমার সব্বনাশ করতে পারে। তবু আমি ছাড়িতে অপারগ। এ সব যুক্তির কথা নয়, চালাকির কথা। আর চালাক মানুষ মানেই গিরগিটি।
       লোভী মানুষ অবশ্যই দুর্বল হয়। তাই তাদের ক্ষণে ক্ষণেই লোভের হাত থেকে বাঁচতে নানা বাইরের উদ্দীপনার দরকার হয়, বেশিক্ষণের জন্য না অবশ্য, যতক্ষণ লাইমলাইটের মাথার কাছাকাছি থাকে ততক্ষণই শুধু। যেমন সদ্য গঞ্জিকা সেবনের ক্ষতির দিক নিয়ে একটা লেখায় অনেক গঞ্জিকাসেবী উপলব্ধি করলেন গঞ্জিকাসেবন অতি হেয় বস্তু একটা, অনেকে আবার মনে জোরও পেলেন তা পড়ে, সে কথা বললেনও খুব সানন্দে, অমনি তার বেষ্টিতবর্গ বলল, আহা কি উদারতা, কি উচ্চচেতনা, কি স্বচ্ছ নির্লোভ ভাব!
       সবই তো বুঝলুম, শুধু এই কথাটাই বুঝলাম না, ওহে গঞ্জিকাদ্বেষী বক্তিমাকারী ও গঞ্জিকাসেবী আচরণকারী - এই দ্বিচারিতায় কাকে ঠকাচ্ছেন আপনারা? বলি উন্মুক্ত মন, নির্লোভ বলিষ্ঠ চিত্ত কি আর লোভের বস্তা খাটের তলায় লুকিয়ে রেখে মেলে? "অবশেষে সত্যেরই জয় হয়" - এই নীতিতেই সত্যানুরাগী তার লোভকে বলে বাবা এখনই না, এত তাড়া কিসের? এখনই দুহাত পেতে ছোটাছুটি কেন? এখনই নিজের অস্তিত্বকে অমন ঢ্যাঁড়া পিটে লোকের কান মাথা ঝালাপালা করা কেন রে বাপু? বলি সব সৃষ্টির সাথে সৃষ্টিকর্তারাও যদি ভিক্ষার ঝুলি সাথে করে ফেরেন তো কেমন হয়? সেই দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রা করলে আজকাল কেমন একটা ফর্ম লিখে দিতে হয় না আপনার কেমন লেগেছে পরিষেবা জানানোর জন্য, এও তেমন। যেমন ধরেন, আপনি ভীমনাগের সন্দেশ খাচ্ছেন, ভীমনাগ আপনার নাকের ডগায় আপনার হাততালি পেতে বসে, আপনি কেসি পালের ছাতা ব্যবহার করছেন, কেসি পাল আপনার পিছনে পিছনে হেঁটে চলেছেন পিঠ চাপড়ানো নেওয়ার অভিলাষ নিয়ে। তো এইসব করাটা তাদের শোভা পায়? পায় না। কিন্তু তারা যদি বলেন এসব যদিও শোভা পায় না আমাদের, তবু করি, নইলে কি যেন একটা নেই নেই বলে মনে হয়, আপনি তখন কি বলবেন? আপনার নিজের সৃষ্টির উপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাটা নিতান্তই কম, তাই হাতের সৃষ্ট বস্তু থেকে হাতে চুমু দেওয়ার অবকাশ তৈরি করে দিয়েই সে খামতি পূরণ করতে চাইছেন। একি আপনাকে শোভা পায়?
       শোভা পায় কি না পায় জানি না বাপু, তবে হাটে বিকোতে গেলে এসব যে না করলেই নয় সে আমরা বিলক্ষণ জানি।
- কি বিকোবেন?
- আপন সৃষ্টি
- কিভাবে বিকোবেন?
- কেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে?
- তারপর? তারা সে সৃষ্টিতে নিমগ্ন হয়ে পাবে কাকে? আপনাকে? না নিজেকে? মানুষ সেই সৃষ্টির মধ্যেই আনন্দ পায় যার মধ্যে সে নিজেকে পায় - নিজের কৌতুহল, সুখ দুখ, নানা দার্শনিক জীবনজিজ্ঞাসা ইত্যাদি ইত্যাদি। তা সে সব পাবে না, আপনাকে পাবে?
- জানি না... তবে চাইব নিজেকে পেয়ে সে যেন আমাকেই খোঁজে, আমার জন্য অর্ঘ্য সাজিয়ে আনে, আমি অমরত্ব লাভ করি আমার সৃষ্টিতে।
- বুঝলাম, ডারউইনের নাম শুনেছেন? জানেন তো অবশেষে সবটাই প্রাকৃতিক বা পাব্লিক নির্বাচন। তারা আপনার উপস্থিতি, অস্তিত্ব সবটুকু আপনার জীবদ্দশাতেই শূন্য করে দিতে পারে, আবার আপনার উপস্থিতিকে আপনার মৃত্যুর পরেও প্রকট রাখতে পারে, এমন উদাহরণ তো চোখটা অহং এর পাঁচিল টপকালেই দেখা যায়, তাই না? তবে আর অকারণ প্রেশার বাড়াচ্ছেন কেন, কাজ হলে নিশ্চিন্তে নির্বাসন নিন, কাজটা বড় হতে দিন, কর্তাকে আড়ালে রেখে, ঈশ্বরের মত। জানেন তো ঈশ্বরের আরেক নাম 'কবি', সে নিজেকে সৃষ্টির আড়ালে রেখেছেন বলেই না, থোড়ি নিজেকে ফেরিওয়ালা বানিয়েছেন?