Skip to main content

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, 

        মাধ্যমিকের পর কি পড়ব আর উচ্চ-মাধ্যমিকের পর কি পড়ব এই নিয়ে একটা বড় সংশয়, বিভ্রান্তি হওয়া খুব স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের পর কি পড়ব তা অনেকটাই বাড়ির বড়রা ঠিক করে দেন, যেমন ভালো নাম্বার হলে সায়েন্স, মাঝারি নাম্বার হলে কমার্স আর খারাপ নাম্বার হলে আর্টস। এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তবে তার সংখ্যা খুবই কম। আর উচ্চ-মাধ্যমিকের পর বিষয়টা আরো জটিল। যেন পূজোয় কোথায় বেড়াতে যাবে তার প্ল্যান। এই প্রথাগুলো ভালো কি মন্দ, কোনটা উচিৎ কোনটা অনুচিত এই বিষয়ে আমি যাচ্ছি না। আমার কথা হচ্ছে কোনটা করা এই মুহূর্তে সম্ভব। আমার অভিজ্ঞতা, ভাবনা আর ভালোবাসার নিরিখে কিছু কথা বলার চেষ্টা করা যাক।


১) কেরিয়ার-সফলতা-চাকরি 
======================= 

        এই কথাগুলো আমাদের সবার কাছে সমার্থক। তাই সফল যা আমায় চাকরি দেবে আর যাতে চাকরি হবে সেই আমার কেরিয়ার। কিন্তু যত বড় হবে তত দেখবে যে আদতে কথাগুলো একই রকম নয়, তারা একই জায়গার। অর্থাৎ ভবিষ্যত আর জীবিকার সাথে যুক্ত। প্রথম কথাই হল, আমি কি হতে চাইছি, তা না, আমার কোন বিষয়টা পড়তে সহজ লাগছে। আসলে সেটাই সহজ লাগে যেটা আমি বুঝি। আর যেটাই আমি বুঝি তার ওপর আমাদের একটা ভালোবাসা জন্মায়। ভালোবাসা জন্মালে আর পরিশ্রমটা গায়ে লাগে না। সেই ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, একটু বিষয়গুলো নিয়ে আগে নাড়াচাড়া করে নেওয়া যেতে পারে। তার অনেক উপায় আছে, এক, বড়দের কাছে ওই সংক্রান্ত যদি কোনো বই থাকে, নয় নেট, নয় কলেজস্ট্রিট বা লাইব্রেরি। একটা প্রাথমিক পরিচয় করে নিতেই হবে। মনে রাখতে হবে যে আমায় কেউ কিন্তু বুঝিয়ে দিতে পারে না, বোঝায় সাহায্য করতে পারে মাত্র। এটা যত উপরে উঠবে তত স্পষ্ট হবে আরো। যেমন তুমি যদি সুর না বোঝো তোমায় সা-রে-গা-মা শেখানো যাবে না। কিন্তু তুমি যদি সুর বোঝো তবে তোমায় ইমন-ভূপালি-ভৈরব ইত্যাদি শেখানো যাবে।
        তাই "তুমি বড়ো হয়ে কি হতে চাও" এই প্রশ্নটার কোনো উত্তর খুঁজতে না যাওয়াই ভালো। কথা হচ্ছে আমার কোন রাস্তাটায় হাঁটতে সহজ বোধ হচ্ছে। তবে কি লাইফে চ্যালেঞ্জের কোনো মূল্য নেই? আছে, তোমার যদি অঙ্ক করাটা সহজ বলে বোধহয়, তবে একটা কঠিন অঙ্ক তোমায় উত্তেজিত করবে, ভীত করবে না। কারণ আমি যে অর্থে সহজ বলছি, তা বিষয়টা না, তা তোমার স্বভাবের সাথে ওই বিষয়টার মিলমিশ খাওয়ার কেমিস্ট্রিটা। যেমন আরেকটা উদাহরণ নেওয়া যাক, রবীন্দ্রনাথ লিখছে, "সৌরভে প্রাণ কাঁদিয়ে তোলে ভিজে বনের ফুল", অনেকের মনে হতে পারে, ফুলের গন্ধে কান্না পাবে কেন? এটা কিন্তু তাকে বোঝানো যাবে না। এটা যদি সে বোঝে তবে তাকে আরো কয়েকটা লাইন বলে তার সেই বোঝাটাকে আরো সমৃদ্ধ করা যেতে পারে বড়জোর। কিন্তু মূল কথাটা তোমার প্রাথমিক পজিটিভ ভাইভ বিষয়টার উপর।


২) ব্যর্থতা-বেকারত্ব-অসফলতা 
========================= 

        আবার সেই কিছু শব্দকে একত্রিত করে ভুল সমার্থক শব্দ বানানো। এই ক্ষেত্রেও মূল কথা একটাই - ব্যর্থতা। তুমি নানা কারণে অসফল হতে পারো, কিন্তু ব্যর্থতা মানে চূড়ান্তভাবে হেরে যাওয়া। সেটা তুমি না চাইলে কারোর সাধ্যি নেই তোমায় ব্যর্থ করে। সব চাইতে বড় ব্যর্থতা জেনো, নিজের জায়গাটা চেনার চেষ্টা না করে সেটা অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া। তুমি যদি সেই অন্যের নির্বাচিত রাস্তায় গিয়ে বাহ্যিক অর্থে সফলও হও, তবে তুমি জীবনে কি মিস করে গেলে তা কোনোদিন জানতেও পারলে না। সেটা হল আত্মবিশ্বাসের বাস্তবদিক - আত্ম-নির্ভরতার আনন্দ। তুমি সারাটা জীবন কোথাও একটা ভীতু থেকে যাবে। অন্যের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে চলা অভ্যাস হয়ে যাবে। হয় অন্যের সমালোচনা করে সারা জীবন কাটবে নইলে তেল দিয়ে। কখনওই নিজের উপর নির্ভর করে চলার আনন্দ পাবেই না। স্বাধীনতা মানেই বুঝবে না। এটা খুব বড় ধরণের ব্যর্থতা। 
        আমাদের মধ্যে একটা সত্তা থাকে যাকে আমরা বলি - intuition বা সজ্ঞা। মানে তোমার খুব ভিতর থেকে মনে হচ্ছে যেন এই রাস্তাটাতেই তুমি যেতে চাও, তোমার সেই ফিলিংসটা নিয়ে তুমি খুব নিশ্চিত। অথচ তুমি ভয়ে গেলে না, কারণ বাড়ির লোক, প্রতিবেশী, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষকেরা অন্যরকম বোঝাচ্ছে বা চাইছে। এই ভুলটা কোরো না। সময় বয়ে যাবে, তোমার ব্যর্থতার দায় তুমি ওদের ঘাড়ে চাপাবে, অবশেষে সারাটা জীবন নিজেকে মিথ্যা বলা অভ্যাস হয়ে যাবে। আর জেনো যে, কোনো মানুষ অসম্ভব ভালো তার্কিক হলেও, সে কিন্তু নিজের বিবেককে তর্কে কনভিন্স করতে পারে না, কারণ বিবেক যুক্তিতে চলে না, চলে সজ্ঞায়। বোঝার আগেই যে বোঝার ক্ষমতা থাকে সেই ক্ষমতায়। তাই কোনোভাবেই সেই অভ্যাসটা কখনও না। রিস্ক নাও। বাড়ির লোককে বোঝাও। আত্মবিশ্বাস রাখো, কিছু না কিছু একটা হবেই। পারবেই। 
        আর রইল বেকারত্বের কথা। একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখি, অলস-গোঁয়ার ছাড়া কেউ বেকার থাকে না। অবস্থা বুঝে কাজ খুঁজে ঠিক নেয় বুদ্ধিমান সচল মানুষ। বড় বড় মানুষদের জীবনী পড়ো দেখবে তারা এক সময় কি অসম্ভব কাজ না করেছেন! সে নামের লিস্ট দিতে গেলে আমার পোস্ট আরো আরো দীর্ঘ হয়ে যাবে। তোমরা নিজেরাও জানো অনেকের নাম। কাজ খুঁজে নিতে হবে। নিজের রুচি অনুযায়ী জীবিকা নাও মিলতে পারে, কিন্তু সেই আপাতকালের জন্য কাজটাই তোমার লক্ষ্যের দিকে তোমায় এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। একটা সফলতা আরেকটা সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। যাবেই যাবে।


৩) পরিস্থিতি-ভাগ্য-পরিবেশ
======================= 

        এর কোনোটাও তোমার হাতে নেই। কিন্তু এর সবকটার অস্তিত্ব আছে। এরা কখনও অনুকূল কখনও প্রতিকূল হয়ে যায়। তোমায় ভালো নাবিক হওয়া শিখতে হবে, বা ভালো ব্যাটসম্যান। নাবিক যেমন জানে না কাল সমুদ্র কি অবস্থায় থাকবে, কিম্বা ব্যাটসম্যান যেমন জানে না তার প্রতিপক্ষ কি ভাবে ফিল্ডার সাজাবে, কাকে দিয়ে কি প্যাটার্নের বল করবে, এও তেমন। তোমায় লড়তে হবে। বোকার মত গোঁ ধরে না, কিম্বা কান্নাকাটি করে বা ক্ষেপে গিয়েও না। ধৈর্য ধরে, মাথা ঠাণ্ডা রেখে। মাথা ঠাণ্ডা রাখলে একটা না একটা উপায় বেরোবেই। আর মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা নিজেই একটা উপায় - মনে রেখো। ট্রেনে টানেল পার হওয়ার মত। ঠিক পেরিয়ে যাবে। শুধু ধৈর্য ধরা। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে এইটাই সব চাইতে বড় কথা।


        আরেকটা কথা, কিছু মানুষের থেকে দূরে থাকার অভ্যাস রাখা। 
        ক) ভ্যাম্পায়ার - এরা তোমার সমস্ত উদ্যম, শক্তি শুষে নেবে নেগেটিভ থট দিয়ে। 

        খ) নাকি-কান্না - এরা নিজের রাস্তাটা ঠিক কৌশলে খুঁজে নেবে তোমায় বিভ্রান্ত করে।
      গ) সবজান্তা - এরা খুব জানে আসলে কোনো কিছুতেই কিছু হয় না। ব্যাকিং ছাড়া চাকরি হয় না, ঘুষ না দিলে কাজ হয় না, ভাগ্য সব সময়ই সবার খারাপই হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। 
        ঘ) ও হয়ে যাবে - এরা কিছুই করতে দেবে না তোমায়, সব বিষয়ে ক্যাজুয়াল থাকবে, এদিকে কিছু না হলে পাড়া মাত করবে।
        ভালো বই পড়ার অভ্যাস করো। নিজের রুচিকে ভালোবাসতে, সম্মান করতে শেখো। ভালো কাজে বিশ্বাস রেখো। আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা জেনো।