Skip to main content

প্রেসার কুকারে ভাত রাঁধার অনেকদিন ইচ্ছা ছিল। ফ্যানা ফ্যানা চটচটে ভাত।

তার বরের আজ ভাইফোঁটা নিতে যেতে হবে বোনের বাড়ি। গেল বছর বিয়ে হয়েছে বোনের। সেই ভোরে বেরিয়েছে। ফিরবে রাতে। আজই তো সেইদিন। প্রেসার কুকারে ভাত রাঁধার।

তার ভাই নেই। সাতকূলে কেউ নেই। তবু তার যেন অনেক বাঁধন। সে নিজেও জানে না কেন, তার বর তাকে উঠতে বললে ওঠে। বসতে বললে বসে। এইগুলা না করলে নিজেকে কেমন জংলী মনে হয়। একা একা মনে হয়। মেলায় ফাঁকা দোকানের দোকানদারদের দেখলে তার সব সময় মন খারাপ হয়। হাতে পয়সা থাকে নাকি সব সময় যে চাইলেই কিনবে? সে নিজে কখনও ফাঁকা দোকানের দোকানদার হতে চায় না। তার চাইতে দোকান বন্ধ করে মেলা ছেড়ে চলে যাবে সেও ভালো।

প্রেসার কুকারটা ধুয়ে, চাল ধুয়ে একটা বাটিতে রাখল। ঘুঁটে, কয়লাও আছে। গ্যাস শেষ। বর বলেছে এ মাসে গ্যাস কেনার টাকা নেই। কাজ ভালো হলে আবার গ্যাস কিনবে।

টিভিটা চালালো। মন বসল না। অন্যদিন বসে তো। বাড়ির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়ালো। ক্লাবের ছেলেরা এই সময় দেখে তাকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কখনো ভালো লাগে। কখনও ভালো লাগে না। আজ যেমন ভালোই লাগল না।

একটা ডিমসেদ্ধ, আলুসেদ্ধ আর ভাত। আর কি খাবে? প্রেসারের ভাত, সামনের বাড়ির বৌদি বলে। হার্টের জন্য ভালো। তাও দাদার দু’বার হার্ট অ্যাটাক হল। ভালো কুকার নেই হয় তো।

উনুন ধরাতে হবে। স্নানটা সেরে এলেও তো হয়। নাকি রান্নাটা আগে করে তারপর যাবে?

এই সুজাতা… এই… এদিকে…

সামনের বাড়ির বৌদি ডাকছে।

হ্যাঁ দিদি…

এই খোকন ফোঁটা নিতে জিরাট গেছে?

হ্যাঁ দিদি।

তুমি একা?

হ্যাঁ গো।

তবে আর একা একা রান্না করতে হবে না…. আজ এখানেই খেয়ে নিবি বুঝলি… ভাই তো আসবে না.. ওরা দীঘা গেছে… জানে সবটা জানিস…. সব জানে… তবু….

সুজাতা দেখছে হাসি বৌদির চোখের কোণা টলটলে পুকুরের মত ভরে উঠল। সেই পুকুরে হাঁসের মত ভাসছে তার ভাই। টুপ করে ডুবে গেল। আজ হাসি বৌদির সঙ্গে খাবে? বৌদিকে ভাবে বৌদি, ডাকে দিদি… কেন? জানে না।

সুজাতা মাথা নেড়ে ঘরে এলো। কান্না পাচ্ছে। কিন্তু ফাঁকা দোকানে দোকানদার সে হবে না। কিছুতেই হবে না। কেউ ডাকলে সে না কি করে মুখের উপর?

সুজাতা আবার প্রেসার কুকারটা তুলে রাখল। ভেজা চালগুলো শুকিয়ে যাবে। ও নিয়ে ভাবনা নেই। খাটে শুয়ে পড়ল চিৎ হয়ে। ক্লাবের ছেলেগুলোর কেউ যদি ঘরে আসে। যদি বলে সুজাতা এসো আদর আদর খেলি। খেলবে?

কি জানি। খেলতেও পারে। একা হতে ইচ্ছা করে না। কিছুতেই না। আবার না-ও খেলতে পারে। নষ্ট দোকানদারও হতে চায় না। ঠিক দামে ঠিক জিনিস দেওয়াটাই তো ধর্ম।

হাসিদির বর গ্যাস সারায়। সেও বাড়ি নেই। ফোঁটা নিতে গেছে। দেগঙ্গা।

হাসিদি রেঁধেছে প্রেসারের ভাত। মাছ। দই। মিষ্টি।

হাসিদি বলল, মা বলতেন ভাই না এলে দেওয়ালেও ফোঁটা দেওয়া যায়।

সুজাতা দেখল সারা দেওয়া জুড়ে যেন শুধু ফোঁটার দাগ। চোখে স্পষ্ট দাগ যদিও একটাই।

সুজাতা চুপ করে থাকল। সেই ফ্যানফ্যান চটচটে ভাত। সেও তো বানাতে পারত।

হাসিদি অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছে। গিলছেই বলা চলে। খালি খালি চোখের জল মুছছে। এরকম ভালোবাসা মানে কি সে বুঝতে পারে না। সে চারদিক শুধু মেলা আর দোকান দেখে। কারোর দোকানে ভিড়। কারোর দোকান ফাঁকা। ভালোবাসা মানে কি সুজাতা? এই একটু জমেছিল আজ সকালে, হতে পারত, তার হাতে ফ্যান চটচটে প্রেসারের ভাত। তার ভালোবাসা। হয় কই?

সে হঠাৎ বলল, আমি তো প্রেসারে ভাত করেই ফেলেছিলাম দিদি..  তুমি সিটির আওয়াজ শুনতে পাওনি?

হাসি হেসে বলল, না তো রে… এ বাবা আগে বলবি তো…

সুজাতা হেসে বলল, ও কিছু নয় দিদি… ওবেলা রাঁধতে হবে না ভালোই হল….

হাসি আবার অন্যমনস্ক হল। সুজাতা মাথা নীচু করে ভাতটা গিলে নিল। প্রেসার কুকারটাও যেন গিলে নিল। সব গিলে নিতে পারে সে। এমনকি গু-ও।