Skip to main content
 
মানুষ বলল, শান্তি কিসে প্রভু?
 
ঈশ্বর মাঠে বসে একটা কমলালেবু রঙ করছিলেন। মানুষটার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওই ঘাসের মধ্যে চোখ ডুবিয়ে খোঁজো, একটা চাবি পাবে। চাবিটা বুকের কাছে এনে পুব থেকে পশ্চিমের দিকে ঘোরাবে। বুকের মধ্যে সুড়ঙ্গ পাবে। নেমে যাবে তরতর করে। দেখবে গর্ভগৃহে পৌঁছাবে। সরু পথ মাথা নীচু করে যাবে। সেই গর্ভগৃহে একটা প্রদীপ জ্বলছে দেখবে। তার সামনে একটা সাজি রাখা। তুমি নানা রঙের ফুলে সাজি ভরাবে। দেখবে সে শিখার রঙ নানা রঙের হয়ে যাচ্ছে। তোমার সাজির সাতটা রঙ যেদিন পূর্ণ হবে, দেখবে শিখার রঙও সাতটা। সেই মূহুর্তে গর্ভগৃহে অনাহত শব্দ শুনবে, যার সুর সাত সুরে। সেদিন শান্তি পাবে।

মানুষ বলল, কোনো মন্ত্র?

ঈশ্বর একটা অপরাজিতা ফুল আকাশে মাখিয়ে বললেন, "ভালোবাসাকে ধর্ম করো।"

মানুষটা ঘাসের মধ্যে চাবি পেল। ঈশ্বরের কাছে বিদায় নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করল। ঈশ্বর তখন মাঠে লাঙল দিচ্ছেন।

পথে রঙবেরঙের সাজে শয়তান এসে দাঁড়াল। বলল, কি করবে চাবি নিয়ে?

মানুষ বলল, শান্তি পাব।

শয়তান বলল, সে তো মরে গেলে পাবেই। বালাই ষাট! মরবে কেন? ওই মুখ্যুটা তোমায় বুকের মধ্যে সাজি, প্রদীপ, সুরের গল্প শুনিয়েছে তো?

মানুষটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল, হ্যাঁ তো!

শয়তান হো হো করে হেসে উঠল। তারপর বলল, ধুর, ওসব মিছে কথা। আমার সাথে এসো। এই বলে সে মানুষটার হাত ধরে একটা টিলার উপর নিয়ে গিয়ে বলল, নীচে দেখো, কত রকমের মানুষ, সব কি এক? না। তুমি যদি রাজত্ব করতে চাও, এদের নানা বেড়ায় বাঁধো। আমি উপায় শেখাব। দুর্বল হবে কেন? বীর হও। রাজা হও। ভোগ করো!

মানুষটা বলল, বেশ, আমায় কি করতে হবে? শয়তান বলল, তুমি এই চাবিটাই উল্টো ঘোরাবে, পশ্চিম থেকে পুবে।

মানুষ বলল, আর মন্ত্র?

শয়তান বলল, "মুখ্যুটা কি শিখিয়েছে?"

মানুষ বলল, "ভালোবাসাকে ধর্ম করো"।

শয়তান হেসে বলল, "ধর্মকে ভালোবাসা করো", এই হবে মন্ত্র।

মানুষটা ফিরে এলো। চাবি ঘোরালো উল্টো। সবাইকে বলল, এই নাও তালা, এই নাও মন্ত্র, এই আমাদের ব্রত।

নানা রঙের তালা বানানো হল। অন্তরের গর্ভগৃহ যত শূন্য হল, বাইরে তত নানা রত্ন, সোনাদানা খচিত গর্ভগৃহ তৈরি হল। সবার সাজি ভাগ করা হল, রঙ ভাগ করা হল, সুর ভাগ করা হল। বলা হল অনুগত হও। সবাই বলল, কার? মানুষটা বলল, তালার।

দিন যায়। মানুষটা মৃত্যুশয্যায়। শয়তান তার মাথার কাছে বসে। মানুষটা বলল, তুমি যাও! তুমি ঠগ...
শয়তান হেসে বলল, এই আমার চিরকালের স্তবগান। তোমার মত হাজার হাজার তালা ব্যবসায়ী আজ আমার পুঁজি।

কেউ হাসল অলক্ষ্যে। সে অদৃশ্য স্বর বলল, মূর্খ, যেদিন দেবতার অসহ্য হয় দেবালয়, সেদিন পথ জাগে। যুগে যুগে পথের দিশা মানুষ পথেই পেয়েছে। তালা ভাঙতে যে যায় সে মূর্খ। তালাকে যে চিরটাকাল বন্ধ রাখতে চায় সে উন্মাদ। তালা যে খোলে সে আলোর কাণ্ডারী। তোমার বন্ধ তালায় জং ধরেছে শয়তান, তুমি দেখেও দেখোনি। তারা আসছে। তুমি প্রস্তুত হও।